ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাওনাদারদের চাপে এমন মর্মান্তিক ঘটনা বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা

কাফরুলে স্ত্রী-পুত্রকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ১১:২৩, ১১ অক্টোবর ২০১৯

কাফরুলে স্ত্রী-পুত্রকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘বিদায় বন্ধু, দেখা হবে অন্য কোথাও’ বন্ধুদের এমন মেসেজ পাঠিয়ে স্ত্রী ও একমাত্র পুত্রকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর নিজেও ফ্যানের সঙ্গে ফঁাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এস এম বায়েজীদ নামের এক ব্যবসায়ী। পাওনাদারদের চাপ এবং পিতামাতার সঙ্গে দূরত্ব থাকায় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে ওই ব্যবসায়ী এমন ঘটনা ঘটান বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। পর পর দুইবার গার্মেন্টস এবং সর্বশেষ হোটেল ব্যবসা করে বিরাট অঙ্কের টাকা ঋণে পড়েন। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন পাওনাদার বাড়িতে আসত। ঘটনার দিনও চার পাওনাদার এসেছিলেন। টাকার জন্য পাওনাদারদের চাপ সইতে না পারার জেরেই ঘটনাটি ঘটে। লাশ উদ্ধার করে রাতেই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়। ঘটনাস্থলে ভিড় করেছেন শত শত মানুষ। সিআইডির ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। রাজধানীর কাফরুল থানাধীন ১৩ নম্বর সেকশনের ৫ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর ছয়তলা বাড়ির তৃতীয় তলায় এমন হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। নিহতরা হচ্ছেন, এসএম বায়েজীদ (৪৪)। তার স্ত্রী কহিনুর পারভীন অঞ্জনা (৩২) ও তাদের একমাত্র সন্তান ফারহান (১৭)। ফারহান মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে অবস্থিত মিরপুর কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। যে বাড়িতে তাদের মৃত্যু হয়েছে, সেই বাড়িটি অঞ্জনার ফ্রান্স প্রবাসী বোন রিনার। বড় বোনের বাড়িতে নামকাওয়াস্তে ভাড়া দিয়ে তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকত। বায়েজীদের বাল্যবন্ধু সাহিদুজ্জামান বলছিলেন, আমরা একই স্কুল ও কলেজ থেকে পাস করেছি। ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে সে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করে। প্রথমে সাভারের হেমায়েতপুরের রাজফুলবাড়িয়া এলাকায় একটি গার্মেন্টস দেয়। গার্মেন্টসটিতে শুধু পর্দার কাপড় তৈরি হতো। অনেক দিন চালানোর পর সেটিতে বড় অঙ্কের টাকা লোকসান করে। এরপর কিছু দিন বিরতি দিয়ে আবার মিরপুরের পর্বতায় গার্মেন্টসের ব্যবসা শুরু করেন। এটিতে তার ভাই সহযোগিতা করে। তার ভাইয়েরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। এই সময় একটি ভবনের মাত্র দুইটি ফ্লোর নিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করে। সেটিতেও লোকসান করে। এরপর সে আশুলিয়া কাজী এসপেরাগাজ নামের একটি হোটেল খুলে। লোকসানের মুখে সেটিও বিক্রি করে দেয়। সর্বশেষ বেকার ছিল। কোন কাজকর্ম করত না। তার অর্থঋণ সংক্রান্ত কাফরুল থানায় একটি মামলাও করেছে বলে শুনেছি। ঋণের ভার সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করতে পারে বলে আমার ধারণা। সে ঋণগ্রস্ত থাকলেও তার কাছে কোনদিনই কোন সহযোগিতা চায়নি। তার পারিবারিক কোন ঝামেলা ছিল না। তবে নিজের পরিবারের সঙ্গে মান অভিমান ছিল। বাড়িটির এক নারী বাসিন্দা বলছিলেন, বায়েজীদ ছেলে হিসেবে ভাল। তবে নিজের পরিবারের সঙ্গে তার মান অভিমান ছিল। বায়েজীদ প্রেম করে অঞ্জনাকে বিয়ে করে। বিয়ে মেনে নিতে পারেননি বায়েজীদের পিতা-মাতা ও ভাই বোনদের অনেকেই।
×