ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দণ্ডের বিরুদ্ধে খালেদার আপীল, গ্রহণযোগ্যতার শুনানি কাল

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দণ্ডের বিরুদ্ধে খালেদার আপীল, গ্রহণযোগ্যতার শুনানি কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ৫ বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপীলের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার । ঐ দিন জানা যাবে এই আপীল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হবে কিনা । ৬০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনের সঙ্গে ১২২৩ পৃষ্ঠার নথিপত্র জমা দেয়া হয়েছে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়ার খালাস চাওয়া হয়েছে সেখানে। মঙ্গলবার দুপুরে খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবীরা হাইকোর্টে আপীল করেন। এরপর বিকেল পৌনে চারটার দিকে খালেদার আইনজীবী বিষয়টি (মেনশন সিøপ) উপস্থাপন করার পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ প্রদান করেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে সুপ্রীমকোর্ট বারের সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতে আপীল উপস্থাপন করেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, আমিনুল হক, আবদুর রেজাক খান প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ও এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জানিয়েছেন, জামিনের আবেদনও করা হবে বৃহস্পতিবার। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আলাপ-আলোচনার পর আপীলের সিদ্ধান্ত নেবে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ- দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। এই মামলায় অন্য আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ আরও চারজনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে। তারেক রহমানসহ সবার ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা করে জরিমানা করা হয়। গত ১২ ফেরুয়ারি ৬৩২ পৃষ্ঠা রায়ের সার্টিফায়েড কপির জন্য তিন হাজার পৃষ্ঠার কার্টিজ পেপার আদালতে জমা দেন খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ। মাত্র ১২ দিনের মাথায় সোমবার রায়ের ১১৭৪ পৃষ্ঠার সত্যায়িত অনুলিপি পান খালেদার আইনজীবী। মঙ্গলবার শুরুতেই খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতকে জানান, খালেদা জিয়ার পক্ষে আপীল করা হয়েছে। এ সময় ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ বলেন, জামিনের দরখাস্ত থাকলে আমাদের (রাষ্ট্রপক্ষ) যেন কপি দেয়া হয়। এ সময় আদালত বলেন, তারা (খালেদার আইনজীবীরা) তো মেনশন স্লিপ দিচ্ছেন। জামিনের দরখাস্ত থাকলে আগে দিয়ে দেবেন। এ সময় আসামি পক্ষ ও এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্যের পর আদালত শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করে। কারণ হিসেব বলা হয়েছে দুদকের মামলা বুধ ও বৃহস্পতিবার শুনানি হয়ে থাকে। আদালত আরও বলেন আজকের মধ্যেই রাষ্ট্রপক্ষকে কপি দেয়ার জন্য। রবিবার শুনানির জন্য চেয়েছিলাম ॥ খালেদা জিয়ার আপীল আবেদন গ্রহণযোগ্যতা শুনানির জন্য সময় চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, শুনানির জন্য আগামী রবিবার পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালত বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ধার্য করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রীমকোর্টের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খালেদা জিয়া ও অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। সেই মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ- দিয়েছে আদালত। সেই দ-াদেশের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে একটি আপীল দায়ের করা হয়েছে। এই আপীল গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে শুনানির জন্য তার আইনজীবীরা মঙ্গলবার আদালতে উল্লেখ করেছিলেন। আপীলটি বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য আদালত দিন ধার্য করেছে। সেই দিন এই আপীলের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির ব্যাপারে দিন ধার্য আছে। শুধু আপীল গ্রহণ করা হবে কিনা, সে বিষয়ে ওই দিন শুনানি হবে। আদালতে আপনার কোন বক্তব্য ছিল কিনা, জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, আমি বলেছিলাম, যেহেতু ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়, বৃহস্পতিবার না এনে আগামী রবিবার আনলে ভাল হয়। সবটা ভালভাবে দেখে নিতে পারি। রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রায়টি পড়া আমি শুরু করেছি। ওরা যে দরখাস্ত দিয়েছে, সেই দরখাস্তের কপি আমাদের দিতে হবে। সেই কপিটা পেলে আমরা দেখব, তারা কি কি গ্রাউন্ডে আপীল করেছে। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে আপীল এ্যাডমিশন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জামিনের আবেদন করা হয়। সে জন্য আমরা বলেছি, তারা যদি জামিনের প্রার্থনা করে, কপিটা যেন আমাদের আগেই দেয়া হয়। কমিশনই সিদ্ধান্ত নেবে ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আলাপ-আলোচনার পর আপীলের সিদ্ধান্ত নেবে। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম জনকণ্ঠকে এ কথা জানিয়েছেন। খালেদা জিয়ার আপীলের পর তার সাজা বাড়িয়ে দুদক আপীল করবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে দুদকের এই আইনজীবী এ কথা জানান। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত নেবে দুদক। মঙ্গলবার আপীল শুনানির জন্য আমরা মেনশন করেছিলাম। পরে আপীল শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছে আদালত। আমরা রায়ের কপি সোমবার রাত ৯টায় পেয়েছি। এটা পড়ে কমিশন আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবে। সোমবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের অনুলিপি পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপীল করেন খালেদার আইনজীবী। এতে ৬০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনের সঙ্গে এক হাজার ২২৩ পৃষ্ঠার নথিপত্র জমা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার জামিন আবেদনের শুনাননি॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে করা আপীলের শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি ) দিন ধার্য করেছে আদালত। ওইদিনই তার জামিনের আবেদন করবেন আইনজীবীরা। মঙ্গলবার আপীল আবেদনের শুনানির দিন ধার্য হওয়ার পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, আমরা আজ আদালতে আপীল করেছি। আদালত শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছে। ওইদিনই আমরা জামিন আবেদনও করব। আশা করছি, সেদিন জামিন শুনানিও অনুষ্ঠিত হবে। আশা করি, উনি (খালেদা জিয়া) জামিন পাবেন। এদিকে নথিপত্রসহ ১২২৩ পৃষ্ঠার ওই আপীল আবেদনে ফাইলিং লইয়ার হিসেবে আবদুর রেজাক খানের নাম রয়েছে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়ার খালাস চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন নিয়ম হচ্ছে আপীলের সঙ্গে জামিনের আবেদন দেয়া । কি আছে পূর্ণাঙ্গ রায়ে ॥ দীর্ঘ ১১৭৪ পৃষ্ঠার রায়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং অর্থ আত্মসাতের কথা তুলে ধরা হযেছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে,সরকারী এতিম তহবিলের টাকা এতিমদের কল্যাণে ব্যয় না করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাত করে খালেদা জিয়াসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন । রায়ের পর্যবেক্ষণে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেছেন, এ ঘটনায় বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ মামলার ছয় আসামির প্রত্যেকেই কোন না কোনভাবে লাভবান হয়েছেন। তারা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। অর্থনৈতিক দুর্নীতি রাষ্ট্রের অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে এবং এর বাজে প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে সংক্রমিত হয় বলে উল্লেখ করেছেন । মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে এতিম তহবিলের ২ কোটি ৭১ লাখ ৬৩৪ টাকা আত্মসাত করেছেন। পরিমাণের দিক থেকে এর বর্তমান মূল্য অধিক না হলেও ঘটনার সময়ে ওই টাকার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামে কোন এতিমখানার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সেখানে কোন এতিম বসবাস করে না। এতিমখানার কোন দালান-কোঠা বা স্থাপনা নেই। ফলে আসামিদের কোন যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্রের যুক্তি গ্রহণযোগ্য। রায়ে আরও বলা হয়, নথি পর্যালোচনায় প্রমাণিত হয় খালেদা জিয়া এদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্বীকৃত মতেই সরকারী কর্মচারী। বাকি উপাদানগুলো এ মামলায় উপস্থিত আছে বলে ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করা গেছে। ফলে খালেদা জিয়ার পক্ষে যে সমস্ত যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে তা বাস্তবতার নিরিখে গ্রহণ করার কোন কারণ নেই। এছাড়া আসামিদের পক্ষে দাবি করা হয়েছে যে, তিনি (খালেদা জিয়া) আইনের বিধান লঙ্ঘন করেননি এবং সে দুটি ট্রাস্টের অর্থ প্রদান করেছেন তাও সঠিক আছে। কিন্তু নথির পর্যালোচনায় আসামিপক্ষ উপস্থাপিত যুক্তি গ্রহণযোগ্য হয়নি। বিচারক বলেন, সরকারী এতিম তহবিলের টাকা বিধি মোতাবেক এতিমদের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে নামসর্বস্ব জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অনুকূলে এই টাকা স্থানান্তর করেন। সব কিছু বিবেচনা করে এটা প্রতীয়মান যে, আসামিদের বিরুদ্ধে দ-বিধি ৪০৯ ও ১০৯ এবং দুদক আইনের ৫ (২) ধারা প্রমাণিত হয়েছে। ৪০৯ ধারার বিধান মতে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- অথবা যে কোন বর্ণনায় কারাদ-ের মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। আসামিরা একে অপরের সহযোগিতায় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন এবং সে কারণে তাদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন। তবে আসামিদের বয়স ও সামাজিক অবস্থান এবং আত্মসাতকৃত টাকার পরিমাণ বিবেচনায় তাদের যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা সমীচীন হবে না মর্মে আদালত মনে করে। খালেদা জিয়ার কারাদ-ের বিষয়ে বলা হযেছে, আসামিদের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া এদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। তাছাড়াও তিনি একটি রাজনৈতিক দলের কর্ণধার। তিনি একজন বয়স্ক মহিলা। ফলে তার শারীরিক অবস্থা, বয়স এবং সামাজিক পরিচয় বিববেচনা করে দ-বিধির ৪০৯/১০৯ ধারার অধীনে ৫ বছর সশ্রম কারাদ- প্রদান করা সমীচীন বলে মনে হয়। বাকি পাঁচ আসামির ক্ষেত্রেও তাদের বয়স ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে প্রত্যেককে দ-বিধির ৪০৯/১০৯ ধারার অধীনে ১০ বছর সশ্রম কারাদ- প্রদান করা উচিত মর্মে আদালত মনে করে। রায়ে বলা হয়েছে, দ-বিধির ৪০৯ ধারায় আসামিকে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে ‘সশ্রম’ বা ‘বিনাশ্রম ’ দ-ের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু লেখা নেই। সেখানে শুধু ‘ইমপ্রিজনমেন্ট’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এমতাবস্থায় আইন ব্যাখ্যার সূত্র অনুসারে সব আসামিকে সশ্রম কারাদ- প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রায়ে বিচারক বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট কাগজেকলমে প্রতিষ্ঠা করা হলেও বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই। এখানে কোন এতিম বসবাস করে না। অথচ সরকারী এতিম তহবিলের টাকা বেআইনীভাবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে দেয়া হয়েছে। এজন্য খালেদা জিয়া ও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী তাদের দায় এড়াতে পারেন না। কেননা, সরকারী এতিম তহবিলের টাকা স্থানান্তরের পর সেই টাকা যথাযথভাবে খরচ হলো কিনা তা দেখভাল করা তাদের দায়িত্ব। সরকারী এতিম তহবিলের টাকা পাওয়ার পর তা সদ্ব্যবহার না করে তারেক রহমান ও মমিনুর রহমান সেই টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে প্রাইম ব্যাংকে স্থানান্তর করেন। এমন কাজের দায় তারা কোনভাবে এড়াতে পারেন না। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বগুড়ার গাবতলী থানার দাড়াইলে জমি কেনা হলেও সেখানে এখন পর্যন্ত কোন স্থাপনা তৈরি করা হয়নি। আগে কিংবা বর্তমানে কোন সময়ই সেখানে এতিমখানা স্থাপন করা হয়নি। অর্থাৎ খালেদা জিয়া ও কামাল সিদ্দিকী জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে দিয়েছেন অথচ কোন এতিমখানা তৈরি করা হয়নি। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে সরকাি ীঅর্থ বরাদ্দ দেয়ার অপরাধের দায় তারা কোনভাবে এড়াতে পারেন না। আর তারেক রহমান ও মমিনুর রহমান ওই ট্রাস্টের ট্রাস্টি হয়ে সরকারী টাকা থেকে চার লাখ টাকা তুলে নেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা দিয়ে ২ দশমিক ৭৯ একর জমি কিনলেও সেখানে কোন স্থাপনা তৈরি করেননি কিংবা কোন এতিমখানা বানাননি। এভাবে তারা টাকা আত্মসাত প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালের ৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের অনুদান হিসেবে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ১২ লাখ ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার বাংলাদেশে আসে। এটা জমা হয় প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে। আসামিপক্ষ দাবি করেছিল, ওই টাকা এসেছিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে, বাস্তবে তা প্রমাণ করতে পারেনি। ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এফডিআর খোলা হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ আদালতের। রায়ে বলা হয়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দাফতরিক ঠিকানা ঢাকা সেনানিবাসের মইনুল রোড। অথচ এফডিআর খোলার ফরমে ট্রাস্টের দাফতরিক ঠিকানা কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবন লেখা আছে। অস্তিত্ববিহীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ঠিকানা ৬ মইনুল হোসেন রোড; যা ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আবাসিক ঠিকানা। ওই বাসা সরকারী বাসা না হলেও তিনি সেখানে বসবাস করতেন। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পদের যাবতীয় সুযোগ গ্রহণ করে সরকারী দায়িত্ব পালন করেছেন বলে ধরে নিতে হবে। সে কারণে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মতো বেসরকারী ট্রাস্টের ঠিকানা ব্যবহার করার কথা নয়। সাবেক সাংসদ সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন সম্পর্কে রায়ে বলা হয়েছে, তারা ট্রাস্টি না হয়েও পরস্পরের সহায়তায় সরকারী এতিম তহবিলের টাকা আত্মসাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছেন। সৌদি আরব থেকে আসা টাকা কীভাবে সরকারী টাকা; সে বিষয়ে আদালত বলেছে, সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে যে টাকা আসে তা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। তিনি তা ফেরত দিতে পারতেন, কিন্তু তা না করে গ্রহণ করার ফলে ওই টাকা সরকারী সম্পত্তিতে পরিণত হয়। টাকা জমা হয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী এতিম তহবিলের চলতি হিসাবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্যসচিব কামাল সিদ্দিকী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অনুমোদন গ্রহণ করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে টাকা দেন। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার সচিব কামাল সিদ্দিকী সরকারী কর্মচারী হয়েও সরকারী অর্থ সরকারী উদ্দেশ্যে ব্যয় করেননি। বরং একটি বেসরকারী ট্রাস্টের অনুকূলে টাকা দিয়ে দ-বিধির ৪০৯ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ এর ২ ধারার অপরাধ করেছেন।
×