ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হোটেলে বসে খাওয়া যাবে না, বাসায় নেয়া যাবে

রাজধানীর হোটেল রেস্তরাঁ শর্তসাপেক্ষে খুলে দেয়া হচ্ছে আজ থেকে

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ২৮ মার্চ ২০২০

 রাজধানীর হোটেল রেস্তরাঁ শর্তসাপেক্ষে খুলে দেয়া হচ্ছে আজ থেকে

আজাদ সুলায়মান ॥ শর্তসাপেক্ষে রাজধানীর হোটেল রেস্টুরেন্টগুলো খুলে দেয়া হচ্ছে। আজ শনিবার থেকে রাজধানীতে কিছু রেস্টুরেন্ট খোলা দেখা যেতে পারে। এ বিষয়ে কঠোর নজরদারিসহ ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। যদিও মালিকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হোটেল রেস্তরাঁ অন্যান্য জরুরী সেবার আওতাভুক্ত রাখা হয়। তবুও পুলিশের ভয়ে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এটি এখন ধোঁয়াশা। বিষয়টি স্পষ্ট করা উচিত প্রশাসনেরই। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে রাজধানীসহ সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধসহ বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। তবে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে সুপারশপ, কাঁচাবাজার, মুদি দোকান, ওষুধের দোকান এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে এবার থাকছে খাবারের হোটেল রেস্টুরেন্ট। তবে দোকানে বসে কেউ খেতে পারবেন না। কারও প্রয়োজন হলে খাবার কিনে বাসায় নেয়া যাবে। রাজধানীর জরুরী সেবার আওতায় ডিএমপি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে ডিএমপি রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান উল্লেখ করেন, সাধারণ মানুষ যেন দুর্ভোগে না পড়ে সেজন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তার কথায়-করোনা প্রতিরোধে সব সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে হোটেল খোলা রাখা যাবে। তবে ভেতরে বসিয়ে খাবার পরিবেশনের সুযোগ নেই। ক্রেতারা শুধু পার্সেল নিয়ে যেতে পারবেন। এ বিষয়ে রাজধানীর সবচেয়ে বড় চেইন হোটেল রেস্তরাঁ সুপারস্টার কাবাব এ্যান্ড হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর আকতার উদ্দিন দুলাল দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, হোটেল রেস্তরাঁয় সরকারী রেস্ট্রিকশান খুব একটা ছিল না। কিন্তু আমরাই তো আমাদের স্টাফদেরকে ধরে রাখতে পারিনি। আমার মতো বেশিরভাগেরই একই অবস্থা। তারপরও চেষ্টা চলছে যতদ্রুত সম্ভব রেস্টুরেন্টগুলো খোলা যায় কিনা। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে হোটেল রেস্তরাঁয় কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করায় মালিকরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়েই তা বন্ধ রেখেছে। যদিও পুলিশ এখন নমনীয় হয়েছে বলে মালিকরাই জানিয়েছেন। কিছু শর্তসাপেক্ষে এখন মালিকরা চাইলে হোটেল রেস্টুরেন্ট খোলা রাখতে পারবেন বলে জানিয়েছে ডিএমপি। এ লক্ষে খাবার তৈরি থেকে শুরু করে বিক্রি করার পুরো প্রক্রিয়া যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে করছেন কিনা তা তদারকি করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। শুক্রবার ডিএমপির পক্ষ থেকে শর্তসাপেক্ষে খাবারের হোটেল খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদুদ হাওলাদার। তিনি বলেন, ওয়্যারলেসে নির্দেশনা পেয়েছি, খাবারের হোটেল খোলা থাকবে। তবে দোকানের ভেতরে বসিয়ে কাউকে খাওয়ানো যাবে না। এক্ষেত্রে শুধু পার্সেল দিতে হবে। ডিএমপির উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান পার্সেলের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ক্রেতা সশরীরে হোটেলে এসে খাবার নিয়ে যেতে পারবেন। হোটেল থেকে বাসায় বাসায় খাবার পৌঁছে দেয়ার সুযোগ থাকছে না। অর্থাৎ হোম ডেলিভারিটা হোটেল কর্তৃপক্ষ দিয়ে দেবে না। ক্রেতাকেই হোটেলে গিয়ে নিতে হবে। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্সেল হিসেবে খাবার বিক্রির সুযোগ থাকার বিষয়টি জানেন না অনেক মালিক। এ কারণে তারা হোটেল খুলছেন না বলে দাবি করেছেন। তাছাড়া দশদিন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা পেয়ে অধিকাংশ কর্মচারী ঢাকা ছেড়েছেন। জনবল সঙ্কটের কারণে ক্রেতাদের সেবা দিতে পারছেন না অনেক হোটেল কর্তৃপক্ষ। এদিকে রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শনে দেখা যায়, ডিএমপির পক্ষ থেকে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত থাকলেও শুক্রবারও রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার হোটেল বন্ধ দেখা গেছে। তবে আজ কিছুসংখ্যক হোটেল রেস্টুরেন্ট সীমিতকারে খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে দোকানমালিক সমিতির একাধিক সূত্র। জানতে চাইলে ধানমন্ডি এলাকার- স্টার কাবাব এ্যান্ড হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর আক্তার উদ্দিন দুলাল বলেন, গত বুধবার থেকেই দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। করোনা আতঙ্কে কয়েকদিন ধরে শুধু ক্রেতাই কমেনি, স্টাফরাও ভয়ে কান্নাকাটি করে ছুটি নিয়ে গ্রামে চলে গেছে। এমনকি ম্যানেজাররা পর্যন্ত ছুটি নিয়ে চলে গেছে। এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক স্টাফ ওয়েলফেয়ার রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার হিরণ মিয়া জানান, করোনার ভয়ে স্টাফ ও বাবুর্চি ঢাকা ছেড়ে দেশে চলে গেছে। তারাও জীবিকার চেয়ে জানের মায়ায় ঘরে ফিরেছে। এ অবস্থায় রেস্টুরেন্ট চালু রাখাটাই কষ্টকর। তবে চেষ্টা করছি শীঘ্রই আবার নতুন উদ্যমে শুরু করার। কিন্তু খাবারের হোটেল খোলা রেখে শুধু পার্সেল দেয়ার কোন সুস্পষ্ট নির্দেশনা না পাওয়ায় কিছুটা বিভ্রান্তিতে থাকতে হচ্ছে। হোটেল মালিকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারী সব মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও খাবার দোকান খোলা রাখতে দিচ্ছে না পুলিশ। নানা অজুহাত ও গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে রেস্টুরেন্ট, ফাস্টফুড, কনফেকশনারিসহ সবধরনের খাবার হোটেল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশী অভিযানে এসব খাবারের দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশকে সরকারী বিজ্ঞপ্তি দেখানোর পর গ্রেফতারের ভয় দেখিয়েছে পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে-জনসমাগমের আশঙ্কায় অপ্রয়োজনীয় দোকান বন্ধ করা হচ্ছে। রাজধানীর মহাখালী, ফার্মগেট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকার খাবারের দোকানগুলো বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এসব এলাকায় জনসাধারণ বেশি থাকে বিধায় খাবারের দোকানে ভিড় হবে তাই এগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি বন্ধ করা হয় পুরান ঢাকার নয়াবাজার, বেগমবাজার, চকবাজার, হাজারীবাগ, লালবাগসহ ধানমন্ডির খাবারের দোকান। ধানমন্ডির ঝিগাতলায় একটি চেইন বেকারি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শোরুমে গিয়ে ম্যানেজারকে এটি বন্ধের নির্দেশ দেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। ম্যানেজার তাদের সরকারী নির্দেশনার বিষয়ে জানালে পুলিশ সদস্যরা ‘দোকান বন্ধ না করলে গ্রেফতার’ করার হুমকি দেন। ওই বেকারির ম্যানেজার বলেন, আমাদের দোকানে কেক, টোস্ট বিস্কুটসহ নানা শুকনা খাবার বিক্রি হয়। এছাড়া জনস্বার্থে আমরা কোম্পানি থেকে চাল-ডাল ইত্যাদি এনেও বিক্রি করছি। দোকানের বাইরে আমাদের একজন স্টাফ সার্বক্ষণিক দাঁড়িয়েছিল। একজন বের হয়ে যাওয়ার পর সে আরেকজনকে প্রবেশ করাচ্ছিল। দোকানে কোন জনসমাগমের সুযোগ ছিল না। এরপরও দোকান বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। মাঠপর্যায়ের অভিযোগ, পুরান ঢাকায় খাবার হোটেল বন্ধের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন ভাড়াটিয়া ও মেসে বসবাসকারীরা। নয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের ভয়ে মেসের মালিক বাসায় রান্না ও কাপড় ধোয়ার গৃহকর্মীকে আসতে নিষেধ করেছেন। আমরাতো সরকারের নির্দেশনা মেনে গ্রামে যাইনি। ঘরে খাবার নেই, হোটেলও বন্ধ। গত দুদিন ধরে শুধু মুড়ি খেয়েছি। শুক্রবার মেসের হিটারে শুধু ভাত ও ডাল রান্না করে খেয়েছি। পুলিশ দুদিন ধরেই এলাকার কোন খাবার হোটেল খোলা রাখতে দিচ্ছে না। সব মিলে আমরা অনেক কষ্টে আছি। উল্লেখ্য, করোনা প্রতিরোধে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ১০ দিনের ছুটিসহ দেশবাসীকে ১০টি নির্দেশনা দেন। প্রথম পয়েন্টটিতেই ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে এতে আরও উল্লেখ ছিল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতালসহ জরুরী যেসব সেবা রয়েছে- সেসব এর আওতাভুক্ত হবে না। জনসাধারণকে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া (খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ ক্রয় ও চিকিৎসা গ্রহণ ইত্যাদি) কোনভাবেই ঘরের বাইরে না আসার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে ঘরের বাইরে গেলেও খাদ্যদ্রব্যের দোকানই খোলা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ সম্মেলন ও ইমেলে পাঠানো নির্দেশনায় রয়েছে- দশ দিনের ছুটিতে জনগণ ও যানচলাচল সীমিত থাকলেও ওষুধ, খাদ্য প্রস্তুত, ক্রয়-বিক্রয়সহ অন্যান্য শিল্প কারখানা, প্রতিষ্ঠান, বাজার, দোকানপাট নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে। পাশাপাশি ট্রাক, কার্গো এ্যাম্বুলেন্স ও সংবাদপত্রবাহী গাড়ি চলবে।
×