
হাসপাতালের মেঝেতে ডেঙ্গু রোগীরা। ছবি: জনকণ্ঠ।
ভোলায় দিন দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে ভোলা পৌরসভা থেকে এলাকায় মশক নিধন অভিযান চললেও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না ডেঙ্গু। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। ফলে ভর্তি হওয়া সাধারণ রোগীরাও আতঙ্কে রয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
গত দুই মাসে ভোলা জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮৫৫জন রোগী। আর মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। এমন পরিস্থিতিতে গত এক সপ্তাহ ধরে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে কিট শেষ হয়ে যাওয়ায় সরকারিভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তীতে পড়ছেন রোগীরা। হাসপাতালে ভর্তি থেকেও অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বাইরে গিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হচ্ছে তাদের।
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্তদের সাধারণ রোগীদের সঙ্গে হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মেঝেতে চিকিৎসা নেওয়া এ সকল রোগী মশারী ব্যবহার না করায় অন্য রোগীরা ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। আর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীরাও সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী আমজাদ হোসেন নাঈম জানান, তিনি গত এক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালে তেমন কোনো সেবা নেই।
মনপুরা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর স্বজন জানান, তিনি তার শিশুকে নিয়ে হাসাতালে এসেছেন। এখানে এসে বেড না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে করে অনেক কষ্টে দিন কাটছে তাদের।
মো. আমির হোসেন নামের এক রোগীর স্বজন জানান, তিনি তার ভাতিজাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তারা বাহির থেকে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়েছেন।
ভোলার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন ৩০ থেকে ৪০ জন। গত দুই মাসে জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৮৫৫ জন। যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৩৮ জনসহ হাসপাতালে মোট ভর্তি রয়েছেন ১০৪ জন ডেঙ্গু রোগী।
অপরদিকে গত বুধবার থেকে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার এনএস-১ কিট না থাকায় এক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গু পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এতে করে ভোগান্তীতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালে কিট না থাকায় অনেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা না করেই বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত এ হাসপাতালটিতে প্রায় সাত থেকে ৮০০ ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়েছে। বর্তমানে কিট সংকট থাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তায়েবুর রহমান জানান, হাসপাতালে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ২০ জনের ওপরে ডেঙ্গু রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাদেরকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সকল ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে সংরক্ষিত থাকা ডেঙ্গু পরীক্ষার এনএস-১ কিট শেষ হয়ে গেছে। নতুন কিট কেনার জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ এসেছে। কোটেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খুব শিগ্রই কিট কিনে ডেঙ্গু পরীক্ষা চালু করা হবে।
এম হাসান