বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জামায়াতে ইসলামের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলার দুই দফা ঘোষণার তারিখ পেছানোর পর অবশেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে বুধবার। কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধীর রায় ঘোষণা উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালত। সারাদেশে পুলিশ ও র্যাবের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই বিজিবি সারাদেশে টহল দিচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীর রায় ঘোষণা উপলক্ষে কেউ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে বা কোন ধরনের অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার যে কোন ব্যবস্থা নেবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। নিজামীর বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি অভিযোগের বিচারের পর রায় ঘোষণা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিন স্তরের নিরাপত্তায় বলয় গড়ে তুলবে র্যাব, সোয়াত, পুলিশ, গোয়েন্দা, দাঙ্গা পুলিশ, বোম ডিসপোজাল ইউনিটসহ পুলিশের চৌকস সদস্যরা। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
সূত্র জানান, মানুষজনের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জলকামান, এপিসি, পিপার স্প্রে, টিয়ারগ্যাসসহ সব ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের পুলিশকে রাখা হবে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণা উপলক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চতুর্দিকে শত র্যাব, সোয়াত, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, দাঙ্গা পুলিশ সদস্যরা ঘিরে রাখবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাজার সংলগ্ন পশ্চিম দিকের গেট সকাল নয়টার আগেই আটকিয়ে দেয়া হবে। বন্ধ করে দেয়া হবে শিশু একাডেমি সংলগ্ন পূর্ব দিকের গেটটি। দুই দিকেই থাকবে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা অবস্থায়। মোতায়েন করা থাকবে বোমা ডিসপোজাল ইউনিট। কেবল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই প্রবেশ করতে পারবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া প্রবেশাধিকার থাকবে নিষিদ্ধ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চর্তুরদিকের নিরাপত্তার ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই রেকি করা হয়েছে। তিন স্তরের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূল প্রবেশ পথ সুপ্রীমকোর্টের প্রধান ফটকে নেয়া হচ্ছে নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা। এখানে র্যাব, সোয়াত, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। শিশু একাডেমির সামনের গেট দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় গেটসহ আশপাশের এলাকায় শিক্ষা ভবন, কদম ফোয়ারা, পুরানো হাইকোর্ট, দোয়েল চত্বরসহ গোটা এলাকায় র্যাব, পুলিশের নিরপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকার মোড়ে মোড়ে তল্লাশি, চেকপোস্ট বসানো, সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
রাজধানীর পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, মগবাজার, ফার্মগেট, মহাখালী, তেজগাঁও, সাতরাস্তা, শাহবাগ, আরামবাগ, মালিবাগ, শাহজাহানপুর, প্রেসক্লাব, দৈনিক বাংলার মোড়, শাপলা চত্বর, কমলাপুর, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট, উত্তর গেটসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঢাকা মহানগরীর ৪৯ থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি মনিটর করা হবে বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: