ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ হানাদার মুক্ত দিবস যেখানে-

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

আজ হানাদার মুক্ত দিবস যেখানে-

বগুড়া স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ দেশ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর বগুড়া হানাদার মুক্ত শুরু হয়। এই দিন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর সমুখ সমরে টিকতে না পেরে হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পরাস্ত হয়। মহাস্থানগড়ে মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ে গঠিত মিত্র বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানী সেনারা বগুড়া নগরীর দিকে পালাতে থাকে। ১০ ডিসেম্বর ভোরে মিত্র বাহিনীর ৬৪ মাউন্টেন রেজিমেন্টের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার প্রেম সিং বগুড়া শহরের উত্তর দিকে ঠেঙ্গামারা এলাকার লাঠিগাড়িতে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার লোকজন হানাদার পাকিস্তানী সেনাদের তাড়া করলে কোনভাবেই টিকতে পারে না। তারা আত্মসমর্পণের মেসেজ পাঠায়। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পাকিস্তানী সেনাদের আত্মসমর্পণের আয়োজন করা হয় নগরীর উত্তর দিকে শহরতলির বৃন্দাবনপাড়ায় সুলতান সাহেবের বাড়ির সামনের উঠানে (স্থানীয় ভাষায় খুলি)। ১৩ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার এলাহী বক্স তার ৪শ’ সৈন্য নিয়ে মিত্র বাহিনীর ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার প্রেম সিংয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর পরই উত্তরাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেনারেল নাজার হুসেন শাহ বগুড়া সেনানিবাস থেকে নাটোরে পালিয়ে যায়। ১৬ ডিসেম্বর বিকেলের মধ্যেই মিত্রবাহিনী বগুড়া সেনানিবাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। মিত্র বাহিনীর জেনারেল লাছমান সিং পাকিস্তানী জেনারেল নাজারকে বগুড়ায় আনার জন্য ব্রিগেডিয়ার রাঘুবর সিংকে হেলিকপ্টারে নাটোর পাঠিয়ে দেন। ১৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানী জেনারেল নাজার বগুড়ায় এসে মিত্র বাহিনীর জেনারেল লাছমান সিংয়ের কাছে নিজের পিস্তল তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। মূলত বগুড়ার পাকিস্তানী সেনাদের পতন শুরু হয় ১৩ ডিসেম্বর, পতনের আনুষ্ঠানিক সমাপন হয় ১৮ ডিসেম্বর। নীলফামারী স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, আজ ১৩ ডিসেম্বর বুধবার নীলফামারী পাক হানাদার-মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা নীলফামারীকে হানাদার মুক্ত করে উত্তোলন করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। সে সময় ৬ থানা নিয়ে নীলফামারী ছিল একটি মহকুমা শহর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নীলফামারীর অগণিত ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষ স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম শুরু করে। পরবর্তী পর্যায়ে ভারতে সশস্ত্র ট্রেনিং নেয়ার পর ৬ নম্বর সেক্টরের অধীন মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে পরাস্ত করতে শুরু করে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের কমান্ডার ফজলুল হক বলেন নীলফামারী ৬ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিল খাদেমুল বাশার। যুদ্ধ ক্ষেত্রে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত ও শহীদ হন। চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ১২ ডিসেম্বর রাতে পাক-হানাদার বাহিনী নীলফামারী শহর ছেড়ে আশ্রয় নেয় সৈয়দপুর সেনানিবাসে। ১৩ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করলে রাস্তায় নেমে আসে স্বাধীনতাকামী হাজারো মানুষ। এ সময় স্থানীয় চৌরঙ্গী মোড়ে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। দিনটিকে স্মরণ করতে বুধবার জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট হাতে নিয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী। এর মধ্যে আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও মুক্তিযুদ্ধের গান রয়েছে। রূপগঞ্জ নিজস্ব সংবাদদাতা রূপগঞ্জ থেকে জানান, আজ ১৩ ডিসেম্বর। রূপগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজধানীর কোলঘেঁষা রূপগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়। এদিনে মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পাকহানাদার বাহিনী রূপগঞ্জ ছেড়ে কুমিল্লা জেলা অভিমুখে পালিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের ৩ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ (বীর উত্তম), গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) ওরফে গফুর কমান্ডার গ্রুপ ও তৎকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল জব্বার খান পিনু গ্রুপসহ প্রায় দুই হাজার মুক্তিযোদ্ধার বিশাল বাহিনী সেদিন বিজয় পতাকা উত্তোলন করে রূপগঞ্জকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন। ধামইরহাট নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর নওগাঁ সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। ওইদিন পাকি হানাদার বাহিনী তাদের সব কিছু গুটিয়ে নিয়ে চলে যায় এবং ওই দিনই উপজেলাবাসী হানাদার মুক্ত হয়। নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইরহাট। সারাদেশের ন্যায় এ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন বয়সী মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সীমান্তের ওপারে ভারত হওয়ায় অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা ভারতের বিভিন্নস্থানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে উপজেলার বিভিন্নস্থানে পাকি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। ডিসেম্বর মাসের প্রথমদিকে পাকি বাহিনী পরাজিত হতে থাকে। এ ধারাবাহিকতায় এ উপজেলা ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পাকি বািহনী তাদের সব কিছু গুটিয়ে নিয়ে চলে যায়। ওই দিন এ উপজেলাবাসী হানাদার মুক্ত হয়।
×