ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় দলে ইমরুল নিশ্চিত কিন্তু মুস্তাফিজ?

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১৬ অক্টোবর ২০১৯

জাতীয় দলে ইমরুল নিশ্চিত কিন্তু মুস্তাফিজ?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নবেম্বরে ভারত সফর করবে বাংলাদেশ। তিন টি২০ ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে। এ সফরের টেস্ট দলে ইমরুল কায়েসের থাকা অনেকটাই নিশ্চিত। কিন্তু ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান কী টেস্ট দলে থাকতে পারবেন? সবখানে এখন এই আলোচনাই। জাতীয় ক্রিকেট লীগের (এনসিএল) ২১তম আসরের প্রথম রাউন্ডে খুলনার ইমরুল ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েই ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে থাকার দাবিদার হয়ে উঠেছেন। প্রথম রাউন্ডে মুস্তাফিজ খেলতেই পারেননি। বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবেন। এই রাউন্ডে মুস্তাফিজকে পরীক্ষা দিতে হবে। যদি ভালভাবে বোলিং করে পাস মার্ক তুলতে পারেন তাহলেই হয়তো ভারতের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে থাকতে পারবেন মুস্তাফিজ। নয়তো নয়। এনসিএলের প্রথম রাউন্ডে খুলনায় রংপুরের বিরুদ্ধে খুলনা যখন বিপদে তখন ইমরুল হাল ধরেন। নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের নিয়ে এগিয়ে যান। একটা সময় ৩১৯ বলে ১৯ চার ও ৬ ছক্কায় ২০২ রান করে অপরাজিতও থাকেন। একদিকে বাকি ব্যাটসম্যান উইকেটে আসেন। উইকেট আঁকড়ে থাকেন। বল খেলতে থাকেন। আরেকদিকে ইমরুল শুধু যতটা বেশি পারা যায় ব্যাটিং করে রান তুলতে থাকেন। দলের ৩২৮ রানে আব্দুর রাজ্জাক যখন আউট হয়ে যান তখনও সেঞ্চুরি (৯৩ রান) হয়নি ইমরুলের। অথচ এরপর ৪৪ বলে ২ রান করা রুবেলকে নিয়ে কতটা পথ এগিয়ে যান ইমরুল। নবম উইকেটে রুবেলকে নিয়ে ৮৪ রানের জুটি গড়েন, সেখানে রুবেল করেন মাত্র ২ রান। শেষ পর্যন্ত ৪৫৪ রান করে খুলনা। আবার ১ উইকেট হাতে রেখে ইনিংসও ঘোষণা করে। রুবেল দলের ৪১২ রানে আউট হন। তখনও ডাবল সেঞ্চুরি হয়নি ইমরুলের। তখন ১৭৪ রান ছিল। সেখান থেকে ডাবল সেঞ্চুরি করে অপরাজিতও থাকেন ইমরুল। দলের এমন কঠিন সময়ে ইমরুল এমন এক ইনিংস খেলেছেন যা তাকে ২৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া প্রস্তুতি ক্যাম্প ও ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট দলে সুযোগ করে দিতে পারে। এনসিএলের দ্বিতীয় রাউন্ডের মধ্যে অথবা শেষে দল ঘোষণা হতে পারে। ইমরুলকে দলে ভেড়ানো নিয়ে ভাবাও হচ্ছে। বিসিবি সূত্রেই জানা যাচ্ছে, ইমরুলকে নিয়ে ভালভাবেই ভাবনা হচ্ছে। কারণ এত বড় ইনিংস খেলেছেন। ছেলের অসুস্থতায় আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টটিতে বিবেচনায় থাকার পরও দলে থাকতে পারেননি ইমরুল। ছেলের চিকিৎসার জন্য দেশ-বিদেশের হাসপাতালে ছুটতে হয়েছে। এমন কঠিন পরিস্থিতির পর এমন ইনিংস ইমরুলের দক্ষতা এবং যোগ্যতারই প্রমাণ দেয়। আবার ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলা। ভারত শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে অন্যতম। খেলা আবার ভারতে। ১৪ নবেম্বর মধ্য প্রদেশের ইন্দোরে প্রথম ও ২২ নবেম্বর কলকাতায় দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট হারায় ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজকে অনেক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর তাই তো এনসিএলে যে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা দুই রাউন্ড খেলবে, তাতে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। প্রথম রাউন্ডেই নজর কেড়ে নিয়েছেন ইমরুল। অভিজ্ঞ এ ব্যাটসম্যান ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের দলেও টিকে যাওয়ার সম্ভাবনায় ভালভাবেই আছেন। ইমরুল যেখানে প্রথম রাউন্ডেই ঝলক দেখিয়েছেন সেখানে মুস্তাফিজকে নিয়ে আছে সংশয়। খুলনারই পেসার মুস্তাফিজ। প্রথম রাউন্ড খুলনার হয়ে খেলতে ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশে রওনা হয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছেও ফেরত আসতে হয়েছে মুস্তাফিজকে। প্রথম রাউন্ডে খেলার অনুমতি মিলেনি। দ্বিতীয় রাউন্ডে এবার খেলবেন। খুলনায় রাজশাহীর বিরুদ্ধে খেলা। খুলনায় চলেও গেছেন মুস্তাফিজ। বল হাতেও দেখা যাবে ‘কাটার মাস্টার’কে। কিন্তু জৌলুস ছড়িয়ে কী ভারত সফরের টেস্ট দলে থাকতে পারবেন মুস্তাফিজ? টেস্ট খেলার জন্য পুরোপুরি ফিট নন। তাই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্ট দলে মুস্তাফিজকে রাখা হয়নি। ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজে খেলেন। কিন্তু দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে খেলার জন্য এখনও ফিট হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। কোমরে আর গোড়ালিতে চোট নিয়েই দিন অতিক্রম করছেন। এখন অনেকটাই ভাল। লীগে খেলার মতো অবস্থাতেও আছেন। কিন্তু সেই অবস্থা আসলেই কতটা ভাল তাই দেখা হবে। প্রথম রাউন্ডে যখন বাকি ক্রিকেটাররা খেলেছেন তখন বিসিবির ফিজিও জুলিয়ান ক্যালিফাতোর অধীনে ইনজুরির পুনর্বাসনে ব্যস্ত থাকেন মুস্তাফিজ। এবার লীগে খেলার জন্য প্রস্তুত। তবে প্রস্তুত থাকলেই হবে না, নিজেকে প্রমাণ করতে খুলনার বোলিংয়ের সুযোগ মিললেই কম করে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫ ওভার করে বোলিং করতে হবে মুস্তাফিজকে। তাহলেই বোঝা যাবে, টেস্টে বোলিং করার মতো ফিট হয়ে উঠেছেন কিনা মুস্তাফিজ। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু যেমন মুস্তাফিজকে নিয়ে পরিষ্কার করেই জানিয়ে দিয়েছেন, ‘অবশ্যই ওকে (মুস্তাফিজকে) প্রমাণ দিতে হবে। প্রতিদিন ১৫ ওভার করে বল করতে হবে। ফিজিও আমাকে একটি গাইডলাইন দিয়েছে। ওর প্রথম ম্যাচ থেকে খেলার কথা ছিল। যেহেতু ওর গোড়ালিতে একটু সমস্যা আছে, এই কারণে পুরোপুরি চাপ সে নিতে পারছে না। পুরোপুরি চাপ না নিতে পারলে দ্বিতীয় ম্যাচেও খেলতে পারবে না।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘এখন সে রিকভার করেছে। দেখার বিষয় যে সে কত ওভার বল করতে পারে। একটা গাইডলাইন দিয়েছে যে ১৫ ওভারের বেশি বল করতে পারবে না দ্বিতীয় ম্যাচটিতে। সেই হিসেবে আমরা এটি দেখব এবং ওর ফিটনেসের ব্যাপারে চিন্তা করব। এক এক ইনিংসে পার ডে ১৫ ওভার পর্যন্ত করতে পারবে।’ এনসিএলে নিজেকে ফিট প্রমাণ করলেই কী ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে খেলবেন মুস্তাফিজ? এমন প্রশ্নে নান্নু জানান, ‘এটা পুরোপুরি টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। মাঠে আমরা কাজ করি না। ফিটনেস ট্রেইনার, বোলিং কোচ আছে, এরাই কিন্তু আপডেটটি দিবে। ও কতটুকু বোলিং করতে পারবে, ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারবে কিনা।’ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টের দলে ইমরুল ও মুস্তাফিজের মধ্যে কেউই ছিলেন না। ভারত সফরের টেস্ট দলে থাকতে হলে মুস্তাফিজকে এনসিএলে পরীক্ষা দিতে হলেও ইমরুল যে ডাবল সেঞ্চুরির অসাধারণ ইনিংসটি খেলেছেন আবার অভিজ্ঞতাও আছে, তাতেই ইন হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু মুস্তাফিজকে এনসিএলের দ্বিতীয় রাউন্ডে পরীক্ষায় নামতেই হচ্ছে। এ পরীক্ষায় পান করার ওপরই মুস্তাফিজের ভারত সফরের টেস্ট দলে থাকা না থাকা নির্ভর করছে।
×