ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাদের মোল্লাকে শহীদ বলায় সংগ্রাম অফিসের সামনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

  কাদের মোল্লাকে শহীদ বলায় সংগ্রাম অফিসের সামনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় দৈনিক সংগ্রাম অফিসের সামনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ করেছে স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনসহ সাধারণ মানুষ। এ সময় চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। ঘটনার বিষয়ে জানতে পত্রিকা সম্পাদক সাংবাদিক আবুল আসাদকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ ঘটনায় রাতে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছিল। শুক্রবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের ওই সংগঠনটির ব্যানারে শত শত মানুষ রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় সংগ্রাম কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তারা কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে শহীদ আখ্যা দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করায় বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভকারীরা পত্রিকাটির কয়েকটি কপি পুড়িয়ে দেন। এক পর্যায়ে নিরাপত্তার কারণে পত্রিকারটি মেইন গেট তালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানান, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে শহীদ বলার মাধ্যমে তারা দেশের শহীদদের অবমাননা করেছে। দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করেছে। তারা সরকারীভাবে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়ার দাবি করেন। পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহমুদ জানান, বিজয়ের মাসে একজন রাজাকার, দেশদ্রোহী কাদের মোল্লাকে সংগ্রাম পত্রিকা শহীদ অভিহিত করে সংবাদ প্রকাশ করে। তারই প্রতিবাদে পত্রিকা অফিসটির সামনে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এমন ঘৃণ্য কাজের জন্য পত্রিকার সম্পাদককে পত্রিকার মাধ্যমেই জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রয়েছে। এ বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জনকণ্ঠকে বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে শহীদ আখ্যা দিয়ে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তারই জেরে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ব্যানারে সংগঠনটির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন সংগ্রাম অফিস ঘেরাও করে। তারা সেখানে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে সেখানে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পত্রিকাটির সম্পাদক আবুল আসাদকে হেফাজতে আনা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। ভাংচুরের সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। ঢাবিতে বিক্ষোভ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিবাদে ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকা পুড়িয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে এ কর্মসূচী পালিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজিব, সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক রানা হামিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নাজিম উদ্দীন, সাবেক উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ইমদাদ হোসেন সোহাগ ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম রাকিব সিরাজী প্রমুখ। ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজিব বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের নেতা কাদের মোল্লাকে শহীদ বলার মধ্য দিয়ে এই পত্রিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে। এটা আজকে নতুন নয়। তারা বারবারই আমাদের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করেছে। এ ঘটনায় আমরা ছাত্রলীগ পরিবার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। রানা হামিদ বলেন, সুপ্রীমকোর্ট যেখানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে এই ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করেছে সেখানে এই পত্রিকার সম্পাদক কিভাবে তাকে ‘শহীদ’ বলার দুঃসাহস দেখান। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই পত্রিকার সম্পাদক এবং রিপোর্টারের শাস্তি দাবি করছি। পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। গত শুক্রবার ‘শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার রক্ত বাংলাদেশে দ্বীনের বিজয়কে তরান্বিত করবে’ শিরোনামে একটি সংবাদ পরিবেশন করে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা। এর আগের দিন ‘শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ’ শিরোনামে আরেকটি সংবাদ ছাপায় পত্রিকাটি। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরোধের দায়ে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
×