ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজনীতির মহাকাব্য গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

রাজনীতির মহাকাব্য গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের বিশ্লেষণ নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : রাজনীতির মহাকাব্য’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেছেন। পাশাপাশি তিনি গ্রন্থটির ডিজিটাল ভার্সন ই-বুক ও মোবাইল এ্যাপ্লিকেশনও উদ্বোধন করেন। তিনি সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে সভা শুরুর আগে বইটির মোড়ক উন্মোচন এবং ই-বুক এবং মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন উদ্বোধন করেন।খবর বাসস’র। ২২৪ পৃষ্ঠার ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : রাজনীতির মহাকাব্য’ গ্রন্থের মুখবন্ধ রচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ থেকে বাছাইকৃত ২৬টি বাক্যের বিশ্লেষণ করেছেন দেশের খ্যাতিমান লেখক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা। ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : রাজনীতির মহাকাব্য’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। গ্রন্থটির পরিকল্পনা ও প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধান সম্পাদক আইসিটি বিভাগের সাবেক সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক ও আইসিটি বিভাগের এলআইসিটি প্রকল্পের কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট অজিত কুমার সরকার। প্রচ্ছদ এঁকেছেন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক অধ্যাপক হাশেম খান। ভাষণের শুরুর দিকে ‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়’ বাক্যের বিশ্লেষণ করেছেন শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক মুস্তাফা নূর-উল ইসলাম এবং শেষ বাক্য ‘জয় বাংলা’র ওপর বিশ্লেষণ করেছেন প্রখ্যাত লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। এছাড়াও অন্যান্য বাক্যের বিশ্লেষণ করেছেন ইমিরেটাস প্রফেসর আনিসুজ্জামান, প্রফেসর মুনতাসীর মামুন, ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ডাঃ এস এ মালেক ও সেলিনা হোসেনসহ অনেকে। মুখবন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্ব ইতিহাসে যুগ সৃষ্টিকারী সেরা ভাষণগুলোর একটি। বাঙালির মুক্তির সড়ক বিনির্মাণে অনন্য দূরদর্শী ভাষণ এটি। এ ভাষণ ভাব, ভাষা, শব্দ চয়ন মানব যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি বাক্য প্রয়োগে উঠে এসেছে একটি জাতির ইতিহাস, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের সংগ্রাম ও জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা। এতে রয়েছে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পাকিস্তানী স্বৈরশাসক, বণিক, শিল্পপতি- যারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর শোষণ ও নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছিলেন, তাদের কবল থেকে মুক্তির কথা। ভাষণে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মুক্তির দাবি; পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসন থেকে বাঙালীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের কথা। উচ্চারিত হয়েছে মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জনগণকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান; কোন্ কৌশলে যুদ্ধ ও জনযুদ্ধ পরিচালিত হবে তার নির্দেশনা। এছাড়া ঘোষণা করা হয়েছে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য সর্বাত্মক ত্যাগ স্বীকারের বজ্রশপথ। প্রধানমন্ত্রী আরও লিখেছেন, ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ কেননা, স্বাধীনতা যতটা রাজনৈতিক-ভৌগোলিক, মুক্তি ততটাই অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক। এটাই ছিল মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং তা অর্জনের জন্য সর্বস্তরের জনগণকে প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান। একটি জাতি স্বাধীন হলেই মুক্ত হয় না। বঙ্গবন্ধু সেই মুক্তি চেয়েছিলেন, যা স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলে। এজন্যই তিনি প্রথমে মুক্তি ও পরে স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন। মুক্তি মানে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সকল ধরনের শোষণ-বৈষম্য থেকে মুক্তি। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইউনেস্কোর একটি উপদেষ্টা কমিটি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে দেয়া বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে ভাষণটি এখন ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল’র তালিকায় স্থান পেয়েছে।
×