ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ কুমারখালী মুক্ত দিবস

প্রকাশিত: ০৯:১০, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯

আজ কুমারখালী মুক্ত দিবস

অনলাইন রিপোর্টার ॥ আজ ৯ ডিসেম্বর কুমারখালী মুক্তদিবস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল ২৫ মার্চের কালোরাতের পর থেকে সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জনপদ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতেও শুরু হয় পাক হানাদার, রাজাকার বাহিনীদের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষের প্রতিরোধ-সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শহিদ গোলাম কিবরিয়া কুমারখালী, খোকসা অঞ্চলের প্রধান সংগঠক হিসেবে কাজ করেন, তার সহযোগি ছিলেন নুর আলম জিকু, আব্দুল মজিদ, আঃ বারী, আব্দুল আজিজ খান, রহিম জোয়ারদার, জাহিদ হোসেন জাফর প্রমুখ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কাঙ্খিত বিজয় অর্জিত হয় ১৬ ডিসেম্বর। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এক এক করে প্রতিরোধের মুখে শত্রু মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা। তেমনি কুমারখালীতে এনারগান (এসএলআর) ফুটিয়ে কুমারখালী থানা আক্রমণের মধ্যে চুড়ান্তভাবে শত্রম্নমুক্ত করে বীরমুক্তিযোদ্ধারা। কুমারাখালীতে দখলদার পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের হটাতে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকারদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। এরমধ্যে বংশীতলার যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এরই ধারাবাহিকতায় কুমারখালী শহরে ৭ ডিসেম্বর তৎকালীন সময়ে শহরের কুণ্ডুপাড়ায় অসিত ঘোষের বড়িতে(অসিত ঘোষ ভারতে চলে যান সেসময়) রাজাকার ক্যাম্প করে বিভিন্ন অপকর্ম, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট চালাতে থাকে। বিভিন্ন গ্রুপে রাজাকার ফিরোজ-খুরশিদ, গোলাম রসুল, সাদী, গালিবদের ক্যাম্পে আক্রমন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। একদিকে কমান্ডার বদর ডাঁশা-সান্দিয়ারা(বঙশীতলা যুদ্ধের সদস্য) এর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা, কুষ্টিয়া থেকে মুক্তিযোদ্ধা রনজু বাহিনীর নেতৃত্বে অনেক মুক্তিবাহিনী, হাবীব বাহিনীর নেতৃত্বে আ: গনি, মনজু সাত্তার সহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা বারিক খানের নেতৃত্বে সিরাজ খান সহ অনেকেই, অন্যদিকে মাহাতাব, কামাল সহ অনেক মুক্তিযোদ্ধারা কুন্ডুপাড়ার এই ক্যাম্পে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয়। প্রায় ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধচলাকালীন সময়ে কুষ্টিয়া থেকে পাক বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি টের পেলে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে কেউ হাসিমপুর, কেউবা গড়াই নদী পার হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পাক বাহিনীর হানাদাররা বোমা বিস্ফোরণ করে! এতে কুণ্ডুপাড়া কাঞ্চন সাহা, দরগাবাড়ির তোসাদ্দেক হোসেন ননী মিয়া, তেবাড়িয়ার আজিজ মোল্লা সহ অনেককেই নির্মমভাবে হত্যা করে রাজাকার ও পাকবাহিনীরা। অন্যদিকে বাটিকামারার মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকের বাবাকে সেসময়য়ে কুমারখালী থানায় যেতে বাম দিকের দোকানে (যেখানে এখন মটকা বিক্রি হয়) হত্যা করে। এরপর রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের অনেককেই হত্যা করেই ক্ষান্ত হননি বাড়িঘর পোড়ানো শুরু করেন। দুর্গাপুরে ৭১এর স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক রেজাউল করিম হানান এর বাড়ি পুড়িয়ে পরে ডাঃ আব্বাস উদ্দিনের পুরোবাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে(সেসময় বাড়িতে কেউ না থাকায় শুধু ডা: আব্বাস উদ্দিনের পাগল ও অসুস্থ' পিতা আফসার সেখ ছিল বাড়িতে) এরপর রাজাকাররা রেজাউল করিম হান্নান ও আ.স.ম ওয়াহেদ পান্নাকে কে ধরতে না পেরে তার বাড়িসহ ও বাটিকামারা রাজ্জাকের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দেয়। এর ঠিক পরেরদিন ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা আবারো সংগঠিত হয়ে কুমারখালী শহরের রাজাকারদের ক্যাম্পে আক্রশন করে চতুর্দিক থেকে। মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুর আর রহমানের নেতৃত্বে আতিয়ার রহমান স্বপন(কুমারখালী শহরের কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা), মগবুল হোসেন, ধীরেন, জহুর, টগর, মিজান বিশ্বাস দুর্গাপুর মমিন খন্দকারের বাড়ির ভেতর থেকে কুমারখালী থানা পাক হানাদার ক্যাম্পে, অন্যদিকে বদর বহিনী নদীপাড়া হয়ে কুন্ডুপাড়ার রাজাকার ক্যাম্পে, বারিকখানের নেতৃত্বে বাটিকামারা হয়ে উপজেলা পরিষদ এলাকায়, ডেপুটি কমাণ্ডার মুক্তিযোদ্ধা আঃ রাজ্জাকের নেতৃত্বে, পরিমল কুমার বিশ্বাস, মনজু ছাত্তারের নেতৃত্বে, হাবীব কমান্ডারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাক-বাহিনীদের ও রাজাকার, আলবদরদের পিছু হটাতে বাধ্য করে। সেদিন চড়াইকোল স্টেশনে ট্রেনের দুটি বগির চেন খুলে দিয়েছিল মুক্তিরযোদ্ধা আঃ গনি সহ অনেকেই। যার ফলে অনেক পাকবাহিনীর সদস্যরা কুমারখালী আসতে পারেনি। এদিকে কুমারখালী শহর প্রায় দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত হবার খবর শুনে সব রাজাকাররা পালিয়ে যায়। পরদিন ৯ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীরা, রাইফেল, এসএলআর ফুটিয়ে কুমারখালী থানায় গিয়ে বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করে কুমারখালী শহর মুক্ত ঘোষনা করে। একে একে পুরো দেশ শত্রু মুক্ত হতে থাকে। কুষ্টিয়া শহর মুক্ত হয় ১১ ডিসেম্বর। এভাবে চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত ১৬ ডিসেম্বর। ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভম, ৪ লক্ষ শিশুর তরতাজা জীবনের বিনিময়ে ও কোটি-কোটি মানুষের আতংকিত যাপিত জীবনের নৃশংস ত্যাগ-তিতীক্ষায় নয় মাসের কষ্টে কেনা আমাদের এ স্বাধীনতা। আর আমরাই অর্জন করেছি তা....ধরে রাখার দায়ও আমাদেরই।
×