ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক চেয়ারম্যান ও পরিচালককে গ্যারান্টার করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:০৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ব্যাংক চেয়ারম্যান ও পরিচালককে গ্যারান্টার করা হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ খেলাপী ঋণ কমাতে ব্যাংক চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের গ্যারান্টার করার আইন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, খেলাপী ঋণ নিয়ে যে দুশ্চিন্তা থাকে তা থেকে মুক্তি লাভের জন্য সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছে। তবে এই পরিবর্তন আনা হবে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরের সম্মেলন কক্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ওই বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, কোন ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণ দেয়ার সময় আদায় নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত মর্টগেজের আওতায় থাকতে হবে। এর বাইরে যারা পরিচালক, চেয়ারম্যান, তারা সবাই পারসোনাল গ্যারান্টি দেবে। এসব গ্যারান্টি আমাদের আইনী প্রক্রিয়ায় এতটা শক্তিশালী হবে যে, কেউ যদি ফেইল করে ঋণ শোধে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা এ্যাকশন নিতে পারব। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ঋণের বিপরীতে মর্টগেজ এবং গ্যারান্টি-এ দুটো বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে কোন ঋণ আর খেলাপী হবে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখেছি, আমাদের নন পারফরমিং লোনগুলো মোস্টলি হয়েছে। আমাদের আইনী প্রক্রিয়ায় কিছু দুর্বলতা ছিল। যে কারণে আমরা এগুলোর বিরুদ্ধে আমরা ইগনোর করতে পারি না। যে কভারেজ ছিল, সেগুলো আমরা ব্যবহার করতে পারি না। এগুলো আমরা দূর করব।’ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপী ঋণের সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে নতুন করে খেলাপী ঋণ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। আর জুন শেষে অবলোপনসহ খেলাপী ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো তারা করবেন। আয় বাড়ানোর জন্য, ব্যাংকগুলোর ব্যয় কমানোর জন্য, যেখানে যেখানে যা প্রয়োজন তা করা হবে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সরকারী চার ব্যাংক অর্থনীতির বিশাল এলাকা কাভার করে থাকে। যেখানে ব্যাংকের একাধিক শাখা আছে সেগুলো স্থানান্তর করা হবে, যাতে একজনের কাস্টমার আরেক জন নিতে না পারে। আমরা ব্যাংকে হেলদি কমপিটিশন দেখতে চাই। তিন মাস পর পর চারটি ব্যাংক নিয়ে সভা করা হবে। আমাদের মূল্যায়ন আমরাই করব। আমাদের বিরুদ্ধে আগে যা দেখেছেন সেগুলো দেখতে পাবেন না। আমরা চারটি ব্যাংকের প্রিন্টিং স্টেটমেন্ট কোয়ার্টালি দেব। এদেশের মানুষের নিকট আমাদের দায়বদ্ধতা আছে সেখান থেকে কাজগুলো করা হবে। যে ক্ষেত্রেই পরিবর্তন করার দরকার সেখানে পরিবর্তন করা হবে। তিনি বলেন, কে কতটা বোনাস নেবে, কিসের ভিত্তিতে বোনাস নেবে এগুলোর মূল্যায়ন করা হবে। বোনাস নেয়া তো কিছু ইনডিকেটর্সের ওপর নির্ভর করে। সেই ইনডিকেটর্সগুলো বসিয়ে দেয়া হবে। এখন মন্ত্রণালয়গুলো এ কাজগুলো করছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং খাতে প্রায় দেখা যায় রফতানি বিল অনুকূলে টাকা পরিশোধ হচ্ছে কিন্তু টাকা আসছে, আবার এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে কিন্তু পণ্য দেশে আসেনি। এ জাতীয় ঘটনা আগামীতে আরও দেখা যাবে না। এ জন্য প্রতিটি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রম ও নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করা হবে। চারটি ব্যাংকের জন্য একই পদ্ধতি করে দেয়া হবে। আমার বিশ্বাস এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার পর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক নিয়ে কষ্ট ও দুচিন্তা থাকবে না। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক পারফরমেন্স চুক্তি করা আছে। এখন থেকে এসব চুক্তি কি বাতিল হবে প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, তা বাতিল হবে না। সরকারের সব মন্ত্রণালয় এ চুক্তি করছে। এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন না করা হলে কিভাবে হংকং ও সিঙ্গাপুরের ওপরে বাংলাদেশ গেল। অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব জায়গায় আমাদের বিচ্যুতি আছে সেগুলো চিহ্নিত করে আইনের পরির্বতন করা হলে ঋণ গ্রহীতা ও সরকার উভয় উপকৃত হবে। এই বিচ্যুতি ঠিক করে ব্যাংকিং খাতকে রক্ষা করা হবে। যেখানে পরিবর্তন করা দরকার সেখানেও করা হবে। ব্যাংক কমিশন গঠন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগে আইনগুলো সংশোধন করতে হবে। এরপর নিজেরা শক্তিশালী হবো। নিজেদের ঘর গুছিয়ে আইন সশোধন, জনবল ও নিয়ম নীতি ঠিক করে এরপর ব্যর্থ হলে কমিশন গঠন করা হবে। কমিশন আমাদের ব্যর্থতা খুঁজবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন কাজ শুরু করা হয়নি। পাশেই সেনাবাহিনীর নির্মাণ করা একটি রিসোর্ট। সিমেন্টে তৈরি। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। এই স্থাপনাটির ছবি দেখে অনেকে সাজেক চিনতে পারেন। আরও একটু সামনে গেলে কংলাক। কংলাক পাহাড়ে চড়ার অভিজ্ঞতা নেয়া হলো পরদিন। একটু শক্ত সামর্থ্য যারা খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে কংলাক পাহাড়ের দিকে রওনা হলেন। তাদের সঙ্গে বেশ কিছু সময় পাহাড় বাওয়ার পরে পাওয়া বসতি। এত উপরে এমন বসতি দেখে চোখ সত্যি কপালে। সাজেকের পুরোটাজুড়েই আছে হোটেল রিসোর্ট। অধিকাংশই কাঠের বাড়ি। প্রকৃতির সঙ্গে ভাল মানায়। প্রায় সব হোটেল কক্ষের বারান্দায় বসে পাহাড় আর মেঘের ওড়াওড়ি দেখা যায়। দরজা তাই খোলাই থাকে। রিসোর্টের নামকরণের ক্ষেত্রেও মেঘ শব্দটির প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। মেঘপুঞ্জি, মেঘাদ্রি, মেঘের ঘর, মেঘমাচাং, মেঘালয়, মেঘকাব্যÑ আরও কত নাম! জানা গেল, সব মিলিয়ে ১০৬টা রিসোর্ট রয়েছে সাজেকে। খাওয়ারও সুব্যবস্থা রয়েছে। মোট ১৮ রেস্তরাঁ। সন্ধ্যায় বেশ কয়েকটির সামনে লাকড়ি জ্বালিয়ে বারবিকিউ করা হয়। স্থানীয়দের খাবারের স্বাদ নিতে চান? আছে সে ব্যবস্থাও। স্থানীয়দের একটি রেস্তরাঁর নাম ‘পেদা টিংটিং।’ মানে কী? জানতে চাইলে চাকমা মালিক টিপু চাকমা বললেন, ভরা পেট। এখানে স্পেশাল খাবার মুরগির ভর্তা। আছে আরও কিছু খাবার। খেয়ে পেট নয় শুধু, মনও ভরে গেল। আরেকটি রেস্তরাঁর নাম ‘ছিম্বালে।’ এখানে খাবারের পাশাপাশি বই রাখা আছে। চা বা কফি খেতে খেতে পড়া যেতে পারে জীবনানন্দ কিংবা হুমায়ুন আজাদের শ্রেষ্ঠ কবিতা। নতুন নতুন রিসোর্ট রেস্তরাঁর ফাঁকে ফাঁকে এখনও আছে স্থানীয়দের কাঁচা বাড়ি। সাজেকে মূলত লুসাই, পাংখোয়া, ত্রিপুরা ও চাকমা আদিবাসী বসবাস করে। গরবা নামের একটি রিসোর্টের ঠিক পাশে কাঁচা ঘর। বাইরে থেকে দেখা গেল, চটের তৈরি দোলনায় ছোট ভাইকে দোল খাওয়াচ্ছে আরেক ভাই। এমন অকৃত্তিম দৃশ্য আরও আছে। তবে কতদিন থাকবে তা নিয়ে স্থানীয়দের অনেকেই সন্দিহান বলে মনে হয়েছে। এ সন্দেহ দূর হোক। সবার হোক সাজেক।
×