ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অদ্ভুত মাদক নিরাময় কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

অদ্ভুত মাদক নিরাময় কেন্দ্র

আমাদের দেশে মাদকাসক্তি এখন বড় ধরনের সমস্যা। বিশ্বের বেশিরভাগ মাদকাসক্তের চিকিৎসার সুবিধা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুযায়ী, সে দেশের মাত্র ১০.৪ শতাংশ মাদকাসক্ত ব্যক্তি চিকিৎসার সুবিধা পান। গরিব দেশগুলোতে এ অবস্থা আরও শোচনীয়। তবে মাদকাসক্তদের জন্য এখন বেশ কিছু নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু সেগুলো এতটা অদ্ভুত হয়ত নয়। আসুন জেনে নেই, বিশ্বের অদ্ভুত কিছু মাদক নিরাময় কেন্দ্রের তথ্য। থাইল্যান্ডের পুনর্বাসন কেন্দ্র ॥ থাইল্যান্ডে ফ্রা পুত্থাবাতের কাছে থামক্রাবক মঠ। এখানে মাদকাসক্তদের ভিন্ন উপায়ে চিকিৎসা করা হয়। আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্তদের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়ার চেষ্টা করেন মঠের সন্ন্যাসীরা। বমনের মাধ্যমে শুদ্ধি ॥ এখানে সাধারণত মাদকাসক্তদের ১০দিনের একটি কর্মসূচিতে রাখা হয়। তবে এর মধ্যে বহির্বিশ্বের সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষমতা গড়ে না উঠলে আরও দীর্ঘ সময় সেখানে থাকতে পারেন তারা। ভোর বেলা প্রত্যেককে একটি পানীয় খেতে বাধ্য করা হয়, যার ফলাফল বমি। মঠের সন্ন্যাসীদের মতে পানীয়টি খুবই বাজে, কিন্তু কার্যকর। এছাড়া মঠ ছাড়ার আগে প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে অঙ্গীকার করতে হয় যে, সে আর কখনও মাদক ছুঁয়ে দেখবে না। আধ্যাত্মিক চেতনা ॥ পেরুর আয়াহুয়াস্কা নিরাময় কেন্দ্রে প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্ত থেকে মুক্তির চিকিৎসা নিতে যান। সেখানকার আদিবাসীদের বিশ্বাস আয়াহুয়াস্কা প্রত্যেকের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়। তবে পশ্চিমা চিকিৎসকদের মতে এ ধরনের চিকিৎসার ফলে ভয়ের স্মৃতি, বমি, প্রচুর ঘাম এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই বিশ্বের অনেক দেশে এখন আয়াহুয়াস্কা নিষিদ্ধ। ধর্মীয় পন্থা ॥ ব্রাজিলের রিও ডি জানেরোর পুনর্বাসন কেন্দ্র এটি। এখানে আধ্যাত্মিক উপায়ে চিকিৎসা করা হয়। প্রতিদিন সকালে সব মাদকাসক্ত ব্যক্তি জড় হয়ে ঈশ্বরের বন্দনা করেন। প্রত্যেককেই একটি গির্জার পাশে থাকতে দেয়া হয়। শিকল বেঁধে চিকিৎসা ॥ আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে জালালাবাদে একটি মাজারে শিকল দিয়ে ৪০ দিন বেঁধে রাখা হয়। তাদের খেতে দেয়া হয় একটু রুটি, অল্প পানি আর একটু মরিচের গুঁড়া। আধ্যাত্মিক সাহায্য ॥ আফগানিস্তানে একটি কেন্দ্রে মাদকাসক্তদের বেধে রাখা হয়। এই ধারণা কেবল আফগানিস্তানেই নয় বিশ্বের অনেক স্থানে রয়েছে। কিছু স্থানে মাদকাসক্তদের শাস্তি দেয়া হয়, এমনকি হত্যা করাও হয়। শ্রমিক শিবির ॥ চীনে মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন হয় জেলখানায়। কারাদণ্ড হওয়ার পর ঐ ব্যক্তিকে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কোকেইন, হেরোইন বা মারিজুয়ানা নিয়ে কেউ ধরা পড়লেও একই শাস্তি। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, চীন মাদকাসক্তদের ক্লিনিকগুলোকে শ্রমিক ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে। অর্থাৎ তাদের দিয়ে নানা কাজ করিয়ে নেয়। মৃত্যু অভিজ্ঞতা ॥ কিরঘিজস্তানে যে পুনর্বাসন পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় তা ভয়াবহ। এটাকে বলা হয় ‘কোমা চিকিৎসা’। মাদকাসক্তদের একটি ইনজেকশন দেয়া হয় যার প্রভাবে তারা কয়েক ঘণ্টা কোমার মতো অবস্থায় থাকে। এরপর যখন তারা ঘুম থেকে জেগে ওঠে তখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায় বলে বিশ্বাস সেখানকার মানুষের। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এর ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। বিলাসবহুল পন্থা ॥ অনেক তারকা মাদকাসক্ত থেকে মুক্তি পেতে বিলাসবহুল পথ বেছে নেন। সবচেয়ে বিখ্যাত পদ্ধতিটি হয় আমেরিকার বেটি ফোর্ড ক্লিনিকে। এখানে বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ও অভিনেতারা চিকিৎসা করান। এই ক্লিনিকে এমন কিছু সুযোগ-সুবিধা থাকে যাতে আপনার মনে হবে আপনি একটি বিলাসবহুল হোটেলে আছেন।
×