ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সারাবছরের ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২০ অক্টোবর ২০১৯

সারাবছরের ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাবছরের ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। ঢাকার বাইরে নিয়েছে স্থায়ী রূপ। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ওঠানামা করলেও হাসপাতালে দৈনিক চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক হয়ে আসেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত ১৮ বছরে আক্রান্ত মোট ডেঙ্গু রোগীর তুলনায় চলতি বছরের দশ মাসে দ্বিগুণ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সরকারী হিসেবে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৯৮ জন হলেও বেসরকারী পরিসংখ্যানে এই সংখ্যা তিন শতাধিক। মৃত্যু ও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা অব্যাহত থাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে আশঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না ঢাকাবাসী। মঙ্গলবার বিভিন্ন হাসপাতপালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজারের বেশি। এ বছর জানুয়ারি থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বমোট ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৯৩,৩৬১ জন ও ৯১,০৬২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৮৪। এদের মধ্যে ঢাকায় নতুন ভর্তি ৬২ এবং ঢাকার বাইরে ১২২। সারাদেশে বর্তমানে ভর্তি ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু রোগীর সর্বমোট সংখ্যা ১০৫৩ জন। ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪৪৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬১০ জন। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ২৪৬ জনের মৃত্যুর তথ্য প্রেরিত হয়েছে। তাদের মধ্যে আইইডিসিআর ১৫৮ জনের মৃত্যু পর্যালোচনা সমাপ্ত করে ৯৮ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম আরও জানায়, বর্তমানে ঢাকা শহর ছাড়া ঢাকা বিভাগে ৯৮ জন, চট্টগ্রামে বিভাগে ১১৩ জন, খুলনা বিভাগে ২১৩ জন, রংপুর বিভাগে ১৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৯ জন, বরিশালের ৬ জেলায় ৯৮ জন, সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ২ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলায় ২৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে বর্তামানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০৪ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৭৯ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১০ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৫৬ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ জন, রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে ৫ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৮ জন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে নতুন রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৯ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৮ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৭ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২ জন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। ১৮ বছরে ডেঙ্গু রোগী ও মৃতের সংখ্যা ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০০ সালে ৫,৫৫১ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৯৩ জন, ২০০১ সালে ২,৪৩২ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৪৪ জন, ২০০২ সালে ৬,২৩২ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৫৮ জন, ২০০৩ সালে ৪৮৬ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১০ জন, ২০০৪ সালে ৩,৪৩৪ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১৩ জন, ২০০৫ সালে আক্রান্ত ১,০৪৮ জন ও মৃত্যু ৪ জন, ২০০৬ সালে আক্রান্ত ২,২০০ জন ও মৃত্যু ঘটে ১১ জনের। এভাবে ২০০৭ সালে ৪৬৬ জন, ২০০৮ সালে ১,১৫৩ জন, ২০০৯ সালে ৪৭৪ জন এবং ২০১০ সালে ৪০৯ আক্রান্ত হলেও ওই চারটি বছরে কেউ মারা যায়নি। আর ২০১১ সালে ১,৩৫৯ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৬ জন, ২০১২ সালে ৬৭১ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১ জন, ২০১৩ সালে ১,৭৫৯ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ২ জন, ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন আক্রান্ত, ২০১৫ সালে ৩,১৬২ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ৬ জন, ২০১৬ সালে ৬,০৬০ জন আক্রান্ত ও মৃত্যু ১৪ জন, ২০১৭ সালে আক্রান্ত ২,৭৬৯ ও মৃত্যু ৮ জন এবং ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ জন আক্রান্তের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু ঘটে।
×