ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ওয়ান্ডারার্সে কোহালি কঠিনতম পরীক্ষার সামনে

প্রকাশিত: ১৯:২৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

আজ ওয়ান্ডারার্সে কোহালি কঠিনতম পরীক্ষার সামনে

অনলাইন ডেস্ক ॥ ওয়ান্ডারার্সে বুধবার থেকে কি তাঁর জীবনের কঠিনতম টেস্ট খেলতে নামছেন বিরাট কোহালি? আশেপাশের কোরাস শুনে সে রকমই মনে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর সব চেয়ে ভাল বন্ধু রয়েছেন— এ বি ডিভিলিয়ার্স। কিন্তু এখন আর বন্ধুত্ব নয়, ডিভিলিয়ার্স-দের শিবির থেকে তোপধ্বনি ভেসে আসছে। মঙ্গলবারও দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসি বলে গেলেন, ‘‘ওয়ান্ডারার্সে যে ভারত কখনও হারেনি, এটা চমকে যাওয়ার মতো রেকর্ড। আমরা ওদের ব্যাটিংকে বেশ চাপে রাখতে পেরেছি এই সিরিজে। আমি পেস আর বাউন্স চেয়েছিলাম। সেটা এখানে পাচ্ছি। নিজেদের ফর্ম ধরে রাখতে পারলে এই রেকর্ডটা পাল্টে ফেলতে পারব।’’ ভারত শুধু এখানে হারেনি তাই নয়, একটি টেস্টও জিতেছে। সেঞ্চুরিয়নে দ্বিতীয় টেস্টে পিচ প্রস্তুতকারক ঘাস উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেঞ্চুরিয়নের মতো গতি বা বাউন্স কিছুই ছিল না। ডুপ্লেসি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বাকি ক্রিকেটারেরা যা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান। ওয়ান্ডারার্সে তাই সবুজ গালিচায় কোহালিদের অভ্যর্থনা জানানোর ব্যবস্থা হয়েছে। চার তলার প্রেস বক্স থেকে দেখা গেল, ম্যাচের এক দিন আগেও সবুজের সমারোহ এতটুকু কমেনি। ঘাস আর ছাঁটা হবে বলেও মনে হচ্ছে না। কোহালি বলে গেলেন, ‘‘কেপ টাউনের চেয়ে এখানে বেশি ঘাস রয়েছে।’’ এর পরেই দ্রুত যোগ করলেন, ‘‘ঘাস থাকায় আমাদের সামনেও ভাল সুযোগ থাকছে। আমাদের বোলাররা দুই টেস্টে চল্লিশ উইকেট নিয়েছে। ওদের চাপে ফেলার মতো বোলিং আমাদের রয়েছে।’’ ভারত অধিনায়ক জানেন, তাঁর দলের আসল সমস্যার জায়গা ব্যাটিং। ওপেনিং ঠিক হচ্ছে না। চেতেশ্বর পূজারা রান পাচ্ছেন না। রোহিত শর্মা-কে খেলানোর সিদ্ধান্ত কাজে আসেনি। সময় খারাপ গেলে সমস্ত অঙ্গই যেন একসঙ্গে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। একমাত্র অধিনায়কের সেঞ্চুরিয়নে ১৫৩ রানের ইনিংস এবং কেপ টাউনে হার্দিক পাণ্ড্য-র কাউন্টার অ্যাটাক বাদ দিলে মহাতারকা ব্যাটিং লাইন-আপ কিছুই করতে পারেনি। কোহালিদের জন্য চাপ আরও বেড়ে গিয়েছে কারণ, এমন ঢাকঢোল বাজিয়ে আর কোনও ভারতীয় দল দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে আসেনি। সিরিজের বিজ্ঞাপনের প্রোমোতে পর্যন্ত বলা হয়েছিল, পঁচিশ বছরে কোনও ভারতীয় দল যা পারেনি, তা করে দেখাতে চলেছে এ বারের টিম। নাম দেওয়া হয়েছিল, বদলার সিরিজ। বদলা কারণ, পঁচিশ বছর ধরে না জেতার শাপমোচন ঘটতে চলেছে। বদলার বারোটা বেজে গিয়েছে, উল্টে এখন সর্বকালীন লজ্জা বাঁচানোর দায় বর্তাচ্ছে কোহালির কাঁধে। নতুন আতঙ্ক এসে পড়েছে যে, আগে কখনও কোনও টিম তো দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফেরেনি। এ বার না সেই লজ্জা সঙ্গী হয়। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আমলে বিদেশে এমন খারাপ রেকর্ড অপেক্ষা করত। কোহালি গর্বিত ক্রিকেটার। টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন হয়েও টেস্টের মঞ্চে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের স্বপ্ন দেখেন। শুধু ব্যক্তিগত লক্ষ্য নয়, দল হিসেবেও সারা বিশ্বে ভাল করতে চান। তাঁর সময়ে যে এমন বিপর্যয় ঘটতে পারে, সেটাই একটা ‘শক’। ওয়ান্ডারার্সের সবুজ পিচের দিকে তাকিয়ে আবার মনে পড়ে যাচ্ছে ২০১০-১১ সফরের ডারবান-কে। হরভজন সিংহ মাঠে ঢুকে সেই পিচ দেখে বলে ফেলেছিলেন, ‘‘এখানে কি ক্রিকেট খেলা হবে নাকি গরু-ছাগল চড়বে?’’ যদিও তিন দিনে শেষ হয়ে যাওয়া সেই টেস্ট ভারত জিতে সিরিজে দারুণ ভাবে ফিরে এসেছিল। এখানে সিরিজ হাত থেকে বেরিয়েই গিয়েছে। পড়ে আছে কোহালিয়ানার গর্ব। সেটাকে রক্ষা করাই চ্যালেঞ্জ। ভারত অধিনায়ক তাঁর আগের বারের সফরে এখানে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছিলেন। যা দেখে অ্যালান ডোনাল্ড বলেছিলেন, সচিনের সেই শৃঙ্খলা দেখতে পেলাম। গত বারের সেঞ্চুরি নিশ্চয়ই সুখস্মৃতি মনে করাচ্ছে, বলে গেলেন কোহালি। একই সঙ্গে মানছেন, ব্যাটিং গ্রুপকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে লড়াই করতে হবে। সুযোগ তৈরি করেও যেমন ছুড়ে দিয়ে এসেছেন কেপ টাউন এবং সেঞ্চুরিয়নে, তা করলে চলবে না। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন অধিনায়ক গ্রেম স্মিথ থেকে শুরু করে ভারতের প্রাক্তন বীরেন্দ্র সহবাগ, তাঁকেই নিশানা করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁর নেতৃত্বের ধরন নিয়ে। দল নির্বাচন নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কে বলবে, তিনিই চলতি সিরিজের একমাত্র সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান। সর্বভারতীয় মিডিয়ার সঙ্গে কোনও দিনই মধুর সম্পর্ক ছিল না কোহালির। সেঞ্চুরিয়নে হারের পরে প্রেস কনফারেন্সে তর্কাতর্কির পরে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছে। এ দিন প্র্যাক্টিসে ব্যারিকেড তৈরি করে সংবাদমাধ্যমকে আরও দূরে সরিয়ে দেওয়া হল। কোহালি সাংবাদিক সম্মেলনে আসবেন কি না, তা নিয়েই সংশয় ছিল। তিনি এলেন ঠিকই, কিন্তু মামুলি সব উত্তর দিতে থাকলেন। একেবারেই সেই আবেগপূর্ণ কোহালি নন। যিনি সব প্রশ্নের উত্তর হৃদয় দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। মনে হচ্ছিল যেন কোহালি নন, সাংবাদিকদের সামনে এসেছেন আবেগহীন তাঁর পূর্বসূরি— ধোনি। শুধু একটা জিনিসে দায়সারা মনোভাব দেখানোর প্রশ্ন নেই। তাঁর আশ্রমিক সংকল্প এবং শৃঙ্খলায়। এ দিন বাধ্যতামূলক প্র্যাক্টিস না থাকায় অজিঙ্ক রাহানে বা আর অশ্বিন-কে নেটমুখো হতে দেখা যায়নি। কোহালি শুধু এলেন-ই না, দু’বার মিলিয়ে প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক ব্যাটিং করলেন। সচিন তেন্ডুলকরীয় সেই পরম্পরা মনে পড়ে যাবে। যত কঠিন সময়, তত কঠিন পরিশ্রমে নিজেকে ডুবিয়ে দাও। ঠিক একই জিনিস তাঁকে করতে দেখা গিয়েছে গত দু’দিন ধরেও। নেট প্র্যাক্টিসে আসা স্থানীয় বোলাররা পর্যন্ত বলছিলেন, ‘‘কোহালি অন্য গ্রহের ব্যাটসম্যান। কী দায়বদ্ধতা প্র্যাক্টিসেও! যেন ম্যাচ খেলছে। অন্যদের থেকে এত আলাদা। ওকে বল করলেই বোঝা যায়।’’ ব্যাট করার সময় দু’বার বেশ জোরে লাগল। এক বার স্থানীয় বোলারের বলে পিঠে। একটু পরে উমেশ যাদবের বাউন্সার থেকে সরতে না পারায় ধড়াম করে এসে লাগল হেলমেটে। উপস্থিত সকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। উমেশ ছুটে এলেন। কোহালি কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে উমেশকে হাত নেড়ে বোলিং চালু করতে বললেন। আবার স্টান্স নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন পরের বল খেলার জন্য। মনে হচ্ছিল, আলেকজান্ডারের সঙ্গে যুদ্ধের আগে পুরুর প্রস্তুতি দেখছি। শুধু বেণী দেব না, বেণীর সঙ্গে দেব মাথা! সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×