ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মেসির সতীর্থ বার্কোসের ওয়ানম্যান শো ...

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ১১ মার্চ ২০২০

মেসির সতীর্থ বার্কোসের ওয়ানম্যান শো ...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অনুশীলন করতে গিয়ে আগের দিনই হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘কালকের ম্যাচটা খেলতে মুখিয়ে আছি। সবাই জানে আমরাই জিতবো। লিখে রাখুন, ২৫ গোলে জিতবো, আমিই করবো ২৪ গোল!’ বুধবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে তার দল গোল করলো ৫টি। তিনি করলেন একাই ৪ গোল। দুটি হেডে, দুটি পায়ে (একটি আবার পেনাল্টিতে)। যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি হার্নান বার্কোস। বাংলাদেশে আসার আগে বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোনকে ফোন করে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার খেলোয়াড়দের বলে দিও, ম্যাচে বলটি শুধু বক্সের ভেতরে রাখতে। বাকি কাজ আমার।’ কথা রেখেছেন বার্কোস। আর্জেন্টাইন এই স্ট্রাইকারের কথা আর কাজে পুরোপুরি মিল খুঁজে পাওয়া গেল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। এএফসি কাপে বসুন্ধরার যেমন অভিষেক, তেমনি বসুন্ধরার জার্সিতে লিওনেল মেসির সাবেক এই সতীর্থেরও অভিষেক হলো বুধবার। ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন শুরুর আগে কথাপ্রসঙ্গে বার্কোস বলেছিলেন, ‘দলে আমি ছাড়াও আরও অনেক ভাল খেলোয়াড় আছে। দল শুধু একা আমার ওপর কেন নির্ভর করবে? আমরা সবাই একে অন্যের ওপর নির্ভর করেই জিতবো।’ ঠিক বলেননি তিনি। দল তার ওপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল এবং তার কল্যাণেই বড় জয়ে শুভসূচনা করে কিংসরা। ম্যাচ শেষে বার্কোস সম্পর্কে টিসি স্পোর্টস ক্লাবের কোচ মোহাম্মদ শাজলি বলেন, ‘পুরো ম্যাচে ওয়ান ম্যান শো। আর সেই ম্যানটি হলো বার্কোস। আমি গতকালই বলেছিলাম কিংস সম্পূর্ণ ভিন্ন দল, কারণ তাদের আছে ভালমানের বিদেশী। আজ তারা অসাধারণ খেলে প্রমাণ করলো আমার কথার সত্যতা। তার স্কিল, গতি .. সবকিছুই অন্য লেভেলের।’ বসুন্ধরার কোচ অস্কার বলেন, ‘এটা ছিল বার্কোসের প্রথম ম্যাচ। তার স্কিল সম্পর্কে জানতাম। আজ সে যেভাবে খেলেছে, গোল করেছে, তা ছিল বিশ্ব পর্যায়ের।’ ম্যাচে বার্কোসের সঙ্গে কলিনড্রেসের রসায়ন ছিল চোখে পড়ার মতো। এ নিয়ে অস্কার মজা করে বলেন, ‘এতদিন কলিড্রেস ছিল সিঙ্গেল। বার্কোস আসাতে তারা এখন কাপল। অনেকটা যেন স্বামী-স্ত্রীর মতো (তবে কে স্বামী, কে স্ত্রী, সেটা বলেননি অস্কার)! প্রতিটি গোলের পর বিশেষ এক ভঙ্গি করতে দেখা গেছে বার্কোসকে। সেটা ছিল বাঁ চোখ বাঁ হাত দিয়ে ঢেকে ডান হাত লম্বা-উঁচু করে মাথার ওপর মেলে ধরা। স্প্যানিশ ভাষায় একে বলে ‘এল পিতা’। ম্যাচে দারুণ কিছু সেভ করেছেন বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে প্রশংসা করলেও মূল কৃতিত্ব শাজলি দিলেন বার্কোসকে। তিনি আরও বলেন, ‘বসুন্ধরার হয়ে এই প্রথম বার্কোস খেললো। ফলে এর আগে ওদের হয়ে তার খেলার ধরণ দেখার সুযোগ আমার হয়নি। আজ দেখলাম। আশা করি ফিরতি লেগে তাকে আটকানোর পথ খুঁজে পাব।’ ৩৫ বছর বয়সী ও ৬ ফুট ২ ইঞ্চির অধিকারী বার্কোস ২০১২ সালে লিওনেল মেসির সঙ্গে আর্জেন্টিনার হয়ে দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন। ২০০৪ সাল থেকে ক্লাব ক্যারিয়ার শুরু করা বার্কোস খেলেছেন দেশী-বিদেশী মিলিয়ে মোট ১৬টি ক্লাবে। ক্লাব ক্যারিয়ারে মোট খেলেছেন ৪৯৪ ম্যাচ। গোল করেছেন ২৩১টি। এলডিইউ কুইতোর হয়ে ২টি এবং পালমেইরার্স ও ক্রুজিরোর হয়ে জিতেছেন ১টি করে শিরোপা। ২০০৯ সালে চাইনিজ সুপার লীগে গোল্ডেন বুট, ২০১০ ও ২০১৭ সালে ইকুয়েডরিয়ান লীগের টপ স্কোরারের পুরস্কার পেয়েছেন বার্কোস। এখন দেখার বিষয়, বসুন্ধরার হয়ে আগামী ম্যাচগুলোতে এই দুর্ধর্ষ নৈপুণ্য বজায় রাখতে পারেন কি না বার্কোস।
×