ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাহিদা না থাকায় ফেরত গেল ১১ হাজার ভিজিএফ কার্ড

প্রকাশিত: ১০:১৯, ৭ জুলাই ২০১৯

 চাহিদা না থাকায় ফেরত গেল ১১ হাজার ভিজিএফ  কার্ড

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ৮ ইউনিয়ন পরিষদে চাহিদা না থাকায় এবার ১১ হাজার ৩৯৫ ভিজিএফ কার্ড ফেরত পাঠানো হয়েছে। দুস্থ বা অতি দরিদ্র পরিবারের জন্য খাদ্যশস্য সহায়তা (চাল) বাবদ ২০ কেজি হারে ২৯ হাজার ২৩৮ ভিজিএফ কার্ড এখানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে স্বশাসিত ইউনিয়ন পরিষদ এ্যাডভোকেসি গ্রুপ অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং চেয়ারম্যান হিসেবে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, তৃণমূলে মানুষের অপেক্ষাকৃত স্বাবলম্বিতা বা সচ্ছলতার কারণে ভিজিএফ কার্ডের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। তাছাড়া তাদের সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন এসেছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার কাঠামোর ইউপিতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির ফলে ব্যতিক্রম এ ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্ট সকল ইউপি চেয়ারম্যানগণ প্রায় একই মত দেন। বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র বাগেরহাটে-১ (ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারী) আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, ফকিরহাট উপজেলার ৮ ইউনিয়ন হতে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ভিজিডি কার্ড ফেরত দেয়ার ঘটনা দেশের আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধির সুফল। অতি দরিদ্রদের সংখ্যা কমছে, পাশপাপাশি তৃণমূল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘জনবান্ধব শেখ হাসিনা সরকারের আন্তরিকতায় নজিরবিহীন এ ঘটনা সম্ভব হচ্ছে। যা গ্রাম বাংলায় দিন বদলের ছোঁয়া।’ বাগেরহাটের নবাগত জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ জনকণ্ঠকে বলেন ‘এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির ফল। যা দ্রুত এসডিজি অর্জনে আমাদের অবশ্যই আশাবাদী করছে।’ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদা দিলরুবা সুলতানা জানান, ফকিরহাট উপজেলায় জনসংখ্যার ভিত্তিতে ২০ কেজি হারে ২৯ হাজার ২৩৮ কার্ডের জন্য ৫৮৪.৭৬০ মেঃ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ৮টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ লিখিতভাবে জানান যে, বরাদ্দকৃত কার্ডের সমপরিমাণ হতদরিদ্র পরিবার তাদের ইউনিয়নে বর্তমানে না থাকায় প্রকৃত দুস্থ বা অতি দরিদ্রদের মধ্যে স্বচ্ছতার সঙ্গে সকল কার্ড বিতরণ করা যাচ্ছে না। যে কারণে অনেক কার্ড ফেরত দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেতাগা থেকে ২০০০টি, লখপুর থেকে ১৮২৯টি, পিলজঙ্গ থেকে ১৩৭৪টি, ফকিরহাট সদর থেকে ২৩১৮টি, বাহিরদিয়া-মানসা থেকে ৮০০টি, নলধা- মৌভোগ থেকে এক হাজারটি, মূলঘর থেকে ১১৬৪টি, শুভদিয়া ইউনিয়ন থেকে ৯১০টি কার্র্ড ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত উপজেলা পরিষদের সভায় হয়। এ বিষয়ে ফকিরহাট উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শাহানাজ পারভীন জানান, সরকারের গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম, সরকারের অন্য উন্নয়ন কার্যক্রম এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে উপজেলার দুস্থ, অতি দরিদ্র ও অসহায় জনগণের জীবন মানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে এবং দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এরই কারণে এ উপজেলার সকল ইউনিয়নে ভিজিএফ কার্ডধারীদের মধ্যে অনেকের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি এবং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ভিজিএফ কার্ডের খাদ্যশস্য গ্রহণ করতে আসেন না। তাই চাহিদার অতিরিক্ত ভিজিএফ কার্ড ফেরত দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এটি জনপ্রতিনিধিদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতিফলন। ভিজিএফ কার্ড বিতরণের শর্তাবলী যথাযথভাবে অনুসরণ করলে প্রায় সকল ইউনিয়নে এখন থেকে ‘ব্যতিক্রম’ এ ঘটনা ঘটবে বলে তিনি মনে করেন।
×