ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চীন, জাপান, ভারত ও রাশিয়ার প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ আসা শুরু , সৌদি আরবের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ ঘোষণা শীঘ্রই

সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক পদক্ষেপ ॥ আস্থা ফিরেছে বিনিয়োগে

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২০ নভেম্বর ২০১৭

সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক পদক্ষেপ ॥ আস্থা ফিরেছে বিনিয়োগে

এম শাহজাহান ॥ বিনিয়োগে আস্থা ফিরেছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের। অর্থনীতির প্রধান প্রধান সূচকে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর, অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জ্বালানির নিশ্চয়তাই এর কারণ। চীন, জাপান, ভারত ও রাশিয়ার প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে। সৌদি আরবের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ ঘোষণা হবে শীঘ্রই। রূপকল্প ভিশন-২১ বাস্তবায়ন, মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হতে সরকার অগ্রাধিকারভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকীতে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ লাখ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ১ কোটি ২৯ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করছে সরকার। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নেয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচী। এজন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো, গ্যাসের পরিবর্তে কয়লা ও বিদ্যুতভিত্তিক কারখানা প্রতিষ্ঠা, বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর যথাযথ বাস্তবায়ন, অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারী বিনিয়োগে অগ্রাধিকার, দ্রুততম সময়ে দশটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব বাড়ানো, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের সকল প্রতিবন্ধকতা অপসারণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, উৎপাদনে নৈপুণ্য উন্নয়ন এবং বহির্বাজার সম্প্রসারণের মতো কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে ১৩ ধরনের আমলাতান্ত্রিক বাধা ছিল তা দূর হতে শুরু করেছে। বিদ্যুত ও গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোসহ অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেয়া হয়েছে। সরকারের এসব কর্মসূচীতে আস্থা ফিরেছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও। চীন, জাপান, ভারত, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তারা এদেশে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিজয় দিবস সামনে রেখে মধ্যপ্রাচ্যের বড় অর্থনীতির দেশ সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ওই সফরের সময় তারা বড় অঙ্কের বিনিয়োগের ঘোষণা দেবেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে ধারাবাহিকভাবে। সুদের হারে এখন স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট এবং চলতি আয় ইতিবাচক। মাথাপিছু আয় বাড়ছে। অকালবন্যা ও অতিবৃষ্টিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়লেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থনীতির প্রধান এসব সূচকে ইতিবাচক ধারা বজায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাই বিনিয়োগের জন্য স্বস্তিদায়ক বিষয়। এছাড়া বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন জমি, বিদ্যুত, গ্যাস, ট্রেড লাইসেন্স, আমদানি-রফতানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট, পরিবেশ ছাড়পত্র, টিআইএন ও ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, কারখানার নিবন্ধন, ব্যাংক ঋণ, ইন্স্যুরেন্স ও অগ্নিনিরাপত্তা সনদসহ ১৫ ধরনের সেবা। এসব সেবা এখন বিনিয়োগ বোর্ড ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। সরকারী অফিসগুলোতে কার্যকরভাবে ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ করা, ঢাকার বাইরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ প্যাকেজ সুবিধা চালু, বিশেষ বিশেষ শিল্পে কর অবকাশ সুবিধা প্রদান, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, ইউটিলিটি সার্ভিসসহ দ্রুত অর্থনৈতিক জোনগুলো তৈরি করা হচ্ছে। অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে অনেক দেশই এখন বাংলাদেশমুখী হচ্ছেন। ব্যাংক সুদের হার আরও কমানো যেতে পারে। উচ্চ সুদ দিয়ে কখনও কোন দেশে শিল্পায়ন হয়নি, বাংলাদেশেও হবে না। বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে রাষ্ট্রের সহযোগিতা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। চীন যা পারছে তা বাংলাদেশের ধোলাইখালেও সম্ভব। এজন্য সহায়ক শিল্পনীতি করতে হবে। এদেশের কত হাজার কোটিপতি রয়েছেন আর কতজন কর দেন ও কারা মানিলন্ডারিং করছেন তা খুঁজে বের করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে সরকারী-বেসরকারী উভয় খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। সমস্যা অর্থনৈতিক কিন্তু তা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। বিদ্যমান বিনিয়োগের দক্ষতা বাড়ানোর কৌশল ॥ বিদ্যমান বিনিয়োগের দক্ষতা বাড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিকভাবে দুটি বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ গড়ে তোলা এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে সহায়তা প্রদান করে কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো। এ লক্ষ্যে চলতি বাজেটে মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রাথমিকভাবে বিদ্যমান বিনিয়োগের দক্ষতা বাড়ানো গেলেও উৎপাদন ও সেবার মান প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিনিয়োগ। কয়েক বছর ধরে সরকারী খাতের বিনিয়োগ কয়েকগুণ বাড়লেও বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পায়নি। যদিও দেশী-বিদেশী নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন বিনিয়োগ করে উৎপাদন পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। উদ্যোক্তারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থেকেই নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসেন। কিন্তু ঘোষিত রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন এবং ওই সময়ের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের কাতারে নিয়ে যেতে হলে বিদ্যমান বিনিয়োগের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন। দেশে যে বিনিয়োগ আছে, তার সঠিক ব্যবহার করা গেলে উৎপাদন ও সেবার মান প্রায় দ্বিগুণ করা সম্ভব। তাই আগামী বাজেটে বিদ্যমান বিনিয়োগের দক্ষতা বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। সরকারী বিনিয়োগে অগ্রাধিকার ॥ সরকারী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এবারের বাজেটেও প্রবৃদ্ধিসহায়ক খাতসমূহে অগ্রাধিকার দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। বিশেষ করে ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো খাত বিদ্যুত, জ্বালানি, পরিবহন, যোগাযোগ, বন্দর উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইসিটি খাতে অধিকতর সম্পদ সঞ্চালন করা। ঘোষিত রূপকল্প-২১ সাল নাগাদ বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। এ লক্ষ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন, পুরাতন কেন্দ্রগুলোর সংস্কার, বিদ্যুত সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পর্যায়ক্রমে প্রিপেইড মিটার স্থাপন, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় বিদ্যুত আমদানি, জ্বালানি উৎস বহুমুখীকরণ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। এছাড়া পরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কসমূহকে চার লেনে উন্নীতকরণের চলমান কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার পদক্ষেপ রয়েছে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন রাস্তা দ্রুত সম্পন্ন করার মতো বিষয় রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে জোর দেয়াসহ দ্রুত সময়ের মধ্যে বৃহৎ আট প্রকল্পের কাজ শেষ করা। একই সঙ্গে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব পিপিপি কার্যক্রমের প্রতিবন্ধকতা দূর করে বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করেছেন। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে সারাদেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এর ফলে রফতানি আয় বৃদ্ধি পাবে, অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার এবং কর্মসংস্থান হবে আরও ১ কোটি মানুষের। ইতোমধ্যে সরকারী-বেসরকারী মিলে ৩০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে; যার মধ্যে ২৫টির বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। ব্যক্তি খাতের প্রতিবন্ধকতা দূর করা ॥ ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে যেসব প্রতিবন্ধতা রয়েছে তা দূর করা হবে। এজন্য বিদ্যুত, গ্যাস প্রাপ্তিতে বিলম্ব, বিনিয়োগ প্রক্রিয়াকরণে প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা, জমির সঙ্কট দূর করা এবং উচ্চ ঋণের সুদ কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, বিনিয়োগের জন্য অবকাঠামো বড় সমস্যা। পাশাপাশি রয়েছে ব্যাংক ঋণের অতিরিক্ত সুদ। এছাড়া কারখানা স্থাপনের পরও উদ্যোক্তারা বিদ্যুত ও গ্যাসের সংযোগ পাচ্ছে না। গ্যাস সংযোগ তো বন্ধই রাখা হয়েছে। এই বাস্তবতায় বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো কঠিন। তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার কিছুটা কমেছে কিন্তু বিনিয়োগ বাড়াতে হলে এটা সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে হবে। এফবিসিসিআই থেকে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এদিকে, অবকাঠামো খাত উন্নয়নে পাঁচ দেশের বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে। প্রতিটি দেশের বিনিয়োগকারীর জন্য হবে পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই পাঁচ দেশ হচ্ছে চীন, জাপান, ভারত, রাশিয়া ও সৌদি আরব। সৌদি আরব ব্যতীত অন্য চারদেশের সঙ্গে ইতোমধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। আর সৌদি আরবের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে। শীঘ্রই সৌদি আরবের সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসছে। ওই সফরের সময় বাংলাদেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করার ঘোষণা দেবে সৌদি আরব। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মেয়াদে দেশে প্রায় ৫ গুণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের ধারাবাহিকতা এবং বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকা- নিয়ন্ত্রণে থাকায় আস্থা বেড়েছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীর। জঙ্গীবাদ, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়নসহ বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ আকর্ষণে ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন। এছাড়া যেসব সঙ্কট ও বাধা রয়েছে তা দূর করার জন্য বলেছেন। ইতোমধ্যে এসব সঙ্কট দূরীকরণে ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন প্রণয়নসহ আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগ বাড়াতে অবকাঠামো উন্নয়নে ফাস্ট ট্র্যাকখ্যাত দশ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। শিল্পের চাকা সচল রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বিদ্যুত উৎপাদনে। এছাড়া ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে। অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক, প্রকৃত এবং রাজস্ব খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জানা গেছে, এই পাঁচ দেশের সঙ্গে করা বিনিয়োগ-বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গত কয়েক বছরে শুধু চীনের সঙ্গে প্রায় শতাধিক চুক্তি করা হয়েছে। এসব চুক্তির মধ্যে রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, কর্ণফুলী নদীর ওপর প্রস্তাবিত দ্বিতীয় রেল সেতু, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ভায়া রামু ও রামু থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুনধুম পর্যন্ত প্রস্তাবিত ডুয়েল গেজের রেললাইন নির্মাণ এবং তৃতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি নেটওয়ার্কের সহায়তা প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে এসব চুক্তির তেমন কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। এই বাস্তবতায় এবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চুক্তি বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বিনিয়োগ আকর্ষণে যা করা হচ্ছে ॥ বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ২৫-২৮ মে জাপান সফরকালে এবং ২০১৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরকালে দু’দেশের মধ্যে বেশ কিছু চুক্তি, সমঝোতা স্মারক করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালের ৬-১১ জুন গণচীন সফরকালে এবং চীনের প্রেসিডেন্ট ২০১৬ সালের ১৪-১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সফরকালে দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি, সমঝোতা স্মারক বিষয়ে সভা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ৩-৬ জুন সৌদি আরবে দ্বিপাক্ষিক সফর করেন। এছাড়া তিনি গত ১৫-১৬ জুলাই আসেম সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য মালয়েশিয়া সফর করেন। ওই সময়ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে বলেন চীন, জাপান, রাশিয়া, সৌদি আরব, ভারত ও কোরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ আনার চেষ্টা চলছে। এ কারণে বিনিয়োগ-বাণিজ্য সংক্রান্ত যেসব চুক্তি করা হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করছে সরকার। বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব ॥ ভারত-চীন-জাপানের পর বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে এবার মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় উৎপাদনমুখী শিল্প ও অবকাঠামো খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দেশটি। আর এক্ষেত্রে সৌদি আরবের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। বিদ্যুত-গ্যাস, ঢাকা-চট্টগ্রাম সুপার হাইওয়ে, মংলা ও পায়রা পোর্ট উন্নয়নসহ এ রকম বড় বড় দশটি খাতে বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব। সৌদি আরবের উদ্যোক্তাদের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সংগঠন জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল শীঘ্রই ঢাকা সফরে আসছে। বিদেশী বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ॥ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বলছে, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী (এফডিআই) বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাময় দেশ। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে ভারত, চীন, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং আমেরিকার মতো রাষ্ট্রের বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সবচেয়ে বেশি জরুরী হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ন্যাশনাল কনফারেন্স অন ট্রেড এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আঙ্কটাড) বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিডা। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্ব বিনিয়োগ পরিস্থিতির স্থবিরতার মধ্যেও বাংলাদেশে এফডিআই বেড়েছে। আগের বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ২০১৬ সালে এফডিআই এসেছে ২৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। স্বাধীনতার পর দেশে এটিই সর্বোচ্চ পরিমাণ। এ প্রসঙ্গে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সাল বিশ্ববিনিয়োগের মন্দার বছর গেছে। সে তুলনায় বাংলাদেশের এফডিআই খুব কম বলা যাবে না।
×