ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

মুখপোড়া হনুমান হত্যার ঘটনায় বন বিভাগের মামলা

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৮:৫৮, ২ মার্চ ২০২৩

মুখপোড়া হনুমান হত্যার ঘটনায় বন বিভাগের মামলা

মুখপোড়া হনুমান হত্যা

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের উত্তর আমখোলা গ্রামে একটি মুখপোড়া হনুমান পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বন বিভাগ মামলা দায়ের করেছে। বন বিভাগের পটুয়াখালী সদর উপজেলা রেঞ্জ অফিসার নয়ন মিস্ত্রি বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় উত্তর আমখোলা গ্রামের ছিদ্দিক খানকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। এরআগে মৃত হনুমানটির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। মামলার অনুলিপি আদালতেও জমা দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে বলা হয়েছে, মুখপোড়া হনুমানটিকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়। পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর এলাকায় পিটিয়ে মারার মাসখানেক আগে হনুমানটির আবির্ভাব ঘটে। হনুমানটি কেবলমাত্র খাবারের সময়ে গাছ থেকে নেমে আসতো। বাকি সময় বিভিন্ন গাছ ও বাসাবাড়ির চালে বসে থাকতো। ওই এলাকার লোকজন কখনোই হনুমানটিকে বিরক্ত করতো না। কিন্তু ঘটনার দিন সকালে হনুমানটি উত্তর আমখোলা গ্রামে চলে আসে। খবর পেয়ে পটুয়াখালী বন বিভাগের কর্মকর্তারা ওই গ্রামে ছুটে আসেন এবং হনুমানটিকে বিরক্ত না করার জন্য এলাকার লোকজনকে সচেতন করেন। কিন্তু বিকেলে বন বিভাগের লোকজন চলে যাওয়ার পরই হনুমানটি গাছ থেকে নেমে আসে। এরপর ছিদ্দিক খান পিটিয়ে হনুমানটিকে হত্যা করে। খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজন মাটি খুঁড়ে হনুমানটির লাশ সংগ্রহ করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। 

পটুয়াখালী জেলা ভেটেরনারি চিকিৎসক মো. জামালউদ্দিন স্বাক্ষরিত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুখপোড়া এ হনুমানটির বয়স প্রায় ১৫ বছর। মৃত হনুমানটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আঘাতের কারণে মাথার ওপর ফাটা ও তা দিয়ে ঘন রক্ত বের হয়েছে। নাক মুখ দিয়েও রক্ত বের হয়েছে। বিকেল অনুমান পাঁচটার দিকে হনুমানটির মৃত্যু হয়েছে। 

পটুয়াখালী সদর উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা নয়ন মিস্ত্রি জানান, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সদর কার্যালয়ে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ নিরাপত্তা আইন ২০১২ এর ৬ ও ৩৯ ধারায় ছিদ্দিক খানকে আসামি করা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, মুখপোড়া এ হনুমানটি ছিল অনেকটা বিরল প্রজাতির। কেবলমাত্র পাহাড়ি এলাকায় এ প্রজাতির দেখা মেলে। ধারণা করা হচ্ছে, দলছুট হয়ে হনুমানটি কোন পরিবহন গাড়িতে পটুয়াখালী এলাকায় চলে এসেছে। এটি যশোরের কেশবপুর থেকেও আসতে পারে বলেও তিনি ধারণা করেন। 

এদিকে, পিটিয়ে হনুমান হত্যার ঘটনায তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পশুপ্রেমী সংগঠন এনিমেল লাভার অব পটুয়াখালীর কর্মকর্তারা। সংগঠনের সভাপতি আহসান উল্লাহ হাসান বলেন, হনুমানটি মাসখানেক ধরে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কারও কোনো ধরণের ক্ষতি করছিল না। কেবলমাত্র খাবারের সময়ে লোকালয়ে আসতো। আমরা এলাকার লোকজনকে সর্বদাই সচেতন করার চেষ্টা করেছি। এরপরও নির্মম ভাবে হনুমানটি পিটিয়ে হত্যা করে লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

উল্লেখ্য, হনুমান পিটিয়ে হত্যার এ ঘটনার খবর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক জনকণ্ঠের মুদ্রিত সংষ্করণ ও অনলাইনে প্রকাশিত হলে বিভিন্ন সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করে। এরপরই বন বিভাগ এ মামলা দায়ের করে।  

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×