ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়রদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এলজিআরডিমন্ত্রী

নিজস্ব আয় দিয়ে পৌরসভা চালাতে হবে

প্রকাশিত: ১০:৫২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 নিজস্ব আয় দিয়ে পৌরসভা  চালাতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সঠিক সেবা দিয়ে নাগরিকদের কাছ থেকে কর আদায় করে নিজস্ব আয় দিয়ে মেয়রদের পৌরসভা পরিচালনার নির্দেশ দিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। একই সঙ্গে পৌর মেয়রদের চলমান সকল সমস্যা ক্রমান্বয়ে সমাধানকল্পে সরকার একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করবে বলেও জানান তিনি। রবিবার রাজধানীর কাকরাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর মিলনায়তনে প্রথমবারের মতো সারাদেশের পৌরসভার মেয়রদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। পৌর মেয়রগণ ব্যক্তি মালিকানাধীন যানবাহনকে কর প্রদানে আইন প্রণয়ন করা, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার লাইসেন্স প্রদানে পৌর মেয়রদের ক্ষমতা দেয়া, পৌরসভার দখল ও উচ্ছেদ কাজ করতে নির্বাহী ক্ষমতা সম্পন্ন কর্মকর্তা নিয়োগ বা মেয়রদের উচ্ছেদে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা, নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের জন্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ও এস্কভেটর প্রদান, অবৈধ ভবন নির্মাণে বাধা দিতে ক্ষমতা প্রদান, আইন মানতে বাধ্য করতে মেয়রদের বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করাসহ নানা দাবি তুলে ধরেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ পৌরসভা সমিতির সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলামসহ দেশের ৩২৮ পৌরসভার মেয়র এবং মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ২০০ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলারে আনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে নাগরিকগণ ট্যাক্স দেন না বা আদায় করা যায় না তা কি মানা যায়? জনগণকে যথাযথ সেবা দিতে পারলে মানুষ কর দিতে উৎসাহিত হবে। তার মাধ্যমেই দেশ উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। তাই সেবার মান বৃদ্ধিতে পৌরসভার মেয়রদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ভোট চাওয়ার সময়ই আপনাদের বলতে হবে যে, এলাকার উন্নয়ন চাইলে আপনাদের নিয়মিত কর প্রদান করতে হবে। তবেই নাগরিকগণ উৎসাহিত হবে। জনগণকে বুঝিয়েই সকল প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে মেয়রগণই পারেন সঠিক সেবা দিয়ে নাগরিকদের খুশি করে রাজস্ব আদায় করে নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাবলম্বী। তারা নিজেদের ট্যাক্সের টাকায় পৌরসভার সকল ব্যয় নির্বাহ করে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে তাদের খুব কম ভর্তুকি দেয়া লাগে। কিন্তু বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ এখনও সে পর্যায়ে যেতে পারেনি। কাজেই মানুষকে ট্যাক্স ও ভ্যাটের উপকারিতা সম্পর্কে বোঝাতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সমস্যা আছে। এসব প্রতিকূলতা দূর করতে চাই বলেই আমরা জনপ্রতিনিধি হয়েছি। কাজেই সাহসের সঙ্গে ধৈর্য ধরে মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে। তবে যেসব পৌরসভার আয় অনেক বেশি তাদের কিভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায় তা নিয়ে আমরা বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। মন্ত্রী বলেন, এই প্রথমবারের মতো পৌরসভার মেয়রদের সঙ্গে সমন্বয় করে ও সমস্যা চিহ্নিত করে কিভাবে কাজ করা যায় তার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখতে মেয়রদের নিয়ে আমরা সভা করেছি। এখন থেকে আপনাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের আলোচনার দ্বার উন্মোচন হলো। কোন সমস্যা হলে আমাদের লিখিত আকারে জানাবেন। আমরা চাই সকল প্রকার পৌরসভার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে মেয়রগণ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করুক। যাতে করে নাগরিকগণ বেশি সেবা পেতে পারেন। আমাদের বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে যা চলমান রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বেশ কিছু পৌরসভা রয়েছে যারা নিজস্ব আয় করতে তেমন কোন উদ্যোগই নিতে চায় না তারা শুধু থোক বরাদ্দ পেতে অধীর আগ্রহে বসে থাকে। এটি ঠিক নয় আপনারা মেয়রগণ হচ্ছেন জনপ্রতিনিধি। আপনারাই কেবল পারেন কিভাবে জনগণকে বেশি সেবা দেয়া যায় তার পথ খুঁজে বের করা। একই সঙ্গে যেসব পৌরসভা নিজেদের কোন প্রকার আয়ই করতে পারে না তাদের সরকার পৌরসভা রাখবে নাকি পূর্বের ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত করবে নাকি সিটি কর্পোরেশনে পরিণত করবে সে বিষয়ে আমরা ভাবছি। মূলত কোন আয়ই না থাকলে নামে পৌরসভা থেকে লাভ কি? তাই এমন পৌর মেয়রদের আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, আমরা সারাদেশে চলমান মশক নিধন অভিযানে আপনাদের পাশে চাই। সরকার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এ কাজে সফলতা পেতে হলে আপনাদের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। মশা যেন কোন ক্রমেই না বাড়তে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মন্ত্রী বলেন, পৌরসভার উন্নয়নে সরকার বেশ কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে ও নিচ্ছে। এসব প্রকল্পে সরকারের সঙ্গে বিদেশী দাতাদের সহায়তাও থাকবে। তাই সব পৌরসভার কিভাবে উন্নতি করা যায় এবং সব মেয়রের কিভাবে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করে সরকারের কাজ ও নির্দেশ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে একটি পৌরসভাকে বেশি সুযোগ দিতে গিয়ে যেন অন্য কোন পৌরসভা বঞ্চিত না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে সচিব ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। মতবিনিময় সভায় মেয়ররা তাদের পৌরসভার বিভিন্ন সমস্যা ও দাবির কথা মৌখকভাবে মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। এরপর মেয়রদের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও দাবি-দাওয়া মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, একদিনে সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। পর্যায়ক্রমে এগুলো সমাধান করা হবে। আমরা সব সমস্যার সঠিকভাবে ক্রমান্বয়ে সমাধান করতে একটি কৌশলপত্র তৈরির চেষ্টা করছি। সভাপতির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ বলেন, নাগরিকদের অধিক সেবা দিন এবং একই সঙ্গে পৌরকর আদায় করে বেতন ভাতা দিয়ে পৌরসভার নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুন। এছাড়া শহরকে সোলার প্যানেল স্থাপন করে বাতি দিয়ে আলোকিত করার উদ্যোগ নিন আমরা আপনাদের সর্বোচ্চ সহায়তা করব। তিনি বলেন, সরকারের বাইরে এমন অনেক দেশী-বিদেশী নাগরিক বা দাতা রয়েছেন যারা এলাকার উন্নয়ন করতে আগ্রহী। তাদের সহায়তা নিন। আমরা আপনাদের এসব কাজের সঙ্গে সঙ্গেই অনুমতি দেব। নিজেদের উন্নয়ন নিজেদের কর দিয়েই করার প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
×