ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

৩শ’ মিলে লবণ উৎপাদন আরও বৃদ্ধি

গুজব ও হুজুগ শুরুতেই বিনাশ

প্রকাশিত: ১১:১৫, ২১ নভেম্বর ২০১৯

গুজব ও হুজুগ শুরুতেই বিনাশ

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আকস্মিকভাবে দেশে লবণ সঙ্কট এবং এর বাড়তি মূল্য আদায়ে ব্যর্থ দৌড় ছিল সম্পূর্ণ গুজবের ওপর ভিত্তি করে। আর এ গুজবকে নিয়ে হুজুগে চলে যায় দেশের বিভিন্ন এলাকার কতিপয় সাধারণ মানুষ। গত সোমবার রাতে লবণ নিয়ে গুজব সৃষ্টির পর মঙ্গলবার অনেকের হুজুগে নেমে পড়ার রেশ কেটে গেছে। সরকারের পাশাপাশি দেশের মিডিয়া সজাগ ভূমিকা পালনের পর বুধবার একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ঘটনাটি পুরোপুরিই গুজব। এদিকে দেশের যে ৯ অঞ্চলে লবণের মিল রয়েছে সেসব মিলে উৎপাদন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির। তিনি জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে দেশজুড়ে তিন শতাধিক মিলে উৎপাদন অর্থাৎ পরিশোধন কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে চলছে। এছাড়া লবণের এ বছরের মৌসুমও শুরু হয়ে গেছে। উৎপাদন উঠে আসার সময়ও একেবারে আসন্ন। আগামী ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে লবণ মাঠ থেকে গুদামে উঠবে। অপরদিকে দেশে চাহিদার বেশিরভাগ লবণ উৎপাদন হয়েছে গেল মৌসুমে। অর্থাৎ ১৮ লাখ টনেরও বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছে। এর পাশাপাশি কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ী মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে গত দুবছরে এনেছে আরও প্রায় ১৯ লাখ টন লবণ। এসব লবণ এসেছে নানা নামে। সোডিয়াম সালফেট নামে এসেছে সোডিয়াম ক্লোইরাইড। এর পাশাপাশি বন্ড লাইসেন্সের মাধ্যমে এসেছে বিপুল পরিমাণ। অবশ্য এ অবৈধ তৎপরতা এখন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু চলে আসা লবণের কারণে দেশীয় লবণ অবিক্রীত থেকে এখনও গুদামে রয়েছে ৬ লাখ টনেরও বেশি। এ অবস্থায় চলে এসেছে নতুন মৌসুম। মাঠ থেকে উঠে আসবে উৎপাদনের লবণ। সঙ্গত কারণে লবণের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনা নেই বলে বাজার সূত্রে ধারণা দেয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের উপকূলীয় বেল্ট, কক্সবাজারে নাপিতখালির ইসলামপুর, চট্টগ্রাম মহানগরী এবং পটিয়া, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং খুলনা এ ৯ অঞ্চলে তিন শতাধিক লবণ মিলের অস্তিত্ব রয়েছে। এসব মিলে মাঠের লবণ ক্রাশ হয়ে বাজারে চলে যায়। গুজবের কারণে মূল্য যাতে বৃদ্ধি না পায় সে জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার অঞ্চলে মিল মালিকদের পক্ষে খোলা বাজারে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা হারে লবণ বিক্রির কর্মসূচী শুরু করা হয়েছে বুধবার থেকে। এক্ষেত্রে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যা পেঁয়াজের ক্ষেত্রে জনসাধারণের হুমড়ি খেয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। চট্টগ্রামের মিল মালিকদের সূত্রে জানানো হয়েছে, এ অঞ্চলে প্রতিদিন গড়ে যে ৬ হাজার টন লবণ প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে ছাড়া হতো তা এখন প্রায় দ্বিগুণে উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে লবণের মজুদ প্রায় ৭ লাখ টন, যা টানা তিন মাস চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এ অবস্থায় নতুন মৌসুম যেহেতু চলে এসেছে সেক্ষেত্রে লবণ নিয়ে গুজব ও হুজুগ সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু মূল্য বৃদ্ধির কোন সুযোগ নেই। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ে চাষীরা লবণের প্রকৃত মূল্য না পেয়ে এমনিতেই দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে। চাষীরা আশা করছেন, সরকার এবার আর ইতোপূর্বেকার মতো বিদেশ থেকে লবণ আমদানির কোন সুযোগ দেবে না। এতে চাষীরা উপযুক্ত মূল্য পেয়ে লাভবান হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, মাঠপর্যায় থেকে লবণ উৎপাদিত হওয়ার পর কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানোর পর যে মূল্য নির্ধারিত হয় তা জনসাধারণের কাছে সহনীয় হিসেবে বিবেচিত। এ অবস্থায় বিপুল পরিমাণ লবণ উৎপাদিত হওয়ার পর নতুন মৌসুমের আগে প্রায় সাত লাখ টন মজুদ থকার বিষয়টি সকলের কাছে ইতিবাচক একটি দিক হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। তবে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের লবণ আমদানি করে এনে তা মানুষের খাদ্যোপযোগী লবণ হিসেবে বাজারে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি দুঃখজনক হিসেবে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। এক্ষেত্রে লবণ মিল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি রয়েছে। দেশীয় লবণ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে শিল্পে প্রয়োজন এমন লবণ ছাড়া অন্য যে কোন ধরনের লবণ আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জোর দাবিও রয়েছে। সূত্র জানায়, পেঁয়াজসহ বেশকিছু ভোগ্যপণ্য এখনও এদেশ আমদানিনির্ভর। ভারত সরকার সম্প্রতি পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণার পর বাংলাদেশের বাজার পরিস্থিতির যে ভয়াল রূপ দেখা গেছে লবণের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটার কোন বিন্দুমাত্র কোন সম্ভাবনা নেই। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে বর্তমানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদনের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। গেল মৌসুমে বিসিকের পক্ষে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ১৬ লাখ টন নির্ধারণ হলেও মাঠ পর্যায়ে থেকে লবণ উঠে এসেছে ১৮ লাখ টনেরও বেশি। মাঠ পর্যায়ের চাষীরা ক্ষতির বদলে লাভবান হওয়ার নিশ্চিত হলে এদেশে লবণ উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বক্তব্য রয়েছে।
×