ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একুশের রাতে কুড়িয়ে পাওয়া ‘একুশ’, এলাকা তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

একুশের রাতে কুড়িয়ে পাওয়া ‘একুশ’, এলাকা তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ একুশে ফেব্রুয়ারি রাতের প্রথম প্রহরে চাঁদের মতো ফুটফুটে নবজাতক মেয়ে শিশুটিকে কুড়িয়ে পাওয়া, তাই ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধার্ঘে শিশুটির নামকরণ করা হলো-‘একুশ’। এ নামেই গলাচিপা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেত্রী ওয়ানা মার্জিয়া নিতুর কোলে মেয়ের ¯েœহ আদর ভালোবাসায় বড় হয়ে উঠবে। সবার মুখ উজ্জ্বল করবে। একুশ হবে আগামি প্রজন্মের গর্বিত নাগরিক। এমনটাই প্রত্যাশা সদ্য আরেকবার মায়ের অনুভূতি পাওয়া নিতুর। পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌরসভার তিনবারের নির্বাচিত মেয়র প্রয়াত আবদুল ওহাব খলিফার মেয়ে গলাচিপা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ওয়ানা মার্জিয়া নিতু (৩৭) একুশের প্রথম প্রহরে নেতাকর্মীদের নিয়ে স্থানীয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করে পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের নিজ বাসভবনে ফিরে আসেন। খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েন। বাসায় দু’টি বিড়াল ছানা রয়েছে। প্রথমে মনে করেছিলেন বিড়াল ছানারা কাঁদছে। কিন্তু ঘন্টা খানেক পরেও যখন কান্না থামছে না, তখন স্বামী প্রিন্সকে নিয়ে উঠে পড়েন। দরজা খুলে দেখেন সামনেই পড়ে আছে ফলের প্লাস্টিকের একটি ঝুড়ি। কান্নার উৎস সেখানেই। গিয়ে দেখেন তার মধ্যে নবজাতক একটি মেয়ে শিশু কাঁদছে। তাৎক্ষণিক শিশুটিকে তিনি মায়ের মমতায় কোলে তুলে নেন। ততক্ষণে শুক্রবারের ভোরের আলো ফুটে ওঠে। সদ্যজাত শিশুটিকে নিয়ে ছুটে যান গলাচিপা হাসপাতালে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা সেরে বিষয়টি জিডি আকারে থানা পুলিশকে জানান। স্থানীয় প্রশাসনকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়। ওয়ানা মার্জিয়া নিতু বলেন, ধারণা করা হচ্ছে শিশুটি এক-দু’দিন আগে জন্ম নিয়েছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত শিশুটির মা-বাবাকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বা কেউ দাবিও করেনি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি শিশুটিকে নিজের মেয়ে হিসেবে গড়ে তুলবো। এজন্য আজ রবিবার পটুয়াখালী পারিবারিক আদালতে অভিভাবত্বের জন্য আবেদন জানাব। যেহেতু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়েছি, সেহেতু ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিশুটির ‘একুশ’ নামকরণ করেছি। তিনি আরও বলেন, তার জা বৃষ্টি আখতার সদ্য প্রসূতি। তার বুকের দুধে শিশুটির লালন-পালন হচ্ছে। চিকিৎসকের মাধ্যমে শিশুটির নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিচর্যা করা হচ্ছে। পরিবারের সকলেই শিশুটিকে আপন করে নিয়েছে। তিনি এ শিশুটিকে আল্লাহর নিয়ামত বলেও মনে করেন। এছাড়া প্রকৃত অভিভাবকের খোঁজ চলছে বলেও জানান তিনি। এদিকে শিশুটিকে কুড়িয়ে পাওয়ার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। শত শত মানুষ শিশুটিকে এক নজর দেখার জন্য মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের বাসায় ভিড় জমাচ্ছে। অনেকে উপহার সামগ্রী নিয়েও যাচ্ছে। শিশুটির প্রকৃত মা-বাবাকে নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। এ বিষয়ে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ আখতার মোর্শেদ জানান, থানায় শিশুটির বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে আপাতত শিশুটির দায়িত্ব রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। শিশুটির বাবা-মাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। কেন এবং কি কারণে তারা শিশুটিকে ওই বাসায় ফেলে রেখে গেছে, সে প্রশ্নেরও উত্তর খোঁজার চেষ্টা চলছে।
×