ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএনসিসির ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচ মার্কেট ভবন ভাঙ্গা হচ্ছে না

প্রকাশিত: ১২:০১, ১৬ অক্টোবর ২০১৯

ডিএনসিসির ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচ মার্কেট ভবন ভাঙ্গা হচ্ছে না

মশিউর রহমান খান ॥ অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে ঘোষণা করার দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছরেও ভাঙ্গা হচ্ছে না ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) পাঁচটি বিশাল মার্কেট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশ আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃক অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে এসব ভবন এখনও ভাঙ্গছে না ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। কবে নাগাদ এসব ভবন ভাঙ্গা হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কেউ। ভবনগুলো হচ্ছে মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচা ও পাকা মার্কেট, গুলশান-২ এ গুলশান কাঁচা মার্কেট, (উত্তর) গুলশান- ১ এ গুলশান পাকা মার্কেট (দক্ষিণ) কাওরানবাজার কাঁচা মার্কেট (কিচেন মার্কেট), কাওরানবাজার ১নং ভবন মার্কেট, কাওরানবাজার ২ নং ভবন মার্কেট, কাওরানবাজার আড়ত ভবন ও রায়ের বাজার মার্কেট। এসব ভবনে বর্তমানে বেশ কিছু ব্যবসায়ী অতি ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কারও কোন কথাই না শুনে ও সিটি কর্পোরেশনের শত সহস্র বাধা আর দুর্ঘটনার কথা বারবার শোনার পরও এসব ভবন থেকে কোন ব্যবসায়ীই প্রতিষ্ঠান সরাতে চাচ্ছেন না। এদিকে ভবনগুলো ভাঙ্গার জন্য ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ বোর্ড মিটিং করে রেজুলেশন করে এসব ভবন ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিলেও শুধু গাবতলীর আমিনবাজার ট্রাক টার্মিনাল ভবন ভেঙ্গেই ক্ষান্ত হয়ে পড়েছে। বাকি পাঁচটি মার্কেট ভবন কখন কবে ও কিভাবে ভাঙ্গা হবে সে বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ রয়েছে ডিএনসিসি। তবে অপর একটি সূত্র জানায়, মার্কেট ভবন না ভাঙ্গা হলেও ভাঙ্গার পর এসব স্থানে কোন প্রকারে আধুনিক স্থাপনা বা মার্কেট নির্মাণ করা হবে তা নিয়ে গবেষণা করছে ডিএনসিসি। এমনকি নক্সা তৈরিরও পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। যা অনেকটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার মতো অবস্থা। এদিকে এ সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত জানাতে ডিএনসিসির কোন কর্মকর্তা মুখ খুলতে পর্যন্ত নারাজ। অপরদিকে গত ৬ মাস যাবত এসব ভবন ভাঙ্গার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। যে কোন সময় ভাঙ্গা হবে। ছয় মাস পার হয়ে গেলেও তেমন কোন উন্নতি চোখে পড়ছে না। এদিকে জরাজীর্ণ এ ভবনগুলো ধসে পড়ে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এসব ভবন ভেঙ্গে নতুন করে আধুনিক ব্যবসার উপযোগী মার্কেট নির্মাণ করে ডিএনসিসির আয় বৃদ্ধির কথা থাকলেও নানা বাধার মূখে এখন পর্যন্ত মার্কেট ভবনগুলোতে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনাকারীদেরই সরাতে সক্ষম হচ্ছে না ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন না ভাঙ্গায় এসব মার্কেট আদৌ ভাঙ্গা হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমনকি শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শুধু এই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ লেখা সম্বলিত নোটিস দিয়েই ক্ষান্ত ডিএনসিসি। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, অতি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ঘোষণার দীর্ঘ ছয় বছর পর পাঁচটি মার্কেট ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিলেও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তেমন একটা মনোযোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ থেকে বেশ কয়েকবার এসব মার্কেট ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিলেও নানা বাধার মুখে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ফিরে আসতে বাধ্য হয় ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ। সূত্র জানায়, চলতি বছরের এপ্রিলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক গঠিত সিটি কর্পোরেশনের কনডেমনেশন কমিটি এসব ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করার অনুমোদন প্রদান করে। এ সময় উত্তর সিটিকে বলা হয়, এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে এসব ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। একইসঙ্গে অতি শীঘ্রই মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃক পরীক্ষার পর মার্কেটগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণের দোহাই দিয়ে গত ৬ বছরেও এসব ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, এসব মার্কেট ভবনের কোন কোনটির উপরের ছাদে বাঁশ দিয়ে ঠিকা দিয়ে রাখা হয়েছে। পাকিস্তান আমল ও এরশাদ সরকারের আমলে তৈরি হওয়া এসব ভবনের বেশিরভাগই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ছয়টি মার্কেট ভবনের কোন কোনটি ১৯৬২ সালে নির্মিত। এসব মার্কেট থেকে সিটি কর্পোরেশন কোন প্রকার রাজস্বও পর্যন্ত আদায় করে না। এসব মার্কেটে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নির্বিঘেœ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। যে কোন সময় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কায় সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ গত ৬ মাস আগে এসব ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তা ভাঙ্গার কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানানো হয়। এমনকি ছয়টি মার্কেট ভবন ভাঙ্গার জন্য ডিএনসিসি বোর্ড সভায় রেজুলেশন করে তা পাস করে ও গাবতলী ট্রাক টার্মিনাল ভবনটি ভাঙ্গাও হয়। এরপরই থেমে যায় মার্কেট ভাঙ্গার কাজ। সূত্র জানায়, বিভাগীয় কমিশনারকে আহ্বায়ক করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিতে জেলা প্রশাসক, মেয়রের প্রতিনিধি একজন কাউন্সিলর সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ও সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে ৭ সদস্যের কমিটি এসব ভবনকে পরিত্যক্ত করে দ্রুত এসব ভবন ভাঙ্গাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দীর্ঘ ছয়বছর ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ এসব ভবন ভাঙ্গতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। মেয়র আতিকুল ইসলাম নির্বাচিত হওয়ার পর এসব ভবনের কয়েকটি সরেজমিনে পরিদর্শনের পর ভবনগুলোর এই দুরবস্থা দেখে কারণ জানতে চাইলে মেয়রকে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। মেয়র এসব ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে এসব ভবন ধসে যে কোন সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে উপলব্ধি করে এসব ভবনের বিষয়ে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের পূর্বের দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি ভবনগুলোকে পরিত্যক্ত করে ভাঙ্গার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুমোদন দিয়েছে বলে জানা গেছে।
×