ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাল মন্ত্রিসভায় উঠছে

গতবারের তুলনায় হজের ব্যয় ২০ ভাগ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

গতবারের তুলনায় হজের ব্যয় ২০ ভাগ বাড়ছে

আজাদ সুলায়মান ॥ চলতি বছর হজের ব্যয় বাড়ছে। এতে গতবারের তুলনায় হজযাত্রী প্রতি অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা বেশি লাগবে। এ জন্য সৌদি আরবের বিভিন্ন সেবার ওপর অতিরিক্ত ৫% হারে ভ্যাট ও বিমানভাড়া বৃদ্ধিকেই দায়ী করা হচ্ছে। ব্যয় বৃদ্ধির এমন প্রস্তাব চূড়ান্ত করেই আগামীকাল সোমবার কেবিনেটে তোলা হচ্ছে হজ প্যাকেজ-২০১৮। তবে নির্বাচনের বছরে হজের ওপর এই বাড়তি ব্যয় সরকারের জন্য কল্যাণকর হবে না বলে মনে করছেন হাব নেতৃবৃন্দ। মহাসচিব শাহাদত হোসেন তসলিম বলেছেন, এতে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিছু টাকার জন্য সরকারের নীতি নির্ধারকরা কেন এমন প্যাকেজ করতে যাচ্ছে তা বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুণ বলেছেন, হজযাত্রীদের সেবায় বর্তমান সরকারের চেয়ে বেশি দরদ অন্য কারোর নেই। সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত ও বিমান ভাড়ার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই কিছুটা ব্যয় হয়ত বাড়বে। এটা নিয়ে ইস্যু করার কিছু নেই। যারা লাখ লাখ টাকা ব্যয় করতে সক্ষম, তাদের জন্য আল্লাহর পথে ১০-২০ হাজার বেশি খরচ হলেও মনে কষ্ট লাগার কথা নয়। ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিসুর রহমান বলেছেন, হজ তারাই করেন যাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা আছে। এবার সৌদি সরকারের কিছু নতুন সিদ্ধান্তের দরুন ব্যয় বাড়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেই নতুন প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। কাল তা কেবিনেটে অনুমোদন পাবে। সেখানে কি হয়- সেটা দেখি আগে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে- চলতি বছর হজযাত্রী প্রতি অতিরিক্ত ব্যয় বাড়বে আরও ২০ হাজার টাকা। সৌদি সরকারের নতুন করনীতি ও বিমানভাড়ার দরুন এ ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকা-জেদ্দা ও ঢাকা-মদিনা রুটে ২০১৮ সালের হজযাত্রীদের জন্য উড়োজাহাজ ভাড়া নির্ধারণ করেই প্যাকেজ করা হচ্ছে। এ প্রস্তাবে উড়োজাহাজ ভাড়া ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৭৫ মার্কিন ডলার। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে এ বছর হজের খরচ বাড়বে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আগামীকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত উড়োজাহাজ ভাড়ার বিষয়টি তোলা হবে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল হাসনাত মোঃ জিয়াউল হক বলেন-সোমবারের মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। সেখানে এটি চূড়ান্ত হবে। এবার ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব কেন দেয়া হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব বলেন-এবার তেলের দাম বেড়েছে। সৌদি আরব ভ্যাট বাড়িয়েছে। তবে খুব বেশি বাড়বে না । জানা গেছে, বিমান মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের হজযাত্রীদের জন্য ঢাকা-জেদ্দা ও মদিনা-ঢাকা রুটে এক হাজার ৫৫০ ইউএস ডলার উড়োজাহাজ ভাড়া নির্ধারণ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এই রুটে যুক্তিসঙ্গত উড়োজাহাজ ভাড়া নির্ধারণে গত ৪ ফেব্রুয়ারি একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী উড়োজাহাজ ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী উড়োজাহাজ ভাড়া ও ট্রাভেল এজেন্সি কমিশন ২৫ ডলারসহ মোট ১৫ হাজার ৫৭৫ ডলার নির্ধারণ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। একটি সূত্র জানায়, এ বছর প্রস্তাবিত হজ প্যাকেজ-১-এ ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৯৬ হাজার টাকা, যা গত বছর ছিল তিন লাখ ৮১ হাজার ৫০৮ টাকা। আর প্যাকেজ-২-এ ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ২৯ হাজার ২৪০ টাকা, যা গতবছর ছিল তিন লাখ ১৯ হাজার ৩৩৫ টাকা। ফলে গত বছরের তুলনায় জনপ্রতি খরচ বাড়ছে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে, প্রতি বছরের মতো এবারও আলাদাভাবে কোরবানির জন্য খরচ করতে হবে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। জানা গেছে- মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি উড়োজাহাজ ভাড়া এক হাজার ৫৫০ ডলার, সৌদি বিমানবন্দর বিল্ডিং চার্জ ১৭৪ সৌদি রিয়াল, হজ টার্মিনাল সার্ভিস চার্জ ৩০ রিয়াল, বাংলাদেশ এ্যাম্বারকেশন ফি ৫০০ টাকা, এ্যাম্বারকেশন ফি-এর ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসাবে ৭৫ টাকা, বাংলাদেশ এক্সাইজ ডিউটি দুই হাজার টাকা, সৌদি সরকারের সিকিউরিটি চার্জ চার মার্কিন ডলার ও ট্রাভেল এজেন্ট কমিশন ২৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে সুপারিশ করে। বিমান ভাড়া ডলারে নির্ধারণ করায় হজ মৌসুমে টিকিট ইস্যুর সময় মার্কিন ডলার বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রকৃত ভাড়া ও ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া এজেন্ট কমিশন এ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স বাবদ পূর্ণ ভাড়ার ওপর দশমিক ৩০ শতাংশ হারে অগ্রিম কর আদায় করা হবে। এ বিষয়ে হাব মহাসচিব শাহাদত হোসাইন তসলিম জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনের বছর যেভাবে হজ প্যাকেজে ব্যয় বাড়ানোর ফন্দি আটা হয়েছে তা কিছুতেই কাম্য নয়। এতে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ সারা বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ প্রতিটি হাজীর পরিবারেই নেতিবাচকভাবে সমালোচনা জন্ম দেবে। সরকারের নীতি নির্ধারকদের এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত ছিল। আগামীকাল সমবার যে হজ প্যাকেজ মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হতে যাচ্ছে-তাতে যে হারে বিমান ভাড়ার বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে- তা টাকার অংকে আমলে নেয়ার মতো নয়। এতে শুধু বিমান লাভবান হবে যৎসামান্য। বিমান তো চাইবেই তাদের হাজীদের জিম্মি করে দু’হাতে কামিয়ে নিতে। আমার প্রশ্ন হলো সরকার কেন তাতে সায় দেবে। তিনি বলেন, এ বছর প্রত্যেক হজ যাত্রীর জন্য অতিরিক্ত ৭৫ ডলার বৃদ্ধি করার প্রস্তাব সরকার মেনে নিয়েছে। এ হিসেবে এ বছরের ১ লাখ ২৭ হাজার হজযাত্রীর অর্ধেক যদি বিমান বহন করে তাহলে ৮৩ টাকা ডলার হারে বড় জোর ৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত লাভ করবে। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সামান্য কটা টাকার জন্য সরকারের সমালোচনা যে হারে দেখা দেবে- তা আদৌও কাম্য নয়। নির্বাচনে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে।
×