ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমাদের প্রকল্পের বরাদ্দ সুষ্ঠুভাবে ব্যয় করলে দেশ আরও অনেকদূর এগিয়ে যেত;###; নিউইয়র্র্র্র্কে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নাগরিক সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা

দুর্নীতি করলে ছাড় নয় ॥ দলীয় লোকদের বিরুদ্ধেও প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দুর্নীতি করলে ছাড় নয় ॥ দলীয় লোকদের বিরুদ্ধেও প্রধানমন্ত্রীর কঠোর  হুঁশিয়ারি

এম শাহজাহান, নিউইয়র্ক থেকে ॥ দুর্নীতি-অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খলতায় জড়িত থাকলে দলের লোকদেরও কোন ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্নীতি না হলে দেশের চেহারা পাল্টে যেত। এ কারণে ফাঁকফোকর কোথায় এবং কারা উন্নয়ন প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত করছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার বিকেলে নিউইয়র্কের ম্যারিয়ট মারকুইজ হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প নিচ্ছি। যত উন্নয়ন প্রকল্প আমরা নিচ্ছি, তার প্রতিটি টাকা যদি সঠিকভাবে ব্যয় হতো, ব্যবহার হতো, আজকে বাংলাদেশ আরও অনেক বেশি উন্নত হতো পারত। এখন আমাকে খুঁজে বের করতে হবে এখানে কোথায় লুপহোল, কোথায় ঘাটতিটা, কারা কোথায় কিভাবে এই জায়গাটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শেখ হাসিনা বলেন, আামি একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই, এই অসৎ পথ ধরে কেউ উপার্জন করলে, অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলতা বা অসৎ কাজে যদি ধরা পড়ে, তবে সে যেই হোক না কেন, আমার দলের হলেও ছাড় হবে না, এর বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে একদলীয় সভায় ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে চাঁদাবাজির অভিযোগে সরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তত্ত্বাবধানে ক্যাসিনো চালানোর খবর সংবাদমাধ্যমে এলে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে ও বারে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব অভিযানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে, বিদেশ যাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। প্রবাসীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, যারা সদ্ভাবে জীবন-যাপন করতে চায়, তাদের জন্য বা তাদের ছেলেমেয়ের জন্য সদ্ভাবে জীবন-যাপন করা কঠিন হয়ে যায়, যখন অসৎ উপায়ে উপার্জিত পয়সা সমাজকে বিকলাঙ্গ করে দেয়। কারণ একজনকে সদ্ভাবে চলতে গেলে তাকে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে চলতে হয়। আর অসৎ উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এই ব্র্যান্ড, ওই ব্র্যান্ড, এটা সেটা হৈ চৈ... খুব দেখাতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, ফলাফলটা এই দাঁড়ায়, একজন অসৎ মানুষের দৌরাত্ম্যে যারা সদ্ভাবে জীবন-যাপন করতে চায় তাদের জীবনযাত্রাটাই কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ ছেলেমেয়েরা ছোট শিশু, তারা তো আর এতটা বোঝে না। ভাবে যে ওরা এইভাবে পারে তো আমাদের নেই কেন। এটা স্বাভাবিক, তাদের মনে এই প্রশ্নটা জাগবে। এত ছোট ছোট বাচ্চারা, তারা সৎ-অসতের কি বুঝবে। তারা ভাবে আমার বন্ধুদের এত আছে, আমাদের নেই কেন? স্বাভাবিকভাবে মানুষকে অসৎ উপায়ের পথে ঠেলে দেবে। সমাজের এই বৈষম্য দূর করার জন্য সরকার ইতোমধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকটা জিনিস আমি দেখতে বলে দিয়েছি, সেটা হলো কার আয়-উপার্জন কত, কিভাবে জীবন-যাপন করে সেগুলো আমাদের বের করতে হবে। তাহলে আমরা সমাজ থেকে এই ব্যাধিটা, একটা অসম প্রতিযোগিতার হাত থেকে আমাদের সমাজকে রক্ষা করতে পারব, আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারব। এছাড়া, দুর্নীতির পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান, সেটাও অব্যাহত থাকবে। এই মাদক একটা পরিবার ধ্বংস করে, একটা দেশ ধ্বংস করে। এর সঙ্গে কারা আছে সেটাও আমরা খুঁজে বের করব। বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদক দূর করে বাংলাদেশের মানুষকে আমরা উন্নত জীবন দিতে চাই। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস যে কেবল বাংলাদেশের সমস্যা না, গোটা বিশ্বের জন্যই যে এটি একটি হুমকি, সে কথাও মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এখন দেশের উন্নতির জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার। শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের শক্তি সবচেয়ে বড় শক্তি এবং আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতেই বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয় এবং জনগণ উন্নত জীবন লাভ করে বলেই আওয়ামী লীগের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আছে। তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় দেশের শিক্ষাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া এবং বাজেট বাড়ানোর কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান সেটাও অব্যাহত থাকবে। এই মাদক একটা পরিবার ধ্বংস করে, একটা দেশ ধ্বংস করে। এর সঙ্গে কারা আছে সেটাও আমরা খুঁজে বের করব। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদক দূর করে বাংলাদেশের মানুষকে আমরা উন্নত জীবন দিতে চাই। এত উন্নয়নের পরও দেশে এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ‘পরশ্রীকাতর’ আচরণ করে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে যত ভাল কাজই করা হোক, তারা কখনই ভাল বলবে না। সেই ‘বুদ্ধিজীবীদের’ তিনি বিএনপি-জামায়াতের সময় দেশে সন্ত্রাস, দুর্নীতির কথা মনে করিয়ে দেন। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর দুর্নীতির কথাও বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ত্যাগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতা হতে হলে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতা ও বাঙালীর বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি, পাকিস্তানীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যারা ধর্ষণ ও গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের প্ররোচনাতেই ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেভাবেই হোক সমুন্নত রাখতে হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি তাদের দেশে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার দুপুরে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন। আট দিনের এই সফর শেষে ১ অক্টোবর ভোরে প্রধানমন্ত্রীর দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
×