
জেলার বালিয়াডাঙ্গীতে গত দুই বছর যাবত প্রতি শুক্রবার ১৫০-২০০ জন নিম্ন আয়ের মানুষকে বিনামূল্যে একবেলা মাংস, মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়
নিরন্ন মানুষের পাশে
হারুন অর রশিদ, বয়স মাত্র ৪৯ বছর, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক ও ব্যবসায়ী হলেও পাশাপাশি সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিককর্মী হিসেবে ইতোপূর্বে পরিচিত থাকলেও গত দুই বছরে তিনি একজন মানবিক ব্যক্তি হিসেবে ব্যাপক পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গত দুই বছর যাবত প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শহরের বাজারের কাছে নিজের বাসার পাশে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিডিও স্যানিটেশন ফার্মের মাঠে নিরন্ন মানুষদের বিনামূল্যে একবেলা খাবার খাওয়ানোর আয়োজন করে আসছেন এবং তিনি সেই স্থানের নাম দিয়েছেন ‘মেহমান খানা’। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আটটি ইউনিয়নসহ পার্শ¦বর্তী রাণীশংকৈল ও সদর উপজেলা থেকে প্রতি শুক্রবার এখানে একশ’ পঞ্চাশ থেকে দুইশ’ জনের অধিক ভিক্ষুক, মানসিক ভারসাম্যহীন, নিম্ন আয়ের মানুষজন এখানে বিনামূল্যে একবেলা মাংস ও মাছ দিয়ে পেট পুড়ে ভাত খেয়ে যাচ্ছেন। এ কর্মযজ্ঞে শুরুতে কম সংখ্যক মানুষ এলেও দিন দিন সেখানে মেহমানদের ভিড় বাড়ছে।
গত শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কামরুজ্জামান, হারুন, মামুন, খলিল, আনছারুল, রহিম ও জরিনা খাতুন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সেখানে সকাল থেকে চেয়ার ও টেবিল সাজাচ্ছেন, বাবুর্চি রান্না করছেন। বেলা গড়িয়ে জুম্মার আযান দিলেই মেহমান খানায় শুরু হয় ভিক্ষুক ও নিরন্ন মানুষদের উপস্থিতি। নামাজ শেষে কয়েক দফায় চলে খাওয়া দাওয়া। মেহমান খানার স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, এক দফায় একশ’ জন মানুষ বসে খেতে পারেন। দুই দফায় দুইশ’ জন।
মেহমান খানায় খেতে খেতে রাহেলা বেওয়া (৬২) নামে এক ভিখারিণী বলেন, ‘হামরা ভিখারী বারে, একবেলা খাই তো একবেলা না খায়ে থাকি’ দিনের খাওয়া যোগার করা হামার তানে কষ্টের, সেইঠে মাছ, মাংস দিয়া পেট ভরে ভাত খাবা পারিমো- এইটা তো স্বপ্নেও ভাবু নাই মুই। যায় হামাক প্রত্যেক সপ্তাহে এক বেলা গোশত ভাত খাওয়াছে আল্লাহ ওমার ভালো করুক, ভেল্লা দিন বাঁচায় রাখুক।
ভিক্ষা করে কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে জীবন কাঁটছে রাহেলা বেওয়ার। কোনো একজনের কাছে খবর পেয়ে মেহমান খানায় এসেছেন দপুরের খাওয়া খেতে। এমনি ভাবে সেখানে খেতে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ নিরন্ন মানুষজন এই খাওয়া পাওয়ায় আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গত শুক্রবার এই মেহমানখানার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে পোলাও মাংস ও ডিমের আয়োজন করেছিলেন হারুন অর রশিদ। এইদিনে বিনামূল্যে খেয়ে গেছেন দুইশ’ দশজন নিরন্ন মানুষ। এতে খরচ হয়েছে একচল্লিশ হাজার টাকার উপড়ে।
বালিয়াডাঙ্গীর পয়রত আলী ও দুওসুও জিয়াখোর গ্রামের মনসুর আলী নামে দুই বাবুর্চি সকাল থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন রান্নার কাজে। তারা জানান, মেহমান খানা চালুর পর থেকে তারা কোনো পারিশ্রমিক না নিয়ে রান্না করে দিচ্ছেন। ১১ বছরের বাবুর্চি পেশায় রান্না করে যতটা তৃপ্তি পেয়েছেন। এই দুই বছরে তার চেয়েও বেশি আনন্দ পেয়েছেন তারা। এজন্য তারা শুক্রবার কোনো অনুষ্ঠানের রান্নার দায়িত্ব নেন না এবং যতদিন তারা সুস্থ থাকবেন, যতদিন মেহমান খানা চলবে ততদিন তারা এভাবেই সেবা করে যাবেন বলেও জানান তারা।
বিরাট ও মহান এই কর্মযজ্ঞের আয়োজক হারুন অর রশিদ জানান, দুই বছর আগের কথা। এক শুক্রবার দুপুরে এক ভিক্ষুক এসে আমার কাছে খাবার চেয়ে বসে। জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, পাঁচজনের বাড়িতে খাবার চাওয়ার পরও তাকে কেউ খাবার দিতে রাজি হয়নি। সেদিন মনস্থির করেছিলাম সপ্তাহে অন্তত একবার এমন নিরন্ন মানুষের জন্য একবেলা খাবার আয়োজন করার। স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজে নেমে পরি।
তিনি জানান, প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হতভাগা সেন্টার নাম দিয়ে নিরন্ন মানুষদের খাওবার আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আর প্রথম শুক্রবার বাজারে আসা ভিক্ষুক, মানসিক ভারসাম্যহীন ও নি¤œ আয়ের মানুষকে একবেলা খাওয়ার জন্য দাওয়াত দিই। প্রথম সপ্তাহে একশ’ পনেরো জন এসেছিল। এরপরে এটির নাম পরিবর্তন করে ‘মেহমান খানা’ রাখা হয়।
কতদিন কার্যক্রম চলবে? এমন প্রশ্নের জাবাবে হারুন অর রশিদ জানান, আমার ইচ্ছা এটি চলমান থাকবে সারাজীবন। আমার ব্যক্তিগত ব্যয়ে প্রথম ছয় সপ্তাহ পরিচালনা সম্পন্ন করেছি কারও কাছে কোনো সহযোগিতার কথা বলিনি। পরে এই মেহমান খানার প্রচার হলে অনেকেই বিশেষ করে আমার ফেসবুক বন্ধু ও শুভাকাক্সিক্ষগণ সহযোগিতা দিতে শুরু করেন। প্রতি সপ্তাহে প্রায় বার হাজার টাকার প্রয়োজন পরে। আশা করছি সমাজের বিত্তবান লোকজন এগিয়ে এলে এটি আরও বৃহৎ আকারে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
স্থানীয় সংবাদিক মামুনুর রশিদ শুক্রবার মেহমান খানায় কার্যক্রম দেখতে এসে জানান, পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ভিক্ষুক চলে এলে আমরা অনেকে প্রচুর বিরক্তির সহিত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি। কেউ হয়তো উচ্ছিষ্ট কিংবা সামান্য খাবার দিয়ে থাকি। কিন্তু এখানে ওইসব মানুষদের অতিথির মর্যাদায় আপ্যায়ন করা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ ও প্রশংসার দাবিদার।
বালিয়াডাঙ্গী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক রমজান আলী বলেন, সপ্তাহে দুইশ মানুষকে বিনামূল্যে খাওয়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে শক্ত মনোবলের প্রয়োজন, এতে প্রচুর টাকা খরচ হয়। নিঃসন্দেহে এটি একটি ব্যতিক্রমী এবং মানবিক উদ্যোগ। কার্যক্রমটি চলমান রাখার জন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ।
মানববন্ধু জুলকারনাইন
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর যখন থমকে গেছে অনেক কিছুই, তখন তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র টেক্সাসে। বিদেশে বসে দেশের মানুষের দুঃখ, দুর্দশার কথা চিন্তা করে তিনি গড়ে তোলেন মানবিক সংগঠন পটিয়া নজির আহমেদ দোভাষ ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নিজস্ব কর্মীরা ছুটে গেছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে বা মারা গেলে যখন তার পাশে কেউ যাচ্ছে না, ঠিক সেই মুহূর্তে এগিয়ে গেছেন তার টিম। সে ধারা এখনো অব্যাহত। এখন অসহায় কেউ অসুস্থ হলে, নানা সংকটে পড়লে তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
শুধু এ সময় নয়, কলেজ জীবন থেকেই নিঃস্বার্থভাবে নীরবে মানুষের সেবা করেছেন তিনি। মানুষের উপকার বা সেবা করাই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। নিজের জীবন বাজি রেখে এমন অনেক কাজ নিঃস্বার্থভাবে করে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের বিনানিহারা গ্রামের আবু বকর চৌধুরী ও আজকিরা বেগম চৌধুরীর পুত্র ডক্টর জুলকারনাইন চৌধুরী জীবন। তিনি ১৯৭৭ সালের ১৬ জুন পটিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রি নিতে আমেরিকায় পাড়ি দেন। পিএইচডি ডিগ্রি শেষে সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে রয়েছেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর পটিয়ার সুলতান আহমেদ কুসুমপুরীর নিকটয়াত্মীয়।
যুক্তরাষ্ট্র টেক্সাস বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও পটিয়া নজির আহমেদ দোভাষ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মানবতার এ ফেরিওয়ালা। তিনি একাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তিনি নজির আহমেদ দোভাষ ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ব্যতিক্রমী ও মানবিক কাজগুলো করে চলেছেন। তাঁর এ কার্যক্রমের মাধ্যমে উপকারভোগী হয়েছেন পটিয়ার অন্তত ২০ হাজার অসহায় মানুষ।
নজির আহমেদ দোভাষ ফাউন্ডেশনের অর্থ সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জুলকারনাইন চৌধুরী জীবনের অর্থায়নে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তা, চিকিৎসা সহায়তা, কৃষি কাজে বীজ, সার বিতরণ, অসহায় পরিবারের মেয়ের বিয়েতে আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঢেউটিন বিতরণ, ঘর নির্মাণ, খাদ্য সহায়তা, ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, পবিত্র রমজান মাসে ইফতার সামগ্রী বিলি, শীতবস্ত্র বিতরণ, গ্রাম পুলিশকে খাদ্য সহায়তা, সাইকেল বিতরণ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছেন সম্মাননা। জুলকারনাইন চৌধুরী জীবনের প্রচেষ্টায় অনেক অসহায় পরিবার এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছেন। যা প্রশংসা কুড়িয়েছে সর্বমহলে।
জুলকারনাইন মূলত মানবতার জন্য মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় আনন্দ এবং তৃপ্তি খুঁজে পান।
পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নের মোহাম্মদ জুয়েল ও মো. এহসান সহযোগিতা পাওয়ার পর জানিয়েছেন, ডক্টর জুলকারনাইন চৌধুরী মানবসেবার পাশাপাশি এলাকায় বেকার যুবকদের জন্য গড়ে তুলেছেন ব্যতিক্রমধর্মী নানা উদ্যোগ। মৎস্য ও গরুর খামার করে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন বহু বেকার যুবককে। ফাউন্ডেশনের সদস্যরা মানুষের যেকোনো বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন সবার আগে। অনেক অসহায় মানুষের আস্থার শেষ ঠিকানা নজির আহমেদ দোভাষ ফাউন্ডেশন। অসহায় গরিব মানুষের ক্যান্সার, ব্রেন টিউমার, প্যারালাইসিস ও দুর্ঘটনায় বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হলে তাদের অর্থ সহায়তা এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে এসব মানুষকে নিয়ে যান তাঁর ফাউন্ডেশন। সহায়তার খুদে বার্তা দেওয়ার পর পেয়েছে আর্থিক সহযোগিতা।
পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শৈবাল বড়ুয়া জানিয়েছেন, ডক্টর জুলকারনাইন চৌধুরী জীবন পটিয়ার জন্য মানবতার এক ফেরিওয়ালা। তিনি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পটিয়াতে প্রায় প্রতিদিন মানবিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল ফোনে সহায়তার খুদে বার্তা দেওয়ার পর ভাটিখাইন ইউনিয়নের উদয়ন বড়ুয়া ও আরতি জলদাশের গৃহনির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের পটিয়ার অসংখ্য পরিবার গৃহনির্মাণ সামগ্রী পেয়ে খুশি।
মানবতার ফেরিওয়ালা ডক্টর জুলকারনাইন চৌধুরী জীবন বলেন, ‘মানুষের ভালোবাসা ও দোয়ায় আমি এ পর্যায়ে এসেছি। আমার সামর্থ্যরে ওপর তাদের হক আছে। বিলিয়ে দেওয়ার মাঝে যে সুখ, সেটা অনেক কিছুতেই পাওয়া যায় না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আর্তমানবতার সেবায় যেন নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারি, সেটাই সকলের কাছে আমার প্রত্যাশা।
ভালোবাসা শ্রম বৃদ্ধাশ্রমে
ধনাঢ্য ও প্রতিষ্ঠিত ছেলে-মেয়েদের বোঝা হয়ে ওঠা বৃদ্ধ বাবা ও মাকে নিয়ে নগরীর কাউনিয়া এলাকায় গড়ে তোলা বয়স্ক পুনর্বাসন কল্যাণ সংস্থা নামের বৃদ্ধাশ্রমটি এখন উদ্যোক্তা সাখাওয়াত হোসেনের চরম দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৪০ জন বয়স্ক পিতা-মাতাকে ভাড়া বাড়িতে রেখে লালন-পালন করতে সাখাওয়াত ক্রমেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও এখনো হাল ছাড়েননি। সরকার ও সমাজের বিত্তবানসহ প্রবাসীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা না পেয়ে নিরাশ হয়ে পড়েছেন সাখাওয়াত হোসেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা নগরীর পথে পথে হেঁটে এ পুনর্বাসন কেন্দ্রের জন্য অনুদান তুলে অসহায় ও দুস্থদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন সাখাওয়াত। শুধু সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে বছরে ২০ হাজার টাকার অনুদান জুটছে এ বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রটির জন্য। খাদ্যপণ্যসহ সবকিছুর মূল্যস্ফীতির কারণে এ আশ্রমের নিবাসীদের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। নগরীর কাউনিয়া এলাকার তিনটি ভাড়া বাড়িতে অসহায় বয়স্কদের তিন বেলা আহার ও চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে সাখাওয়াত নিঃস্ব হয়ে গেলেও হাল ছাড়েননি। জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সাখাওয়াত চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। মা হারা সাখাওয়াতের বৃদ্ধ পিতাও তার সাথে এ বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পথে প্রান্তরে অসহায় মানুষদের মানবেতর জীবন দেখেই ২০১৫ সালে নিজ উদ্যোগে এ আশ্রমটি গড়ে তুলেছি। সেই থেকে পথে পথে হেঁটে অনুদান সংগ্রহ করে আশ্রমের নিবাসীদের মুখে তিন বেলা আহার তুলে দেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছি। দুই সন্তানের জনক সাখাওয়াতের স্ত্রী ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে চাকরি করে সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সন্তানদের তাচ্ছিল্যে থাকা বৃদ্ধদের তার বয়স্ক কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এমনকি তিনি (সাখাওয়াত) নিজেও পথে প্রান্তরে ফেলে যাওয়া বৃদ্ধদের তুলে আনেন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকেও মাঝে মধ্যে বয়স্কদের এখানে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম কোনো সহায়তা মিলছে না।
সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, প্রতিমাসে বয়স্কদের খাবার, ওষুধ এবং ভবন ভাড়া মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। সাখাওয়াত ও তার আশ্রয় কেন্দ্রের নিবাসীরা সমাজের বিত্তবান, প্রবাসীসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বয়স্ক কেন্দ্রটির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য মানবিক আবেদন করেছেন।