ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নীরবে বাড়ছে মশা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নগরবাসী

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

নীরবে বাড়ছে মশা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নগরবাসী

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাজধানীর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত লেকসিটি কনকর্ড। খিলক্ষেত মোড় থেকে রেলক্রসিং পার হয়ে একটু সামনেই লেকসিটি। পুরোটাই আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই এলাকার মানুষ এখন ভাল নেই। শীতের বিদায় মাত্রই নতুন উপদ্রব মশা। যারা লেকসিটির ভেতরে বাইরে বসবাস করেন সবার কথা একই রকম। সিটির ভেতরে ১০ তলার ওপরও মশার যেন কমতি নেই। নিচ তলায় তো হেঁটে চলাই দায়। চারপাশজুড়ে থাকে হাজারও হাজারও মশা। রাত দিন সমান উপদ্রব। যদিও কীটতত্ত্ববিদরা বলেন, তিন তলার বেশি ওড়তে পারে না মশা। তবে ১০ থেকে ১৫ তলা পর্যন্ত এত মশা কিভাবে যায়। সহজ জবাব হলো লিফট। অর্থাৎ অভিজাত এলাকায় মশার চলাচল লিফটে। গত ১৫ দিনে প্রতিদিনই এই এলাকায় মশার উপদ্রব যেন বেড়েই চলছে। সামনের দিনগুলো অর্থাৎ মশার প্রজনন মৌসুম। তাই ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে। ফলে ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়ার আতঙ্ক দেখা গেছে এলাকাবাসীর মধ্যে। কিন্তু মশা নিধনের কোন উদ্যোগ দেখছেন না এলাকার স্থানীয়রা। তারা বলছেন, নীরবে মশা বাড়ছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কেন নজরে আসছে না। তবে কি সামনের দিনগুলোতে ফের গত বছরের মতো অবস্থা হতে পারে। একই অবস্থার কথা জানিয়েছেন, খিলক্ষেত, নিকুঞ্জ, বসুন্ধরা মোড়সহ আশপাশের সবকটি আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। নগরীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মিলিয়ে অন্তত ১০টি ওয়ার্ড ঘুরে মশা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে। এ কারণে মশাবাহিত রোগ নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা শুরু থেকেই। এমনিতেই প্রাণঘাতী চীনের করোনাভাইরাস নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনায় ভয় আছে। এরমধ্যে নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছে ডেঙ্গু নয়ত চিকুনগুনিয়া। যারা একাধিকবার এসব রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ভয় আরও বেশি। ফের আক্রান্ত হলে কি হবে? প্রশ্ন হলো নগরবাসীর সুরক্ষার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষেরই বেশি। বিশেষ করে মশক নিধন কার্যক্রমের পুরোটাই। তাই সময় এসেছে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের। নগরবাসী সামনের দিনগুলোতেই সে রকম চিত্রই দেখতে চান। ঢাকার সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষে নির্বাচন হয়েছে। আগামী ১৬ মে দুই সিটির মেয়র ও কাউন্সিলররা দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত উত্তরে ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও দক্ষিণে সাঈদ খোকন দায়িত্ব পালন করবেন। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুর ভয়াবহ মৌসুম ধরা হয়। যদিও গত বছরের বেশিরভাগ সময় এ রোগের উপদ্রব ছিল। এপ্রিল থেকে মৌসুম ধরা হয়, তবে এখন থেকেই ডেঙ্গু ও মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই। প্রশ্ন হলো নতুন মেয়ররা যখন দায়িত্ব নেবেন তখন ভর মৌসুম শুরু। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে কি মশার ভয়াবহতা রোধ করা সম্ভব হবে। নাকি চলতি দায়িত্বে যারা আছেন তারা গা ছাড়া ভাব না দেখিয়ে সঠিক কাজটুকু করবেন। এ প্রশ্ন যখন সামনে তখন গতবছরের ডেঙ্গুর সময়ের কথা কারও ভুলে যাবার কথা নয়। যখন গোটা ঢাকা শহরজুড়ে ডেঙ্গুর উপদ্রব তখন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন একেবারেই স্র্রোতের বিপরীতে হেটেছিলেন। উল্টাপাল্টা কথা বলে শেষ পর্যন্ত মেয়র পদে মনোনয়ন হাড়িয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে কতটা আন্তরিকভাবে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন তাই এখন বড় প্রশ্ন। যদিও মঙ্গলবার মশক নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম উদ্বোধন শেষে সাঈদ খোকন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে এর উৎস নির্মূল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে এজন্য নাগরিকদের সচেতনতা হওয়া এবং নিজ নিজ বসতবাড়ি, আঙিনা ও এর আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। নাগরিকদের এডিস মশার প্রকোপ থেকে রক্ষাকল্পে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন এর অংশ হিসেবেই আজ স্পেশাল এ ক্র্যাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধন করা হলো। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ এবং ৪২ এই ৬টি ওয়ার্ড কে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এ প্রেক্ষিতে ঘোষিত এলাকাসমূহ ঝুঁকিমুক্ত করতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কর্পোরেশনের মশক কর্মী ও পরিচ্ছন্ন পরিদর্শকগণ ঘোষিত এলাকার প্রতিটি বাড়ি পরিদর্শন করে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে তা ধ্বংস করবেন এবং অধিবাসীদের লার্ভা ধ্বংস করার কৌশল শিখিয়ে দেবেন। এরপরও কেউ সচেতন না হলে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর অবস্থা দৃষ্ট হলে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এখনই সতর্ক না হলে গতবছরের রেকর্ড ভাঙ্গতে পারে ডেঙ্গু। তাই এখনই প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ। নয়ত নতুন জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব নেয়ার পর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। তেমনি রোগ মাত্রা ছাড়ালে তাদের নিয়ে সমালোচনার শেষ থাকবে না। তাই মন্ত্রণালয়কেও এ নিয়ে ভাবনা ভাবা উচিত বলে মনে করেন সকলেই। গত এক সপ্তাহে উত্তর সিটির ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১ ও দক্ষিণ সিটির ১, ৩, ৫, ৬ ও সাত নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে মশার উপদ্রব আগের চেয়ে অনেক বেশি। দোকানে দোকানে বেড়েছে কয়েল বিক্রি। এ্যারোসল, গুড নাইটের কদরও বাড়ছে সমানতালে। মশার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে নানা প্রতিশেধকের পেছনে ছুটছেন নগরীর মানুষ। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫ ও ছয় নম্বর ওয়ার্ডে এখনও কিছু ডোবা নালা ও খালের অস্তিত্ব রয়েছে। তাই এসব এলাকায় মশার যেন শেষ নেই। আহাম্মদবাগ এলাকার বাসিন্দা রতন দে জানান, গত ১৫ দিন ধরে মশার যন্ত্রণা বাড়ছে। রাতে ঘরে বসে থাকা যায় না। নিরুপায় হয়ে কয়েল ব্যবহার করতে হচ্ছে। মুগদা এলাকার বাসিন্দা নিরাময় জানালেন, মশা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। রাতদিন মশার যন্ত্রণা। টিটিপাড়া এলাকায় স্টেডিয়াম মার্কেটের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানালেন, দিনের বেলায় এই এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। রাতের অবস্থা বর্ণনা করার মতো নয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে খাল বয়ে গেছে। এখানে মশার প্রজনন কেন্দ্র। কিন্তু মশক নিধনে আমরা কোন উদ্যোগ দেখছি না। এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বর গত বছর দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। প্রথমে রাজধানীতে এর প্রকোপ দেখা দিলেও ধাপে ধাপে বেড়ে ৬৪ জেলায় ছড়ায়। আক্রান্ত হয় কয়েক লাখ মানুষ। বেসরকারী হিসেবে অন্তত ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। এর আগের বছর রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল চিকুনগুনিয়া। মূলত বর্ষা মৌসুমে এই দুটি রোগ ছড়ায়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। বছরজুড়েই ডেঙ্গু রোগের বিস্তার লক্ষ্য করা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক জরিপেও উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গেছে। জরিপে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১২ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০ শতাংশ এলাকায় এডিস লার্ভার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতির মাত্রার চিত্রও উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আহাম্মদবাগ, বাসাবো এলাকা, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মুগদা-মায়াকানন এলাকা, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের শাজাহানপুর এলাকা ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কলাবাগান এলাকা এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাফরুল এলাকা, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম আগারগাঁও এলাকা ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের নূরজাহান রোড এলাকায় ২০ পয়েন্টের বেশি এডিসের লার্ভার ঘনত্ব সূচক বা ব্রুটো ইনডেক্স মিলেছে। দক্ষিণের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাংলাবাজার এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৭০ এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৫০ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে উত্তরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তোলারবাগ এলাকায় এই সূচক ৩০ পয়েন্ট। মশার লার্ভার উপস্থিতির হিসাব করা হয় এই ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে। প্রতি এক শ’ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০ বা তার বেশিতে যদি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়, তাহলে সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা হয় বলে জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ নগরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলছে, মশা নিয়ন্ত্রণে আছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। সিটি কর্পোরেশন নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর কাজ করছে। পাশাপাশি মশক নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে। এতে অত্যাধুনিক নতুন যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে। ওষুধেরও কোন ঘাটতি নেই। কাজেই মশা এবার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে জানা গেছে, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৪ দিনব্যাপী বিশেষ মশক নিধন কার্যক্রম উদ্বোধন করে ডিএনসিসি। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেশে প্রথমবারের মতো জার্মানি থেকে আমদানি করা ভেহিকল মাউন্টেড ফগার মেশিন ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু মেশিন চালু করতেই ভেহিকল মাউন্টেড ফগার মেশিনের ব্যারেলের মুখ দিয়ে বিপজ্জনকভাবে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের হতে থাকে। অনেক সময় চেষ্টা করে একটি মাত্র মেশিন চালু করতে সক্ষম হন ডিএনসিসির মশক নিধন কর্মীরা। আরেকটি মেশিন চালুই করতে পারেনি। এ অবস্থার মধ্যেই ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা ওই মেশিন দিয়েই কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। জানা যায়, মশক নিধনের জন্য জার্মানির সুইং ফগ কোম্পানির কাছ থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক ভেহিকল মাউন্টেড ফগার মেশিন প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে বরাদ্দ দিয়েছে ডিএনসিসি। কিন্তু ওই মেশিন চালানোর মতো কোন প্রশিক্ষণ মশক নিধন কর্মীদের দেয়া হয়নি। ফলে মেশিনগুলো কাজে আসছে না। গত সোমবার পর্যন্ত ১০টি ওয়ার্ড ঘুরে কোথাও মশক নিধনের বিশেষ কোন অভিযানের খবর পাওয়া যায়নি। অবশ্য ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, মেশিনগুলো প্রথমে চালু হতে কখনও কখনও সময় নেয়। সমস্যা হলে কোম্পানি সেগুলো মেরামত করে দেবে অথবা ফেরত নেবে। কর্মীদের প্রশিক্ষণ না দেয়ার কথাও ঠিক নয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন কর্মীকে এ মেশিন চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এদিকে গত বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিঙ্গাপুর সফর করে। তারা মশার বন্ধ্যত্বকরণের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি আমদানির উদ্যোগ নেন। সেটাও এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলামও কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। পাশাপাশি কলকাতার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যিনি কাজ করেছেন, সেই বিশেষজ্ঞ অনিক ঘোষের সঙ্গেও কথা বলেন। দুই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কলকাতার একটি বিশেষজ্ঞ দলকেও ঢাকায় আনা হয়। কিন্তু এরপর আর কোন কার্যক্রম নেই। এমনকি সচেতনতামূলক যেসব কার্যক্রম চলার কথা, সেগুলোও দেখা যাচ্ছে না। নালা, পুকুর, ডোবা, জলাশয় পরিষ্কার করার কার্যক্রমও চোখে পড়ছে না। এছাড়া শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ায় খালগুলোতে পানিপ্রবাহ নেই বললেই চলে। ফলে বদ্ধ জলাশয়গুলো মশার উৎকৃষ্ট প্রজননস্থলে পরিণত হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ায় মশার দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এছাড়া ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনের দায়িত্ব পালনের মেয়াদ আগামী ১৬ মে শেষ হবে। এরপর দায়িত্ব নেবেন নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ডিএনসিসির নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলামও দায়িত্ব পাবেন ১৬ মে। ডিএনসিসি চলছে ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিয়ে। কাজেই নতুন দুই মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম যখন দায়িত্ব পাবেন, তখন থাকবে মশার ভরা মৌসুম। এখনই যদি দুই সিটি কর্পোরেশন মশক নিধনে উদাসীনতার পরিচয় দেয়, তাহলে মে মাসের শেষদিকে মশার দৌরাত্ম্য চরমে উঠতে পারে। কাজেই দুই মেয়রের দায়িত্বই শুরু হতে পারে মশার সঙ্গে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। অবশ্য ঢাকা উত্তর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা বলেন, মশক নিধনে ইতোমধ্যে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে। মশক নিধনের জন্য সম্প্রতি অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওষুধেরও মজুদ আছে। পাশাপাশি আরও ওষুধ কেনার প্রস্তুতি চলছে। কাজেই মশার দৌরাত্ম্য এবার বাড়ার আশঙ্কা নেই। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগের তুলনায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০১৮ সালে বর্ষ-পরবর্তী কোন জরিপ হয়নি। তবে সব ইনডেক্সেই ২০১৭ সালের তুলনায় এবার মশার উপস্থিতি কম। মশার উপস্থিতি ও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা আগের বছরের তুলনায় কম পাওয়া গেছে। তাছাড়া এবার অনেক বেশি সচেতনতামূলক কর্মসূচী চালানো হয়েছে। এ জরিপ মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে। এদিকে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ওয়েবসাইডে দৈনিক মশক নিধন কার্যক্রমে ২৭ আগস্ট ২০১৯ উল্লেখ রয়েছে। মশক নিধন কার্যক্রম স্থিরচিত্রে ২৬ আগস্ট ২০১৯ উল্লেখ রয়েছে।
×