ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে ৩২ জুয়া ও অনৈতিক কর্মকান্ডের আস্তানা

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 চট্টগ্রামে ৩২ জুয়া ও অনৈতিক  কর্মকান্ডের আস্তানা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর হঠাৎ করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ দায়িত্বহীনতা ছেড়ে কর্তব্যপরায়ণ হয়ে উঠেছে। নগরীর রাস্তার মোড়ে মোড়ে চলছে পুলিশের অভিযান। তবে তাও কিন্তু মোটরসাইকেলের ওপর। পুলিশ মোটরসাইকেল চালকের হেলমেট বাধ্যতামূলক করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্সে লেখা নেই। এদিকে অন্য যানবাহনের দিকে ফিরেও দেখছে না পুলিশ। নাকি ক্ষণিকের তৎপরতা দেখিয়ে পুলিশ প্রশাসনের মুখ উজ্জ্বল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। এদিকে ঢাকায় নামীদামী ক্লাবে জুয়ার আসরের ওপর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযানের চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে অনুকরণ। প্রশ্ন উঠেছে, খুলশী, কোতোয়ালি, চকবাজার ও ডবলমুরিং থানা এলাকায় থাকা বিভিন্ন ক্লাবে সেবামূলক কর্মকান্ডের নামে গড়ে ওঠা ক্লাবগুলোতে মদ-জুয়ার আসর বসে তা পুলিশ জেনেও অভিযান পরিচালনা করেনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর পুলিশ হঠাৎ করে এ ধরনের অপরাধ দমনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামে নাকি বত্রিশটি জুয়া ও অনৈতিক কর্মকান্ডের আস্তানা রয়েছে এমন তথ্য রয়েছে পুলিশের তালিকায়। তালিকা করে পুলিশ অপরাধ বন্ধ না করে মাসোয়ারা নিয়েছে বছরের পর বছর। তবে অপরাধ বন্ধে কোন তৎপরতা দেখায়নি। অভিযোগ রয়েছে পুলিশ নিজেই জুয়া ও মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যেখানে আকবরশাহ এলাকায় পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে জুয়া খেলায় মেতে ওঠেন সেখানে যত্রতত্র জুয়ার আসর বসা স্বাভাবিক বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা। জানা গেছে, উত্তর ও দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকার বিভিন্ন সড়কে রেস্ট হাউসের আড়ালে চলছে মদ ও জুয়ার ব্যবসা। সেইসঙ্গে জুয়াড়ি বাড়াতে অনৈতিক কর্মকান্ডও চলছে। উত্তর ও দক্ষিণ খুলশীর ১৪টি রেস্ট হাউসে দুই বছর আগেও মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ অভিযান চালিয়ে মাদক ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকাদের আটক করে। কিন্তু আইনে তিন মাসের কারাদন্ড বা সর্বাধিক দুইশ’ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। ফলে আইনের এই ফাঁক দিয়ে অপরাধীরা বেরিয়ে আসে। এমন খুলশী থানার তৎকালীন ওসি মাইনুল ইসলাম বিভিন্ন রেস্ট হাউসে যাতায়াত করতেন এমন প্রমাণও মিলেছে। এদিকে আকবরশাহ থানা এলাকায় একটি ভবনের কক্ষ ভাড়া নিয়ে জুয়ার আসর বসান পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তাসহ ৮/১০ জনের একটি জুয়াড়ি দল। কিন্তু আকবরশাহ থানার ওসি বিষয়টি জানলেও উর্ধতন কর্মকর্তার কারণে মুখে কলুপ এঁটেছেন। পুলিশের খাতায় জুয়াড়িদের যেমন তালিকা রয়েছে তেমনি জুয়ার আসরের তালিকাও রয়েছে। এগুলো হলো- বন্দর থানা এলাকায় ৩টি, কোতোয়ালি থানা এলাকায় ১টি, বায়জীদ থানা এলাকায় ১টি, পাহাড়তলী থানা এলাকায় ৪টি, ইপিজেড থানা এলাকায় ৬টি, ডবলমুরিং থানা এলাকায় ১টি, পতেঙ্গা থানা এলাকায় ২টি, কর্ণফুলী থানা এলাকায় ১টি, চকবাজার থানা এলাকায় ৩টি, হালিশহর থানা এলাকায় ৭টি ও সদরঘাট থানা এলাকায় ৩টি মদ ও জুয়ার অবৈধ আসর বসে। কোতোয়ালী থানা এলাকার হোটেল টাওয়ার ইন নামক আবাসিক হোটেলেও মদের অবৈধ বার রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে শুক্রবার রাত থেকে পুলিশ নগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায় থাকা ৩২টি জুয়ার আসর চিহ্নিত করে তালিকা পকেটে নিয়ে ঘুরছে। কারণ পুলিশ ওইসকল জুয়ার আসর থেকে মাসোয়ারা পায়। ফলে অপরাধ নিশ্চিত হলেও অভিযান অনিশ্চিত। অভিযোগ উঠেছে খোদ যেখানে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা জুয়ার আসরে বসেন সেখানে জুয়ার আসর যেমন বন্ধ হবে না তেমনি জুয়াড়িও ঘরে বসে থাকবে না এমন মন্তব্য সচেতন নাগরিক।
×