ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২০ অক্টোবর ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ভাল কাজগুলো নীরবে হয়। প্রচারে তেমন আসে না। হয়ত তাই গত কয়েকদিন ধরে চলা আন্তর্জাতিক ক্যান্সার মেডিক্যাল মিশন সম্পর্কে রাজধানী ঢাকার অনেকেই অবগত নন। হ্যাঁ, রোগীরা জানেন। তাদের তো জানতেই হবে। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এবং এই চিকিৎসা সেবা দিতে সুদূর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসেছেন একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ নার্স। মানসেবার ব্রত নিয়ে ঢাকায় এসেছেন তারা। চিকিৎসা সেবা দেয়ার পাশাপাশি দেশের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সদের দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করছেন। গত ১৩ অক্টোবর থেকে মহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে শুরু হয়েছে মেডিক্যাল মিশন। ‘পার্টনার্স ফর ওয়ার্ল্ড হেলথ’র সহযোগিতায় বিশেষ এই মেডিক্যাল মিশনের আয়োজন করেছে রোটারি ক্লাব অব ঢাকা ম্যাভেরিক্স। বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা এখন অনেক। এর ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ওর ক্যান্সার লাস্ট স্টেজে। নিয়মিতই শোনা যায় এ ধরনের দুঃসংবাদ। মৃত্যুর খবরও কম আসছে না। দেশের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরা রোগটির কাছে হার মেনেছেন। একেবারে চোখের সামনেই আছে বেশকিছু উদাহরণ। তবে ক্যান্সারে মৃত্যুর ঝুঁকি যেমন আছে, তেমনি আছে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠার সুযোগ। সীমিত সাধ্যের রোগীরা এই সুযোগ খুব একটা কাজে লাগাতে পারেন না। এবং তাদের কথা বিবেচনায় নিয়েই আয়োজন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্যান্সার মেডিক্যাল মিশন। মিশনের খুব উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এতে ৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ৩ জন বিশেষজ্ঞ নার্স যোগ দিয়েছেন। বিদেশী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন স্বনামধন্য মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট রবার্ট হরোইটস, ট্রেইসি এফ. ওয়েসবার্গ, রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট আরুল মাধবন ও সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট সুজান হুকস্ট্রা। বিশেষজ্ঞ নার্সদের মধ্যে রয়েছেন লোরা বি. হারগ্রিভস, জুলিয়েট এম. কোহেন এবং এলিজাবেথ এ. ম্যাকলেলান। বিশেষজ্ঞ দলটি ইতোমধ্যে বহু সংখ্যক রোগীকে বিনা খরচে ক্যান্সারের চিকিসা প্রদান করেছে। দেশীয় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে নিয়ে প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা বিনিময়, স্কিল ট্রান্সফার, জয়েন্ট সার্জারিসহ নানা কর্মকা- পরিচালনা করছেন তারা। দেশীয় চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে ওয়ার্ডে গিয়ে রোগী দেখছেন। আলাদা আলাদাভাবেও বসছেন ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে। চলছে নানা সভা সেমিনার। এভাবে নিজেদের আরও সমৃদ্ধ করার সুযোগ পাচ্ছেন ঢাকার চিকিৎসক ও নার্সরা। এখানেই শেষ নয়, বিদেশী চিকিৎসকরা সঙ্গে করে বহু টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি ওষুধপত্র নিয়ে এসেছেন। সবই তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে দিয়ে যাবেন। বিনামূল্যে বহু দামী যন্ত্রপাতি পাবে হাসপাতালগুলো। সব মিলিয়ে চমৎকার একটি মিশন। এ মিশন সফল করতে অনেক দিন আগে থেকে কাজ করছিলেন রোটারিয়ানরা। তাদের দুই জনের সঙ্গে মিশনের নানা দিক নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। সুশমিতা খান ও শামস রাশীদ জয় মিশনের নানা দিক ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। তবে মিশন শুরুর হওয়ার পর তারা এত ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে আর কথা বলার সুযোগ হয় না। অনেক চেষ্টার পর ফোনে পাওয়া যায় শামস রাশীদ জয়কে। উদ্যমী তরুণ বলেন, আমরা মানবতার সেবায় নানা ধরনের কর্মকা- পরিচালনা করি। এরই অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্যান্সার মেডিক্যাল মিশনের আয়োজন করা হয়। তবে এই কাজটা একটু চ্যালেঞ্জিং ছিল বলতে হবে। আমেরিকা থেকে ৭ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ নার্সকে আমরা আনতে পেরেছি। আসার পর থেকেই তারা বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। আমাদের চিকিৎসক ও নার্সরাও তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু হাতেকলমে শেখার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, মানবতার সেবা করতে পেরে বিদেশী চিকিৎসক ও নার্সরা দারুণ খুশি। আমরা রোটারিয়ানরাও খুব ভাল বোধ করছি। মেডিক্যাল মিশন আগামী শনিবার পর্যন্ত চলবে। এবার অন্য প্রসঙ্গ। হেমন্ত শুরু হয়েছে। কবির ভাষায়Ñ সবুজ পাতার খামের ভেতর/হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে/কোন্ পাথারের ওপার থেকে/আনল ডেকে হেমন্তকে...। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে কার্তিক অগ্রহায়ণ দুই মাস হেমন্তের কাল। স্বতন্ত্র বৈশষ্ট্যের ঋতু বাঙালীর ভীষণ প্রিয়। এই ঋতু চারপাশের প্রকৃতিকে যেমন নবরূপ দান করে, তেমনি রাঙিয়ে দিয়ে যায় মানুষের মন। হেমন্তের রূপ বর্ণনা করে কবিগুরু তাই লিখেছিলেন হায় হেমন্তলক্ষ্মী, তোমার নয়ন কেন ঢাকা/ হিমের ঘন ঘোমটাখানি ধুমল রঙে আঁকা।/ সন্ধ্যাপ্রদীপ তোমার হাতে মলিন হেরি কুয়াশাতে,/ কণ্ঠে তোমার বাণী যেন করুণ বাষ্পে মাখা।/ধরার আঁচল ভরে দিলে প্রচুর সোনার ধানে।/ দিগঙ্গনার অঙ্গন আজ পূর্ণ তোমার দানে...। সারা দেশের মতো ঢাকার প্রকৃতিতেও দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে হেমন্ত। এখন সন্ধ্যার পর থেকেই শীতল হাওয়া। একটু আধটু বৃষ্টিও হচ্ছে। এভাবে শীতের আমেজ। হেমন্ত হাত ধরে শীতকে নিয়ে আসে। যত দিন যাবে ততই উষ্ণতা কমতে থাকবে। বাড়বে শীত। তবে হেমন্তের শীত দুর্ভোগ বাড়ায় না। সময়টা সত্যি উপভোগ্য। উপভোগ করা চাই। যানজটের কথাটি না বললেই নয়। যানজট এখন ঢাকাবাসীর নিয়তি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় গাড়িতে বসে কাটিয়ে দিতে হচ্ছে। কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। হ্যাঁ, সব সময়ই ছিল যানজট। তবে এখন মনে হচ্ছে সব অচল হয়ে যাবে। বুধবারের কথাই ধরা যাক, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এদিন দেশে ফিরেছেন। অনেকদিন লন্ডনে কাটানোর পর তার দেশে ফেরা। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে আবেগ উত্তেজনা ইত্যাদি কাজ করতেই পারে। তাই বলে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের রাস্তায় নেমে যেতে হবে? অথচ ঠিক তাই হয়েছে। যানজটে গোটা শহর এদিন প্রায় অচল হয়ে গিয়েছিল। বিদেশ থেকে দেশে ফেরা যাত্রীদের কী যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে! সাধারণ মানুষজনকেও বাড়ি ফিরতে যুদ্ধ করতে হয়েছে। কেন? আর কত দেখতে হবে এ ধরনের কা-জ্ঞানহীন আচরণ? আছে কোন উত্তর?
×