জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দুইদিন পর গৃহবন্দী থেকে প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে এসেছেন জিম্বাবুইয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। ওইদিন দেশটির রাজধানী হারারের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বক্তৃতাও দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (১৭ নবেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে এমনটাই জানা গেছে। খবর বিবিসি ও ইয়াহু অনলাইনের।
খবরে আরও বলা হয়, স্থানীয় সময় শুক্রবার হারারে ওপেন ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে নীল ও সবুজ গাউন পরে এসেছিলেন মুগাবে। তার মাথায় ছিল নীল-হলদে রঙের টুপি। এর আগে গত ১৪ নবেম্বর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর জিম্বাবুইয়ের প্রেসিডেন্ট মুগাবেকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়।
বক্তব্য দেয়ার সময় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ঘোষণা করলে উপস্থিত অতিথিরা মুগাবেকে স্বাগত জানায়, যিনি টানা ৩৭ বছর ধরে জিম্বাবুইয়ের ক্ষমতায় রয়েছেন ! তবে ওই সময় তার সঙ্গে কাউকে দেখা যায়নি। উপস্থিত ছিলেন না সেনাপ্রধানও।
২০১৮ সালে জিম্বাবুইয়ের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার উত্তরসূরি কে হবেন-এই নিয়ে দেশটিতে রাজনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। এর জের ধরেই গত সপ্তাহে স্ত্রীর পরামর্শে সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাগবাকে বহিষ্কার করেন মুগাবে। এরপরই মূলত দেশটিতে অস্থিরতার সূত্রপাত হয়। সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ৭৫ বছর বয়সী নানগাগবাকে মুগাবের উত্তরসূরি ধরা হচ্ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্টের স্ত্রী গ্রেসও নিতে চান ক্ষমতার স্বাদ। গ্রেস দেশটির যুব সম্প্রদায়ের কাছে বেশ জনপ্রিয়। আর এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়ে ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি।
এ দ্বন্দ্বের মধ্যে গত ১৬ নবেম্বর সেনাবাহিনী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা মুগাবে সরকারের বেশ ক’জন মন্ত্রী এবং গ্রেসের সমর্থক ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের প্রধান কুদজাই চিপানাগাকেও আটক করে। ওইদিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল সিবুসিসো মোয়ো বলেন, সরকারের কর্তৃত্ব নেয়া সেনাদের উদ্দেশ্য নয়। প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে ঘিরে থাকা ‘অপরাধীদে’র দলকে লক্ষ্য করে এ অভিযান চালানো হচ্ছে। এরপর ওই দিন থেকেই নিজ বাড়িতে ‘গৃহবন্দী’ অবস্থায় রাখা হয় মুগাবেকে।
বিবিসি জানায়, জিম্বাবুইয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয়া সেনাবাহিনী মুগাবেকে পদত্যাগের চাপ দিচ্ছে। তবে তাতে তিনি রাজি হননি। নিজেকে এখনও জিম্বাবুইয়ের প্রেসিডেন্ট বলেই দাবি করছেন মুগাবে।
এদিকে ৯৩ বছর বয়সী মুগাবেকে গৃহবন্দী করার পরপরই তাকে ছেড়ে নামিবিয়া পালিয়ে গেছেন তার স্ত্রী পঞ্চাশোর্ধ গ্রেস মুগাবে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে যাচ্ছে নামিবিয়া সরকার। সেনাবাহিনীর এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে ভাল কিছু হলে জনগণকে জানানো হবে অচিরেই। মুগাবের শাসনে দেশে শিক্ষার হার বাড়লেও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশটির অর্থনীতির পতন ছিল অব্যাহত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতির বদলে বিশৃঙ্খলা এবং ধস নামতে থাকে।
মুগাবে শাসনামলে অনেকে কোটিপতি হলেও সমাজের বাকি অংশে দারিদ্র্য বাড়তে বাড়তে তীব্র খাদ্যাভাবে পৌঁছেছে। এর মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে ব্যাপকভাবে। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এত বেশি পরিমাণে নোট ছাপায় যে, জিম্বাবুইয়ান ডলারের দাম অতিরিক্ত হারে কমে তীব্র মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।
এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা পেলে জিম্বাবুইয়ের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন মুগাবে। ক’বছর প্রধানমন্ত্রী থাকলেও ১৯৮৭ থেকে আফ্রিকার দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: