ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সেঞ্চুরিয়ানে হার মেনে নেওয়া কঠিন ॥ কোহালি

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

সেঞ্চুরিয়ানে হার মেনে নেওয়া কঠিন ॥ কোহালি

অনলাইন ডেস্ক ॥ হারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে অজুহাত খোঁজা নয়, বিরাট কোহালি বরং সরাসরি নিজেদের দিকেই আঙুল তুললেন। বলে দিলেন, যে ভাবে তাঁরা সেঞ্চুরিয়নে হারলেন, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। ‘‘ক্রিকেটে হার-জিত থাকেই। একটা দল জেতে, অন্যটা হারে। এটাও ঠিক যে, কখনওসখনও হারকে মেনে নিতেও হয়। কিন্তু এ রকম হার মেনে নেওয়া যায় না,’’ দৃশ্যতই হতাশ চোখমুখ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে গেলেন ভারত অধিনায়ক। আরও বলে গেলেন, ‘‘আমি এখানে কাউকে আরাম দিতে আসিনি। খেলায় উন্নতি ঘটাতে গেলে নিজেদের প্রতি কঠোর মনোভাব নিতে হবে। আমরা সুযোগ তৈরি করেছিলাম। যত বার অ্যাডভ্যান্টেজ পেয়েছি, প্রত্যেক বার সেটা প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছি। এ রকম করলে বিদেশে এসে টেস্ট ম্যাচ জেতা যায় না।’’ কোহালি মনে করছেন, দলের সকলকে সততা নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে। সততা নিয়ে ময়নাতদন্ত করতে হবে, কোথায় ভুল হয়েছে। আমাদের টিমের ছেলেরা সেটা করে। বলছি না, ওরা নিজেদের ভুলত্রুটি নিয়ে ভাবে না। কিন্তু তার পরেও আমরা এখানে দু’টো টেস্ট ম্যাচ পর-পর হারলাম। আলগা শটে অনেক উইকেট গিয়েছে। সেগুলো মেনে নেওয়া কঠিন।’’ ০-২ পিছিয়ে পড়ার পরে নানা রকম প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে। কেউ বলছেন, জাতীয় নির্বাচকদের সঙ্গে বসে জুনিয়র ক্রিকেটারদের তালিকা তৈরি করা হোক। ভবিষ্যতের দিক চোখ রেখে এখন থেকে টিম গড়া হোক। কোহালি আলোচনায় যেতে রাজি। বললেন, ‘‘এই এক বছরে আমাদের অনেক বিদেশ সফর আছে। নির্বাচকেরা কী ভাবছেন, সেটা আমি বলতে পারব না। কিন্তু নিশ্চয়ই নির্বাচকদের ভূমিকা থাকবে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করার জন্য। এটাই একমাত্র সফর নয়। এক বছর ধরে বিদেশেই আমরা বেশি খেলব। কোন কোন জায়গায় উন্নতি দরকার সেটা আমাদের চিহ্নিত করতে হবে।’’ সেঞ্চুরিয়নে প্রথম ইনিংসে নিজে করলেন ১৫৩। কিন্তু দলের বাকিরা ব্যর্থ। বরাবরের টিমম্যান কোহালি স্বীকার করতে চাইলেন না যে, তাঁর উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা তৈরি হয়ে গিয়েছে। ‘‘দলের প্রত্যেকেই পারফর্ম করছে। এগারো জন মাঠে নামছে ভারতের জার্সি গায়ে। আমি যেমন সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি, তেমনই বাকি সকলেও চেষ্টা করছে। আমি মনে করি না এই টিমে কোনও ওয়ান ম্যান শো চলছে। আমাদের এই টিমে প্রত্যেকে ভাল খেলেছে। শুধু এখানে এসে আমরা মিলিত ভাবে, টিম হিসেবে পারফর্ম করতে পারিনি। সেটাই তফাত করে দিয়েছে।’’ খুব শান্ত ভাবেই সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন ভারত অধিনায়ক। দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ভারতে এসে ঘূর্ণি পিচে হারছিল, বাইশ গজ নিয়ে তাদের শিবির থেকে রোজ সাংবাদিক সম্মেলনে এসে কিছু না কিছু অভিযোগ জানিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এখানে কোহালি কিন্তু এ দিনও সোজাসাপ্টা বলে দিলেন, ‘‘আমরা এখানে ঘুরতে আসিনি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এসেছিলাম। অভিযোগ জানাতে আসিনি, ইতিবাচক ভঙ্গি নিয়ে ক্রিকেট খেলতে এসেছি।’’ এর পরেও দক্ষিণ আফ্রিকার এক সাংবাদিক আচমকাই ঝাঁঝালো সুরে তাঁকে প্রায় জেরা করতে শুরু করলেন। ‘‘প্রত্যেক ম্যাচেই কেন আপনি প্রথম একাদশ পাল্টে ফেলছেন?’’ অভব্যতার সুরে সেই সাংবাদিক মন্তব্যও করে বসলেন, ‘‘টেস্ট ম্যাচ জিততে গেলে ধারাবাহিকতা দরকার। আপনাদের সেটা নেই।’’ কোহালি এ বার পাল্টা প্রশ্ন না করে পারলেন না। ‘‘আপনি কি জানেন শেষ ৩৪টা টেস্ট ম্যাচের মধ্যে আমরা কতগুলোতে জিতেছি?’’ এই ৩৪টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে কোহালির ভারত জিতেছে ২০টিতে। কিন্তু সেই দক্ষিণ আফ্রিকান সাংবাদিক তখন তাঁর দলের চিয়ারলিডার বনে গিয়েছেন। বললেন, বেশির ভাগই তো আপনাদের ঘরের মাঠে। কোহালির জবাব, ‘‘সেটা কি আদৌ খুব গুরুত্বপূর্ণ? যেখানেই খেলি না কেন, আমরা সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমি এখানে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে এসেছি, লড়াই করতে আসিনি।’’ এর পরে প্রশ্ন হল, এই হারের পরে নিজেদের কি এখনও বিশ্বের এক নম্বর টিম মনে করেন? কোহালি বললেন, ‘‘আমাদের বিশ্বাস করতেই হবে যে, আমরা এক নম্বর। যখন এখানে এসেছিলাম, তখনও বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম যে, এখানে আমরা জিততে পারব। সেই বিশ্বাসটা না থাকলে তো এখানে আসারই কোনও মানে হয় না।’’ তার পরেই আবার সেই দক্ষিণ আফ্রিকান সাংবাদিকের দিকে ঘুরে গিয়ে জানতে চাইলেন, ‘‘স্যার, আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে একটা কথা জিজ্ঞেস করছি। ভারতে এসে দক্ষিণ আফ্রিকা কত বার ম্যাচের মধ্যে ছিল? কত বার ভারতে এসে জেতার কাছাকাছি এসেছিল? আপনি কি গুণতে পারেন?’’ বলে চললেন, ‘‘শুনুন, আমরা এখানে এসে পিচ নিয়ে কোনও অভিযোগ করিনি। কেপ টাউনেও কিন্ত তিন দিনে খেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল। তার পরেও আমরা পিচ নিয়ে প্রশ্ন তুলিনি।’’ এক ভারতীয় ফ্রিল্যান্সার এ বার প্রশ্ন করলেন, সঠিক প্রথম একাদশ নিয়ে নামতে পারলেন না কেন? কোহালির জবাব, ‘‘সঠিক টিমটা কী? আপনি জানিয়ে দিন, পরের টেস্টে তা হলে সেটাই খেলিয়ে দেব।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×