ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রাবাসের দায়িত্বে প্রভোস্ট- তদারকিতে ‘বড়ভাই’

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

ছাত্রাবাসের দায়িত্বে প্রভোস্ট- তদারকিতে ‘বড়ভাই’

জাবি সংবাদদাতা ॥ বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে (জাবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ক্লাস শুরুর প্রথম দিন থেকেই একটি সিট বরাদ্দ দেয়া হবে এবং কোন শিক্ষার্থী যদি হলে না থাকতে চায় তাহলে তাকে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাইরে থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা এর ভিন্ন। মেয়েদের হলগুলোতে ছয় মাস কিংবা এক বছর গণরুমে থাকার পর নিজের বরাদ্দ সিটে ওঠার ব্যবস্থা থাকলেও ছেলেদের হলগুলোতে এক ছাত্রকে বরাদ্দকৃত সিটে ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হয় তিন থেকে সাড়ে তিন বছর। অর্থাৎ একজন ছাত্র তার বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের মাঝামাঝি অথবা চতুর্থ বর্ষে তার বরাদ্দ আসনে উঠতে পারে। প্রথম বর্ষে ছাত্রদের থাকতে হয় গণরুমে, দ্বিতীয় বর্ষে মিনি গণরুমে (৪ জনের কক্ষে ১২-১৫ জন), তৃতীয় বর্ষে ৪ জনের রুমে ৬ জন এবং পরবর্তীতে সিট খালি হলে তার জন্য একক সিটের বরাদ্দ দেয়া হয়। ছাত্রদের আসন বণ্টনের পুরো বিষয় সম্পর্কে কোন খোঁজই রাখেন না কোন হলের প্রভোস্ট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রত্যেকটি হলে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাবি শাখার তিনটি গ্রুপ। জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানার একটি গ্রুপ যেটি পরিচিত প্রেসিডেন্ট প্যানেল নামে, সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চলের একটি গ্রুপ যেটি পরিচিত সেক্রেটারি প্যানেল নামে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের নেতৃত্বে একটি উপগ্রুপ রয়েছে যেটি মূলত সেক্রেটারি প্যানেলের বিদ্রোহী গ্রুপ নামে পরিচিত। সাধারণত এই তিনটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণেই ভাগাভাগি হয়ে থাকে হলগুলোর সিট। তারা নিজেদের মধ্যে হলের সিট ভাগ করে নেয় এবং সেখানে পছন্দ অনুযায়ী নিজেদের অনুসারীদের হলে থাকার অনুমতি দেয়। মাঝে মাঝে হলগুলোতে সিটের দখল নেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের গ্রুপগুলোর মারামারির ঘটনারও নজির রয়েছে। এর বাইরে হলে সিট পাওয়ার প্রচলিত কোন নিয়ম নেই উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের একজন ছাত্র বলেন, ‘এটা বিশ্বদ্যিালয়ে ওপেন সিক্রেট। প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থীকে হলে ওঠার প্রথম দিন থেকেই র‌্যাগিং নামক নির্যাতনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। একজন ছাত্র যখন প্রথম দিন থেকেই দেখে প্রশাসন তার নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তখন সে আস্তে আস্তে এই সিস্টেমটাকেই নির্ভুল ভাবতে শুরু করে। এবং সে নিজেই এটাকেই সমর্থন করা শুরু করে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নয় আমরা সিট চাই মেধা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে।’ যারা গণরুমের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে রুম নিয়ে থাকে তাদের পরবর্তীতে হলে সিট নেয়ার জন্য পোহাতে হয় দুর্ভোগ। হলে নিজের বরাদ্দ আসনে ওঠার জন্য তখন তাদের দৌড়াতে হয় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাদেও পেছনে এবং শিকার হতে হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের। কেন হল প্রভোস্টরা ছাত্রদের সিট দেয়া সংক্রান্ত বিষয়গুলোর দেখভাল করেননা? এমন প্রশ্নের জবাবে হল প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাতদিনের মধ্যেই একজন শিক্ষার্থীর হলের সিট ছেড়ে দেয়ার নিয়ম। কিন্তু রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করে ফেলেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্র হলগুলোতে এই সঙ্কট বিদ্যমান। আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে, এই সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করছি। আমরা প্রত্যেকটা হলের আবাসিক শিক্ষকদের চিঠি দিয়েছি রাত সাড়ে আটটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তারা যেন হলে থেকে ছাত্রদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে খোঁজ নেন।’ এদিকে হলের সিট সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশাসনের উদাসীনতা এবং প্রত্যেক হলের ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের চারজন বা দুইজনের রুমে একা থাকার কারণে আবাসিক হলগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র আসন সঙ্কট। এদিকে সব আবাসিক হলগুলোতেই রয়েছে ছাত্রলীগের পলিটিক্যাল ব্লক, যেখানে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয় এমন কেউ থাকতে পারেনা। এ বিষয়ে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘আমরা যাতে আমাদের সাংগঠনিক কাজ ভালভাবে করতে পারি এজন্য হল প্রশাসনের অনুমতিক্রমেই আমরা যারা ছাত্রলীগ করি তারা একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করি। ছাত্রলীগ কখনও হলের সিট বণ্টনে সঙ্গে জড়িত নয়, তবে যদি হল প্রশাসন চাই আমরা সাধারণ ছাত্রদের সিট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে থাকি।
×