ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক ম্যাচে দুই রেকর্ড তামিমের

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

এক ম্যাচে দুই রেকর্ড তামিমের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিশ্বব্যাপঢ সুখ্যাতি নিয়েই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করেছেন, কিন্তু ৬ হাজার ওয়ানডে রান করতে পারেননি দীর্ঘদিন খেলেও। এমন অনেক উদাহরণ আছে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে। তবে মঙ্গলবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৭৬ রানের ইনিংস খেলার পথে সেই মাইলফলক ছুঁয়েছেন বাংলাদেশের বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ক্যারিয়ারের ১৭৭ ওয়ানডের ১৭৫তম ইনিংসে এই কীর্তি গড়েন তিনি ইতিহাসের ৫৫তম ব্যাটসম্যান হিসেবে। অথচ অনেক কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানই ৬ হাজার রান ছোঁয়ার ক্ষেত্রে তামিমের চেয়ে পিছিয়ে। সেই তালিকায় আছে কুমার সাঙ্গাকারা, শিবনারায়ণ চন্দরপল, ইনজামাম-উল-হক, হার্শেল গিবস ও বীরেন্দর শেবাগদের মতো ব্যাটসম্যানদের নাম। এছাড়া একই ভেন্যুতে সর্বাধিক রান করার বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি সনথ জয়সুরিয়াকে ছাড়িয়ে গিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১ বছর পার করা তামিম তিন ফরমেটেই সর্বাধিক রান ও সেঞ্চুরির মালিক বাংলাদেশের পক্ষে। ক্রমেই যেন রেকর্ডের বরপুত্রে পরিণত হচ্ছেন তিনি। ২৮ বছর বয়সেই হয়েছেন অনেক কীর্তির মালিক। বাংলাদেশের হয়ে অনেক ধরনের রেকর্ডই গড়েছেন। যার মধ্যে একটি ছিল প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৫ হাজার ওয়ানডে রান করা। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার ব্যাট হাতে নামার আগে একটি বিশ্বরেকর্ড গড়তে মাত্র ৪২ রানের প্রয়োজন ছিল তার। নির্দিষ্ট একটি ভেন্যুতে সর্বাধিক রান করার বিশ্বরেকর্ড গড়ার জন্য সেই প্রয়োজনীয় রান করে ফেলেন বাংলাদেশের বাঁহাতি ওপেনার তামিম। পেছনে ফেলেন জয়সুরিয়ার করা বিশ্বরেকর্ডকে। লঙ্কান এ কিংবদন্তি ওপেনার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ৭১ ম্যাচ খেলে ৩৮.৬৭ গড়ে করেছিলেন ২৫১৪ রান। সেটি ছিল নির্দিষ্ট এক ভেন্যুতে কোন ব্যাটসম্যানের করা সর্বাধিক রানের রেকর্ড। তাকে পেছনে ফেলেন তামিম এবং যখন শেষ করেছেন তখন মিরপুর স্টেডিয়ামে তার রান হয়ে গেছে ৭৪ ম্যাচের ৭৩ ইনিংস খেলে ৩৫.৯০ গড়ে ২৫৪৯। তিন নম্বরে নেমে গেছেন পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান ইনজামাম-উল-হকও। তিনি শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৫৯ ম্যাচে করেছিলেন ২৪৬৪ রান। তালিকার চার নম্বরে সাকিব আল হাসান। তিনি মিরপুরে করেছেন ৭৬ ম্যাচের ৭৩ ইনিংস ব্যাট করে ৩৯.৪৮ গড়ে ২৩৬৯। নির্দিষ্ট ভেন্যুতে ১০০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অবশ্য ব্যাটিং গড়ে সবার ওপরে রিকি পন্টিং। তিনি মেলবোর্নে ৪১ ম্যাচে ৫৬.৯৭ গড়ে ২১০৮ রান করেছেন। আর নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডেও তামিম পিছিয়ে। এক ভেন্যুতে সর্বাধিক ৭টি করে শতক আছে সাঈদ আনোয়ার (শারজা), পন্টিং (মেলবোর্ন) ও শচীন টেন্ডুলকর (শারজা)। এরপরই ৫টি করে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দ্বিতীয় স্থানে তামিম, তিলকারতেœ দিলশান (পাল্লেকেলে) ও হাশিম আমলা (সেঞ্চুরিয়ন)। নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সর্বাধিক রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েও থামেননি তামিম। চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা তৃতীয় অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন। ৬৬ রানে পৌঁছুতেই আরেকটি মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। ৪৭ বছরের ওয়ানডে ইতিহাসে তামিমের আগে ৫৪ জন ব্যাটসম্যান ৬ হাজার রান পেরিয়েছেন। কিন্তু তামিম প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এবং ক্রিকেট ইতিহাসের ৫৫তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ হাজারি ক্লাবের সদস্য হন। এর মধ্যে তামিমের চেয়ে দ্রুততম ৬ হাজার রান ছোঁয়ার তালিকায় অনেকেই আছেন। তবে সবচেয়ে দ্রুততম বিশ্বরেকর্ডটি দক্ষিণ আফ্রিকার আমলার। তিনি মাত্র ১২৩ ইনিংসেই তা ছুঁয়ে ফেলেন। তামিমের লেগেছে ১৭৫ ইনিংস। তবে তিনি পেছনে ফেলেছেন ইনজামাম (১৭৬ ইনিংস), শ্রীলঙ্কার মারভান আতাপাত্তু (১৮০), নিউজিল্যান্ডের নাথান এ্যাস্টল (১৮২), দক্ষিণ আফ্রিকার গিবস (১৮৪), ওয়েস্ট ইন্ডিজের চন্দরপল (১৯০), ভারতের শেবাগ (১৯০), শ্রীলঙ্কার সাঙ্গাকারা (১৯২) ও যুবরাজ সিং (১৯২), শ্রীলঙ্কার উপুল থারাঙ্গাসহ (১৯২) অনেক ব্যাটসম্যানকেই। এরা সকলেই পরবর্তীতে ক্যারিয়ারে অনেক রান করেই অবসরে গেছেন। কিন্তু অবসরে গেছেন এবং অনেকগুলো ওয়ানডে খেলেও ৬ হাজার রান করতে পারেননি এমন উদাহরণ আছে বিশ্বের খ্যাতিমান অনেক ব্যাটসম্যানেরই। সে তালিকায় উল্লেখযোগ্য অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড বুন (১৮১ ম্যাচে ৫৯৬৪), দক্ষিণ আফ্রিকার জন্টি রোডস (২৪৫ ম্যাচে ৫৯৩৫), পাকিস্তানের রমিজ রাজা (১৯৮ ম্যাচে ৫৮৪১), ওয়েস্ট ইন্ডিজের রামনরেশ সারোয়ান (১৮১ ম্যাচে ৫৮০৪) ও কার্ল হুপার (২২৭ ম্যাচে ৫৭৬১), অস্ট্রেলিয়ার মাইক হাসি (১৮৫ ম্যাচে ৫৪৪২) ও ডেমিয়েন মার্টিন (২০৮ ম্যাচে ৫৩৪৬) ও এন্ড্রু সাইমন্ডস (১৯৮ ম্যাচে ৫০৮৮)। মঙ্গলবার ১০৫ বলে ৬ চারে ৭৬ রান করে শেষ পর্যন্ত সাজঘরে ফেরেন তামিম। বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সাকিবের। তিনি ১৮৩ ম্যাচে ৩৫.১৩ গড়ে ৫২৩৫ রান করেছেন। এখন তামিমের রান ১৭৭ ম্যাচে ৩৫.৩৫ গড়ে ৬০১০। ওয়ানডেতে এক ভেন্যুতে সর্বাধিক রান ব্যাটসম্যান/ভেন্যু ম্যাচ/ইনিংস রান গড় ১০০/৫০ তামিম ইকবাল ৭৪/৭৩ ২৫৪৯ ৩৫.৯০ ৫/১৬ (মিরপুর, শেরেবাংলা) সনথ জয়সুরিয়া ৭১/৭০ ২৫১৪ ৩৮.৬৭ ৪/১৯ (প্রেমাদাসা, কলম্বো) ইনজামাম-উল-হক ৫৯/৫৯ ২৪৬৪ ৫০.২৮ ৪/১৭ (শারজা) সাকিব আল হাসান ৭৬/৭৩ ২৩৬৯ ৩৯.৪৮ ২/২০ (মিরপুর, শেরেবাংলা) সাঈদ আনোয়ার ৫১/৫১ ২১৭৯ ৪৫.৩৯ ৭/১১ (শারজা)
×