ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিল মালিকদের সঙ্গে সভা

চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা ॥ খাদ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২১ নভেম্বর ২০১৯

চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা ॥ খাদ্যমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, কারসাজি না থাকলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট আগামী ১০ দিন থাকলেও ঢাকায় চালের বাজারে কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে না। ঢাকায় বিপুল পরিমাণ চাল মজুদ আছে। তিনি বলেন, দেশে চালের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোন কারণ নেই। বিনা কারণে কেউ দাম বাড়ালে তা বরদাস্ত করা হবে না। কোন ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়াতে চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মিল মালিকদের সঙ্গে এক সভার শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী এমন কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, সাত দিনও যদি পরিবহন ধর্মঘট থাকে, ১০ দিনও যদি থাকে, বাবুবাজারে যে স্টক আছে, বড় বড় বাজারে যে স্টক আছে, ঢাকার বাজারে বিন্দুমাত্র সমস্যার কারণ নেই। ৩-৪ দিন কেন, ১০ দিন বন্ধ থাকলেও প্রভাব পড়বে না যদি কেউ কারসাজি না করে। গ্যারান্টি দিলাম। আমার সোজা কথা, পরিবহন শ্রমিকদের ‘স্বেচ্ছা কর্মবিরতিতে’ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরের বেশ কিছু জেলায় দুদিন ধরেই বাস চলাচল বন্ধ ছিল। বুধবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও দূরপাল্লার বাস চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যেই সকাল থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ধর্মঘট। ফলে পণ্য পরিবহনে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ধর্মঘটের আগেই যে খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে, সে কথা মিল মালিকদের সঙ্গে সভার শুরুতে স্বীকার করে নেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোন কারণ নেই। মিল ও বাজার মনিটর করে দেখা গেছে, মজুদের কোন ঘাতটি নেই, আমদানির কোন প্রয়োজন নেই, বরং রফতানি করা জন্য প্রস্তুত আছি। সাধন মজুমদার বলেন, কেউ যেন চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করতে না পারে, সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেও বলা হয়েছে। যদি অনাহূত কেউ চালের দাম বাড়াতে চায়, তাহলে কোনক্রমেই সহ্য করা হবে না, প্রশ্রয় দেয়া হবে না। মন্ত্রী তথ্য দেন, ২৬-২৭ টাকার মোটা চাল খুচরা বাজারে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকার এটা চলতে দেবে না। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পাইকাররা কেজিতে ৫০ পয়সার বেশি লাভ করতে পারেন না, এর বেশি করলে দেশকে আপনারা শোষণ করতে বসেছেন, এটাও সহ্য করা হবে না। খুচরা বাজার আপনাদের কন্ট্রোল করতে হবে মনিটরিং করতে হবে। সরকারী গুদামে ১১ লাখ ১২ হাজার ৬৭৪ টন চাল মজুদ আছে এবং চাল ও গম মিলিয়ে মজুদের পরিমাণ ১৪ লাখ ৫৯ হাজার টন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মজুদের এই পরিমাণ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। চালের দাম আর বাড়বে না- এমন শপথ নিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান সাধন চন্দ্র মজুমদার, যিনি নিজেও পারিবারিক সূত্রে ধান-চালের ব্যবসায় জড়িত। গত ৭ দিনে খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, খুচরা বিক্রেতারা বৃদ্ধি করছে, যা বাড়ানো উচিত হয়নি। খুচরা বাজারে এটি হচ্ছে, চেষ্টা করব দাম যেন আর না বাড়ে। ভোক্তা অধিকার আইনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক সাংবাদিক সাধন মজুমদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মন্ত্রী কথা বললে পরদিন দাম আরও বাড়ে- এমন একটি কথা প্রচলিত হয়েছে সাধারণের মধ্যে। উত্তরে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গতবারের চেয়ে ধানের দাম কম রয়েছে, তাই চালের দামও কম হবেÑ এটাই কথা। কৃষক দাম পাবে না, মধ্যস্বত্বভোগী বেনিফিট বেশি নেবে- এটা চলতে দেয়া যাবে না। দাম যতটা বেড়েছে তা কমতে কতদিন লাগবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে যেন না বাড়ে সেজন্য মিটিং করা হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার জরুরী ভিত্তিতে যাবে। বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাস্কিং মিল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, মিল মালিকদের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ করলাম, কোন কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়নি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ধানের আমদানি কম হওয়ায় দাম বেড়েছে, তবে বাজার এখন স্থির হয়ে আসছে। আমন ধান উঠলে এ রকম হতো না। দিনাজপুরে হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধি স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানান, জেলায় গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করেই সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নি¤œ আয়ের মানুষ। দিনাজপুরের মাঠে আমন ধান পাকার সময় এসেছে। অনেক জায়গায় কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করেছে নতুন ধান। ধান ওঠার এই মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলছেন সাধারণ মানুষ। মিল মালিকরা চালের দাম বৃদ্ধি করায়, বাজারে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা। তবে আড়তদার ও মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই বেড়েছে চালের দাম। পাইকারী চালের বাজার পুলহাটে বুধবার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহ আগে বিআর-২৮ জাতের চাল ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকা কেজিতে। একইভাবে মিনিকেট চাল ৩৮ টাকার স্থলে ৪৫ টাকা, গুটি স্বর্ণ ২৫ টাকার স্থলে ২৮ টাকা, চিকন জাতের জিরা চাল ৯৫ টাকার স্থলে ১০৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রায় সব ধরনের চালে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি এক শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত। কেজিপ্রতি বেড়েছে ২ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। শহরের চক বাজারে চাল কিনতে আসা তুহিন সরকার বলেন, এভাবে চালের দাম বৃদ্ধি পেলে আমরা যারা স্বল্প ও নি¤œ আয়ের মানুষ, তারা বিপাকে পড়েছি। পেঁয়াজের পাশাপাশি সব ধরনের সবজির দাম বেশি। সেগুলো বাদ দিয়ে বাজার করলেও চাল ছাড়া তো আর খাওয়ার মতো আমাদের কিছু নাই। ক্রেতা দৌলত তালুকদার জানান, সামনে আমন ধান উঠার মৌসুম। এই সময়ে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়া অযৌক্তিক। এটি কেন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে সরকারকে। দিনাজপুরের চালের খুচরা, পাইকারী ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, মিলাররা দাম বাড়িয়ে দেয়ায়, বেশি দামে চাল কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাও কমে গেছে বলে তাদের অভিযোগ। তবে আড়তদার ও মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে ধানের যোগান কমে যাওয়ার পাশাপাশি সরকারী ক্রয়মূল্য ঘোষণাতে, বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে চালের দাম। এদিকে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন মিল মালিক গ্রুপের নেতারা। জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন বলেন, কয়েকদিন ধরেই আলোচিত বিষয় চালের দাম। বর্তমানে যে চাল বাজারে রয়েছে, সেটি বোরো আবাদ এবং এই ধান শেষ পর্যায়ে। প্রান্তিক কৃষকের কাছে এই ধান নেই, বড় কৃষকের কাছে আছে। তাছাড়া আমন মৌসুমে ধান ক্রয় সংগ্রহ অভিযানের মূল্য ঘোষণা হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে, ক্ষেত্র বিশেষে বাজারে ২ থেকে ৩শ’ টাকা বেড়েছে। তাই চালের দাম বেড়েছে। আর কয়েকদিন পরই আমন ধান উঠবে।
×