ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কট সমাধানে প্রতিবেশীসুলভ পদক্ষেপ কাম্য

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সঙ্কট সমাধানে প্রতিবেশীসুলভ পদক্ষেপ কাম্য

রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা এখন আর বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্ব এবং দূরদর্শী কূটনৈতিক সাফল্যে সমস্যাটি এখন বিশ্ব সমস্যা হিসেবে বড়-ছোট সব দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। কেবল দৃষ্টি আকর্ষণই নয়, বিশ্বসমাজ শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে সঙ্কট মোকাবেলায় এগিয়ে এসেছে, সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। এটি শেখ হাসিনার রাষ্ট্র নেতৃত্বে সাফল্যের আরেকটি যুগান্তকারী উদাহরণ। অবাক করা বিষয় হলো, এক শ্রেণীর (মানসিকভাবে অসুস্থ) লোক এ ইস্যুটিকে পুঁজি করে তাদের নিজস্ব এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। এদের ওভারগ্রাউন্ড নেতা ও নেতৃত্ব জামায়াত-বিএনপি হলেও আন্ডারগ্রাউ-ে অন্য প্রভু রয়েছে। বাংলাদেশে এদের নাম জামায়াত, হেফাজত ইত্যাদি। বিদেশে আইএসআই, আইএস, আল কায়েদা, বোকো হারাম, রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তান, সৌদী আরব প্রভৃতি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। সেদিন একটি প্রাইভেট টিভি চ্যানেলে দেখলাম বাবু নগরী নামে এক হেফাজত নেতা কক্সবাজারের উপকূলের শরণার্থী শিবির অঞ্চলে মানববন্ধনের মতো দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে ঘোষণা দিচ্ছেন সীমান্ত অতিক্রম করে রাখাইন অঞ্চলে ঢুকে রোহিঙ্গা স্টেট বা আরাকান রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা করা। বাংলাদেশ সরকারের উচিত এখনই মিয়ানমার আক্রমণ করা এমন মন্তব্যও করেছেন তিনি। তার কথার মর্মার্থ এটাই দাঁড়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসিফ নজরুল নামের এক অধ্যাপকের কথা হলো সরকার কেন মিগ যুদ্ধবিমান নিয়ে ঘরে বসে আছে? তার বক্তব্যের মর্মার্থও একই। তাদের দুই মূল নেতা মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং রুহুল কবির রিজভী কখন কি বলছেন বোঝাই মুশকিল। তাদের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপার হলো একজন যদি পার্টি অফিসে সাংবাদিকদের কিছু ব্রিফ করেন অপরজন জাতীয় প্রেসক্লাবে হল ভাড়া করে প্রেস কনফারেন্স করেন। রুহুল কবির রিজভী অবশ্য পার্টি অফিসেই বেশিরভাগ কথা বলেন। এরা কেন এসব বলেন তাও সচেতন নাগরিকদের কাছে অজানা নয়। ২০১৮ সালের শেষে অথবা ১৯-এর প্রথম সাধারণ নির্বাচন। এ সময় দেশাভ্যন্তরে একটা ঝগড়া-ফ্যাসাদ লাগানো গেলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পারবেন। তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। আসলে দীর্ঘদিনের ক্ষমতাহীনতা তাদের বেপরোয়া করে তুলেছে। তাই একটা কিছু করতে হবে। তারা ভুলে যান বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম সাহসী ও দূরদর্শী রাষ্ট্রনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায়। যারা সরকার ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি এ ধরনের হুমকি দেন তাদের জানা দরকার প্রতিবেশীর সঙ্গে সঙ্কট দেখা দিলে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হয়, যুদ্ধ করে নয়। শেখ হাসিনা এবং তার সরকার সে পথেই অগ্রসর হচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট ছাড়া গোটা জাতি শেখ হাসিনার পাশে রয়েছে। কেননা, শেখ হাসিনার বৈদেশিক নীতির প্রধান দিক হলো মানবতাবাদ এবং এরই মধ্যে তিনি প্রটেক্টর অব হিউম্যান রাইটস বা মানবাধিকার সুরক্ষায় মানবতার জননী অবিধায় ভূষিত হয়েছেন। ব্রিটিশ মিডিয়া তাঁকে এই সম্মানে সম্মানিত করেছে। এটা এমনি এমনি অর্জিত হয়নি। ভূমধ্যসাগরের কূলে পড়ে থাকা আইলানের মৃতদেহটি যারা দেখেছেন বা অতি সম্প্রতি কোনরকমে সন্তান কোলে যে মা বাংলাদেশ সীমান্তে এসে তার দুই মাসের মৃত শিশুটিকে আদর করছেন এই দুই ছবির মধ্যে পার্থক্য আছে কি? অবশ্য এটি অনুধাবন করার জন্য সংবেদনশীল মন লাগে এবং মমতাময়ী মায়ের হৃদয় দিয়ে তা অনুধাবন করতে হয়। তাই তো ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের দৃশ্য দেখে অঝোর ধারায় কেঁদেছেন। পরক্ষণেই চোখের জল মুছে বলছেন, ‘আমরা ১৬ কোটি মানুষ যখন খেতে-পরতে পারছি, তখন ৭-৮ লাখ রোহিঙ্গাকেও খাওয়াতে পারব। প্রয়োজনে খাবার ভাগ করে খাব।’ একজন মমতাময়ী মা বা বড় বোনের কণ্ঠ হতেই কেবল এটা উচ্চারিত হতে পারে, অন্য কারও কণ্ঠ হতে নয়। এমনি এক সংবেদনশীল মনের পরিচয় পেয়েছিলাম ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন এক কোটি বাঙালী ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়েছিল, তখন ভারতের মহীয়সী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে কলকাতায় ফিরে কাঁদতে কাঁদতে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন (আকাশ বাণী বেতারের মাধ্যমে শুনেছিলাম) তা আজও কানে বাজে। যেন তিনি এক কোটি বাঙালীর দুঃখ-দুর্দশার সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার সঙ্গে মিশে গেছেন এবং দুর্দশা লাঘবে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এ এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার জন্মদিন। উত্তরবঙ্গের বন্যাদুর্গত মানুষ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশার কথা ভেবে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন না করার জন্য দলকে বলে দিয়েছেন। এই তো মাত্র ক’দিন আগে অবিরাম বর্ষণে হাওড় এলাকাসহ উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বন্যায় ৩০ লক্ষাধিক টন খাদ্যশস্যের ক্ষতি হলো। সেই সঙ্কট কাটতে না কাটতেই গত ২৫ আগস্ট শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর লাইন। কি করুণ সেসব দৃশ্য! সন্তান কোলে কাদা-মাটি মাড়িয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে সীমান্ত অতিক্রম কি দুঃসহ চিত্র। পথে পথে লাশ, নাফ নদীতে ভাসছে শিশু- এ যেন মার্কিন কবি এ্যালেন গিনসবার্গের ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ শিরোনামের কবিতারই চিত্র কিংবা ভারতীয় শিল্পী প-িত বরি শঙ্কর আর মার্কিন পপ গায়ক বব ডিলনের ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ...’ কনসার্টের মতো একই দুর্দশার কাহিনী, একই অসহায় মানবতার জন্য কান্না। ... কিন্তু না, শেখ হাসিনা চোখের জল ফেলে ঘরে বসে থাকেননি। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেছেন কক্সবাজার সীমান্তে, বিশ্বমানবতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ফলশ্রুতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব থেকে শুরু করে পুরো বিশ্ব সংস্থা আজ শেখ হাসিনার পাশে। এমনকি আমেরিকা, রাশিয়া, ভারত, চীন, ইসরায়েল, ইউক্রেন, বেলারুশ, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, পোল্যাল্ডসহ যেসব দেশ মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র, গোলাবারুদ বিক্রয় করে তারা রাখাইন রোহিঙ্গা তথা মুসলিম নিধনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কড়া অবস্থানের বিরোধিতা করছে না, কারণ বিষয়টি মানবাধিকারের প্রশ্ন। মিয়ানমার দেশটির আধুনিক নাম ব্রহ্মদেশ। বার্মা থেকে মিয়ানমার। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ কলোনি অর্থাৎ ব্রিটিশ অকোপেশন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। বর্তমান মিয়ানমার রাষ্ট্রনেতা (স্টেট কাউন্সিলর) নোবেল লরেট আউং সান সুচির পিতা জেনারেল আউং সান দেশটির প্রতিষ্ঠাতা পিতা। সুচিও দীর্ঘদিন প্রবাসে উদ্বাস্তু জীবন কাটিয়ে দেশবাসীর ডাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমারে আসেন এবং সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রে উত্তরণের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন। ঠিক আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো। দেশ হিসেবে তুলনা করলে মিয়ানমার আয়তনের দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ বড়, অর্থাৎ আয়তন ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫৭৮ বর্গকিলোমিটার, অথচ লোকসংখ্যা মাত্র ৫ কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ২৫৩ জন। জনসংখ্যা প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ৭৬ জন। রয়েছে কাঠ ও খনিজসম্পদের বিশাল ভা-ার এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশী বিনিয়োগ। শিক্ষিতের হার ৯২ দশমিক ৩ শতাংশ, মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ৭৫১ ডলার। সামরিক শক্তির চিত্র হলো মিয়ানমারে ৪ লাখ ৬ হাজার নিয়মিত মিলিটারিসহ মোট ৫ লাখ ১৬ হাজার সশস্ত্র মিলিটারি রয়েছে। সমরাস্ত্রের দিক দিয়ে রয়েছে ১২৭টি যুদ্ধবিমানসহ মোট ২৬৪টি সামরিক বিমান, ৮৬টি হেলিকপ্টার, ৮৮৬টি অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক, ৪১১২টি মিসাইল, ১২০০ সাঁজোয়া সামরিক যান, ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র, ১২০০ এ্যান্টি ট্যাঙ্ক অস্ত্র, ২৭ নেভাল ফ্রিগেট, ৪০টি পেট্রোল কারসহ ১৫৫টি রণতরী, অর্থাৎ সামরিক শক্তিধর দেশের তালিকায় ৩১তম (তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া)। বস্তুত, দেশটি ব্রিটিশের হাত থেকে মুক্ত হয়ে মিলিটারির হাতে পড়েছে। সুচির নেতৃত্বে বর্মী জনগণ গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটানোর লক্ষ্যে নির্বাচিত পার্লামেন্টের চার-পঞ্চমাংশ আসনে জয়লাভ করার পরও সূচিকে ক্ষমতায় বসতে দেয়া হয়নি, হাউস এ্যারেস্ট করে রাখা হয়েছে প্রায় ১৬ বছর এবং তার দল এনএলডির (ঘধঃরড়হধষ খবধমঁব ভড়ৎ ফবসড়পৎধপু) অন্য নেতাদের ওপর চলে নির্যাতন। সর্বশেষ দশ বছর আগে আবার একটি আই-ওয়াশ অমিলিটারি সরকার গঠন করলেও পার্লামেন্টে প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসনে বসেন উর্দিপরা মিলিটারি অফিসার। তারা পার্লামেন্টের কার্যবিবরণীতে অংশগ্রহণ করেন। বরং বলা চলে একটু বেশি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এখন অমিলিটারি সরকার প্রধান হলেও সুচির ক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ। তার পদের নামও স্টেট কাউন্সিলর, প্রেসিডেন্ট নয় (মিয়ানমার সংবিধানে সরকার পদ্ধতি প্রেসিডেন্ট শাসিত)। মিয়ানমারের জনসংখ্যার মধ্যে বার্মিজ ৬৮%, শান ৯%, কারেন ৭%, রাখাইন ৪%, চীনা ৩%, মগ ২%, রোহিঙ্গাসহ অন্য ৫%। এর মধ্যেও মিলিটারিরা এত ভীত যে, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাদের ‘রাষ্ট্রহীন মানুষে’ পরিণত করে হত্যা-নির্যাতনের পথ ধরেছে। এমনকি রোহিঙ্গাদের শিক্ষার সুযোগও কেড়ে নেয়া হয়েছে। এরপরও যাদের ঘাড়ে যুদ্ধের ভূত চেপেছে তাদের উদ্দেশে বলব এমনি এক বৈরী পরিবেশে থেকে ম্যাডাম সুচি স্বীকার করেছেন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে, উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাস করছে এবং তাদের ফেরত নেয়া হবে, যদিও তিনি যাচাই-বাছাইয়ের শর্ত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, কে যাচাই-বাছাই করবে? এর জবাব হলো জাতিসংঘকে এর দায়িত্ব দিতে হবে এবং এই বিশ্ব সংস্থা ঘোষিত ‘আনান কমিশনের রিপোর্টের’ মধ্যেই সঙ্কটের সমাধান খুঁজতে হবে। রিপোর্টের মূল বিষয় হলো হত্যা-নির্যাতন বন্ধ এবং নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া। এর বাইরে যাবার কোন সুযোগ নেই। একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এই মিয়ানমার মূলত ‘মগের মুল্লুকের’ আধুনিক সংস্করণ মাত্র। বহু আগে থেকেই আমাদের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে মগরা জলদস্যু হিসেবে লুণ্ঠন করত, আর এখন সর্বনাশা ‘মাদকাস্ত্র ইয়াবা’র অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে আমাদের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে, যা গোটা দেশকে গ্রাস করছে, যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। আরও যেসব তথ্য পাওয়া যায় তা হলো এই ‘মাদকাস্ত্রের’ বাহকও রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া হয়। এভাবে ১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের একটি গোষ্ঠী আসতে শুরু করে এবং তখন থেকে ৪ লাখ স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে। ‘মাদকাস্ত্র’ বহনকারীদের অনেকের সঙ্গেই কক্সবাজার এলাকায় বসবাসকারীদের কারও কারও সম্পর্ক রয়েছে মাদক ইয়াবা চোরাচালানে। এবারে আসা প্রায় সাড়ে ৪ লাখসহ মোট ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ভূখ-ে আশ্রয় নিয়েছে এবং শরণার্থী সঙ্কট নিরসন অর্থাৎ তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো আরও জটিল করে তুলেছে। তাছাড়া আনান কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী হত্যা-নির্যাতন বন্ধ বা নিরাপদ বসবাস বা নাগরিকত্ব দিলেই চলবে না, তাদের ক্ষতিপূরণও দিতে হবে। সুচিকে এই লক্ষ্যে এগুতে হবে। নইলে যেভাবে তার অর্জিত সম্মাননা বা এওয়ার্ড বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা স্থগিত করছে একদিন না আবার নোবেল পুরস্কার ধরে টান দেয় সে ভয় উড়িয়ে দেয়া যায় না। তারপরও বাংলাদেশকে সুচির সঙ্গে বসেই সঙ্কটের সমাধান খুঁজতে হবে। মিলিটারির সঙ্গে বসে সমাধান হবে না। যেমনটি জনকণ্ঠের বিশিষ্ট কলামিস্ট স্বদেশ রায় তার বৃহস্পতিবারে ‘রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান’ কলামে দেখিয়েছেন ‘টেবিলের এক পাশে শেখ হাসিনা অপর পাশে আউং সান সুূচি’- এভাবেই সমাধান সম্ভব। তাছাড়া আমাদের তো উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও রয়েছে। মিলিটারি জিয়াউর রহমান ও মিলিটারি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মিলিটারি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের বিদ্রোহ দমন করতে পারেননি, বরং দিনে দিনে তাদের সশস্ত্র ক্ষমতা বেড়ে চলছিল। তবে শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর টেবিলে বসে সঙ্কটের সমাধান করেন। ১৯৯৭ সালে বান্দরবানে সাড়ে ১১শ’ সশস্ত্র পাহাড়ী যুবক শেখ হাসিনার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। এমনকি ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী ৪০ হাজারের বেশি পাহাড়ী দেশে ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে শুরু করে এবং এখনও করছে। সেদিন একদিকে যেমন ছিলেন শেখ হাসিনা, অপরদিকে ছিলেন পাহাড়ী বিদ্রোহীদের পক্ষে তাদের নেতা সন্তু লারমা। রাজনৈতিক সঙ্কট রাজনৈতিকভাবেই সমাধান হয়। ঢাকা-২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব ই-মেইল : [email protected]
×