ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইডেন টেস্টের প্রথম দিনেই বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ২৩ নভেম্বর ২০১৯

 ইডেন টেস্টের প্রথম  দিনেই বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়

স্পোর্টস রিপোর্টার কলকাতা থেকে ॥ ইন্দোর টেস্টে যেমনটি হয়েছে। ইডেন টেস্টে তারচেয়েও যেন খারাপ অবস্থা বাংলাদেশের। করুণ দশায় পড়ে গেছে। দিবারাত্রির টেস্ট। এসজির গোলাপি বলে খেলা। আগে থেকেই একটা ধাঁধা ছিল। সেই ধাঁধায়, ইশান্ত শর্মার (৫/২২) গতি আর বাউন্সের সামনে পড়ে প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। বিরাট কোহলির অপরাজিত ৫৯ ও চেতেশ্বর পুজারার ৫৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান করে ৬৮ রানে এগিয়ে যায় ভারত। এক সেশন কোন রকমে শেষ করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনের শুরু হতে ইনিংস গুটিয়ে যায়। মুমিনুল, মিঠুন, মুশফিকের মতো ব্যাটসম্যানরা যদি রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে যান। সর্বোচ্চ স্কোর যদি সাদমান ইসলামের ২৯ রান হয়। তাহলে আর কি করার থাকতে পারে। সাদমান, মাথায় আঘাত পেয়ে টেস্ট থেকে ছিটকে পড়া লিটন কুমার দাস (২৪) ও একই কারণে ছিটকে পড়া আরেক ব্যাটসম্যান নাঈম হাসান (১৯) ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যানই যখন দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি, তখন শত রান করাই তো কষ্টসাধ্য ছিল। তাও তো এক শ’ রান অতিক্রম করে বাংলাদেশ। তবে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে সর্বনিম্ন রান করে বাংলাদেশ। ভারত ২ উইকেট দ্রুতই হারায়। তবে ১৫ হাজার প্রথম শ্রেণীর রান করা চেতেশ্বর পুজারা ও বিরাট কোহলি মিলে দলকে অনায়াসে ১০০ রানে নিয়ে যান। পুজারা এরপর আউট হন। পরে কোহলির সঙ্গে অজিঙ্কা রাহানে মিলে দিন শেষ করেন। যেখানে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যানও হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি। সেখানে কোহলি ও পুজারা হাফ সেঞ্চুরি করেন। দিনের আলো যাওয়ার পর কৃত্রিম আলোয় ব্যাটসম্যানদের অনেক অসুবিধা হবে। সেই কথাই শোনা গেছে। কিন্তু ভারত ব্যাটসম্যানরা কি অসাধারণ ব্যাটিং করেন। যদিও প্রথম টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে (১৪) দ্রুতই আউট করা গেছে। ১ উইকেট হারিয়ে ৩৫ রান করে যে ভারত দ্বিতীয় সেশন শেষ করল, আরেকটি উইকেট পড়তে পারত। কিন্তু আবু জায়েদ রাহীর বলে রোহিত শর্মার ক্যাচটি ফাইন লেগে ধরতে পারেননি আল-আমিন হোসেন। আল-আমিনই আগারওয়ালকে আউট করেছেন। কিন্তু ১২ রানে থাকা রোহিতের ক্যাচটি ধরতে পারেননি। তবে ভাগ্য ভাল। খুব বেশিক্ষণ রোহিত টিকতে পারেননি। এবাদত হোসেন অসাধারণ এক সুইং বল করে রোহিতকে (২১) এলবিডব্লিউ করে দেন। ‘রিভিউ’ নিয়েও বাঁচতে পারেননি রোহিত। চেতেশ্বর পুজারা ও বিরাট কোহলি মিলে সাবলীলভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন। দুইজন মিলে ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। মনে হচ্ছিল প্রথমদিন আর কোন উইকেটই যাবে না। কিন্তু দুইজনের জুটি যখন ৯৪ রানে যায়, দলের স্কোর হয় ১৩৭ রান, তখন ৫৫ রান করা পুজারাকে আউট করে দেন এবাদত। জুটি ভাঙ্গেন। ততক্ষণে কোহলিও হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন। পুজারা আউটের পর অজিঙ্কা রাহানেকে নিয়ে পথ চলেন কোহলি। দলের স্কোরবোর্ডে দেড় শ’ রানও যোগ হয়। যখন ১৭৩ রান হয় তখন কোহলি (৫৫*) ও রাহানে (২৩*) অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়তে থাকেন। দিনের খেলাও শেষ হয়। বিরাট কোহলি আর মুমিনুল হক টস করতে মাঠে যাচ্ছেন। টস করতে দাঁড়িয়েছেন। পুরো স্টেডিয়াম যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। সবাই ঐতিহাাসিক টসে কে জিতবেন সেদিকেই নজর দিচ্ছেন। টস শূন্যে ভাসল। পড়ল। টস জিতলেন মুমিনুল হক। সবাই এমন চিৎকার করতে লাগলেন যেন কোহলি টস জিতেছেন। তখনই বোঝা গেল স্টেডিয়ামে বেশিরভাগ দর্শক নিজ দল ভারতকে সমর্থন করতে আসলেও খেলাটা আসলে উপভোগ করতে এসেছেন। তবে শুরুতে বাংলাদেশ দলের দর্শক এবং ক্রিকেটপ্রেমীরা হতাশই হয়েছেন। টস জিতে যে মুমিনুল ব্যাটিং নিয়েছেন। তার ফলও ভোগ করতে হয়েছে। ছয় ওভার পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু এরপরই সব ওলট পালট হতে শুরু করে দেয়। ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ শামির গতি, বাউন্স আর সুইংয়ে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন। ইমরুল কায়েস (৪) একবার রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচেও আবার এলবিডব্লিউ হন। কিছুক্ষণ না যেতেই রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরেন মুমিনুল হক ও মোহাম্মদ মিঠুন। মুশফিকুর রহিমও একই পথের পথিক হন। গুরুত্বপূর্ণ তিন ব্যাটসম্যান যখন কোন রান না করেই আউট হন, তখন দলের কি করুণ দশা হতে পারে তা বোঝা হয়ে যায়। দলের ২৬ রানেই ৪ উইকেট খতম হয়ে যায়। সাদমান ভরসা হয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু দলের ৩৮ রান হতেই সাদমানও (২৯) যখন সাজঘরে ফিরেন, তখন কাহিল অবস্থা হয়। মাহমুদুল্লাহ-লিটন জুটিটা ভাল এগিয়ে চলতে থাকে। কিন্তু যে রকম বোলিং হতে থাকে তাতে উইকেটে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ে। মাহমুদুল্লাহ (৬) তাই বেশিদূর যেতে পারেননি। তাতে করে ৬ উইকেট পড়েও যায়। শামির বাউন্স বল একবার লিটনের মাথায় আঘাত হানে। ঠিক হওয়ার পর আবার ব্যাটিং করতে থাকেন লিটন। কিন্তু ইশান্তের বলটি আবার মাথায় আঘাত হানলে এবার স্বেচ্ছায় অবসর নিতে হয় লিটনকে। বাউন্স, গতি আর সুইংয়ের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকা লিটন ২৪ রান যখন করেন তখনই মাথায় বল লাগে। স্বেচ্ছায় অবসর নেন। তখন ২১.৪ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৭৩ রান করে বাংলাদেশ। লিটন হাঁটা ধরলে সেশনও শেষ হয়। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালেও যেতে হয়েছে লিটনকে। সিটি স্কিনও করানো হয়। সব ঠিক আছে। দ্বিতীয় সেশন শুরু হওয়ার পর লিটন আর ব্যাট হাতে নামতে পারেননি। নাঈম হাসানের সঙ্গে এবাদত হোসেন ব্যাট করতে নামেন। তারা বোলার। স্বাভাবিকভাবেই ভারতের এত শক্তিশালী বোলারদের সামনে টিকে থাকতে পারবেন না। এবাদত (১) দ্রুতই আউট হয়ে যান। এরপর ব্যাট হাতে নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরুতে তিনি একাদশে ছিলেন না। কিন্তু আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী যদি কারও মাথায় আঘাত লাগে, তিনি আর খেলতে না নামতে পারেন, তাহলে একজন ক্রিকেটারকে নামানো যাবে। তবে ‘কনকাশন’ সিস্টেমে পরিবর্তিত ক্রিকেটার শুধু তার মতোই খেলতে পারবেন। তাই মিরাজ নামার সুযোগ পান। লিটনের পরিবর্তে মিরাজ খেলতে পারেন। শুধু ব্যাটিংটাই করতে পারবেন। মিরাজ নামলেন ঠিক। কিন্তু ৮ রানের বেশি করতে পারলেন না। যেভাবে উইকেট শুরুতে পড়তে থাকে, তাতে ১০০ রান হবে কিনা তা নিয়েই শঙ্কা ছিল। শেষ পর্যন্ত শতরান স্কোরে যোগ করা গেছে। দলের ৯৮ রানে মিরাজ আউট হয়ে যান। তবে নাঈম ও আল-আমিন হোসেন মিলে বাংলাদেশকে ১০০ রানে নিয়ে যান। যখন ১০৫ রান হয়, তখন নাঈমও (১৯) সাজঘরে ফিরেন। ১ রান যোগ হতেই আবু জাযেদ রাহীও আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশ ১০৬ রানেই অলআউট হয়ে যায়। ইশান্ত শর্মা একাই ৫ উইকেট শিকার করে নেন। দ্বিতীয় সেশনে মাত্র ৯ ওভার খেলতে পারে বাংলাদেশ। নাঈমও মাথায় ব্যথা পান। লিটনের সঙ্গে নাঈমও ছিটকে যান। ‘কনকাশনে’র দরকার পড়ে। প্রথমবারের মতো এমনটি হলো, কোন টেস্টে দুই ক্রিকেটারের পরিবর্তে দুই ক্রিকেটারকে খেলাতে হলো। নাঈমও হাসপাতালে যান। তার এমআরআই হয়। সব ঠিক আছে। তবে তার পরিবর্তে তাইজুল ইসলাম বোলিং করেন। যে রান করে বাংলাদেশ তা ২০০০ সালে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ রানের পর ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান হয়। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ভারতের বিরুদ্ধে সর্বনিম্ন রান করে বাংলাদেশ। তাতে টেস্টে যে কী হাল হতে পারে, তাই যেন আলামত মিলছে।
×