ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাহিদুল ইসলাম

মৃত্যুর জন্য প্রশিক্ষণ ॥ বিচিত্র তথ্য

প্রকাশিত: ১২:৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

মৃত্যুর জন্য প্রশিক্ষণ ॥ বিচিত্র তথ্য

ঘর ভর্তি সার দেয়া অনেকগুলো কফিন। প্রত্যেকটিতে একটি করে লাশ। তবে সেগুলো মুর্দা নয়, সবগুলোই জিন্দা লাশ! অর্থাৎ জীবিত মানুষগুলোকেই কফিনে শুইয়ে রেখে মৃতের অভিনয় করানো হচ্ছে। অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন জীবিত মানুষকে কেন কফিনে শোয়ান হবে? অবাক হলেও এটাই সত্যি। দৃশ্যটি একটি শেষকৃত্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার। ‘ডাইং ফর বেটার লাইফ’ বা ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য মরণ নামক একটি কর্মসূচীর আওতায় এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালিত হচ্ছে। পরিচালনা করছে দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী সিউলের হাওন হিলিং সেন্টার নামক একটি প্রতিষ্ঠান। কর্মশালার উদ্দেশ্য জীবিত মানুষকে মৃত্যুর অনুভূতি প্রদান। যেন মানুষ একটি শুদ্ধ জীবনযাপন করতে পারে। প্রোগ্রামটি দক্ষিণ কোরিয়ায় দারুণ সাড়া ফেলেছে। ইতোমধ্যে পঁচিশ হাজার মানুষ এতে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছেন। চো জাই হি তেমনই একজন নিবন্ধনকারী। তার মতে আপনি যখন একবার শেষকৃত্য অনুভব করতে পারবেন তখন জীবনে নতুন ধারা শুরু হবে। কর্মসূচীর যৌক্তিকতা সম্পর্কে পঁচাত্তর বছর বয়সী এই ভদ্রলোক এমনটাই মনে করেন। তবে প্রোগ্রামে অংশ নেয়া সকলেই চো-এর মতো বৃদ্ধ নয়। ছেলে বুড়ো সবাই আসছেন। ১০ মিনিটের এই প্রোগ্রামে তারা অংশ নিয়ে জীবন সম্পর্কে নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা নিতে দারুণ আগ্রহী! কর্মশালায় অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণ চোই জিন কিউয়া বলেন, আমি যখন কফিনে শুয়েছিলাম তখন আমার মধ্যে জীবন সম্পর্কে নতুন এক বোধের উপলব্ধি হয়েছে। আগে আমি অনেক উচ্চাভিলাষী ছিলাম। তবে বর্তমানে আমি আর আগের মতো নেই। এখন আমি লেখাপড়া শেষ করে চাকরির বদলে ছোটখাটো ব্যবসা করে জীবন পার করতে চাই। আসান মেডিক্যাল সেন্টারের প্যাথলজি বিভাগের পরিচালক ইউ ইয়ুন সিল বলেন, তরুণ বয়সেই মৃত্যু সম্পর্কে সকলের উপলব্ধি আসা উচিত। এতে জীবন অনেক শুদ্ধভাবে চালনা করা সম্ভব। এছাড়া তার মতে দক্ষিণ কোরিয়ায় যেভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে তাতে প্রত্যেকেরই মৃত্যুর পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এত মানুষের অংশগ্রহণ ও বক্তব্যের পরও এই ধরনের কর্মশালার আদৌ যৌক্তিকতা আছে কিনা এমন প্রশ্নও উঠেছে। এ প্রসঙ্গে হাওন হিলিং সেন্টারের পরিচালক জিওং ইয়ন মুন বলেন, আমাদের কর্মশালা পরিচালনার উদ্দেশ্য জীবিত মানুষকে শেষকৃত্যের স্বাদ দেয়া। যেন মানুষ তার জীবনকে একটি উপহার হিসেবে নেয়। যেন তারা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন সকলের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে একটি শুদ্ধ জীবনযাপন করতে পারে। তাছাড়া আমরা ওই সকল মানুষকে কর্মশালার জন্য বেছে নেই যারা জীবনে কোন না কোন সময় আত্মহত্যা করতে চেয়েছেন। আমরা তাদের বোঝাতে চাই, জীবনে যে ধরনের পরিস্থিতিই আসুক না কেনÑ তাকে উপভোগ করতে জানতে হবে। জীবন শেষ করে দিও না। কারণ বর্তমানই সুখ।
×