ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

৫ নবেম্বর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এজেন্ডায় না থাকলেও সিপিএ সম্মেলনে উঠবে রোহিঙ্গা ইস্যু

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

এজেন্ডায় না থাকলেও সিপিএ সম্মেলনে উঠবে রোহিঙ্গা ইস্যু

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ এজেন্ডায় না থাকলেও আগামী পহেলা নবেম্বর থেকে ৮ নবেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) ৬৩তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আলোচিত রোহিঙ্গা ইস্যুটি জোরালোভাবেই উঠে আসবে। এছাড়া সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানের চালানো গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। পহেলা নবেম্বর সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হলেও আগামী ৫ নবেম্বর সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সিপিএ’র ভাইস প্যাট্রন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে সফররত সিপিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল মি. আকবর খান রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি এজেন্ডায় না থাকলেও আমি নিশ্চিত এই বিষয়টি জীবন্তভাবেই সম্মেলনে উঠে আসবে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, দুর্দশা চলছে তা সদস্য রাষ্ট্রের কেউ না কেউ উপস্থাপন করবেন। সম্মেলনে যোগ দিতে আসা সদস্য রাষ্ট্রের ৬শ’ প্রতিনিধি অংশ নেবেন। এত প্রতিনিধির মধ্যে কেউ কথা তুললে আমরা তো চুপ করিয়ে দিতে পারি না। সম্মেলনে বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানের চালানো গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় সংসদের স্পীকার ও সিপিএ চেয়ারপারর্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতারা কোন বিষয়ের ওপরে যদি আলোকপাত কিংবা উত্থাপন করতে চান তাহলে সেই সুযোগ অবশ্যই তাঁদের রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুর পাশাপাশি এই বিষয়েও আলোচনা হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। সিপিএ সম্মেলনের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ ইকবালুর রহিম ও সিনিয়র সচিব আবদুর রব হাওলাদারসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। সিপিএ’র ৬২তম সম্মেলন ঢাকায় সেপ্টেম্বরে জুলাই মাসে হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার কারণে স্থগিত করা হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পীকার বলেন, এই সম্মেলনকে সামনে রেখে সকল রিজিয়ন ও ব্রাঞ্চের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এজেন্ডার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এরপর নির্বাহী কমিটির সভায় এজেন্ডা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে এজেন্ডা চূড়ান্ত করা হয়। ঠিক একই প্রক্রিয়ায় এই সম্মেলনের বিষয়গুলো ইতোপূর্বেই নির্ধারিত হয়েছে। তখন এই রোহিঙ্গা সমস্যা ছিল না। তবে ‘জাতীয়তা’ বিষয়ক একটি কর্মশালা রয়েছে। এখানে রোহিঙ্গা বিষয়টি প্রাসঙ্গিক। তাই সেখানে ইস্যুটি উত্থাপিত হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর চালানো গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশ নেবে। কাজেই বাংলাদেশের কোন বিষয়ের উপরে তাঁরা যদি আলোকপাত কিংবা উত্থাপন করতে চান তাহলে সেই সুযোগ অবশ্যই তাদের রয়েছে। পাকিস্তানের অংশগ্রহণ সম্পর্কে অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্পীকার বলেন, তারাও এ সম্মেলনে অংশ নেবে বলে আমরা আশা প্রকাশ করছি। কেননা তারা সম্ভবত নিবন্ধন করেছে। স্পীকার আরও বলেন, কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টসমূহের সমন্বয়ে গঠিত একটি ঐতিহ্যবাহী আন্তর্জাতিক সংগঠন। ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠন সংসদীয় গণতন্ত্রকে সুসংহত ও সমুন্নত করার লক্ষ্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি হাইকমিশনার ও কনসাল জেনারেলদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের পার্লামেন্টারি-য়ানগণকে সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। এ সময়ে হাইকমিশনার ও কনসাল জেনারেলদের পক্ষ থেকে সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ৬৩তম সম্মেলনে তাঁদের দেশের অংশগ্রহণের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সম্মেলনের প্রস্তুতি দেখতে ঢাকায় অবস্থান করছেন আকবর খান। সোমবার সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ে কমনওয়েলথভুক্ত সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও কনসাল জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়টি অবহিত করা হয়। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘কন্টিনিউয়িং টু এ্যানহাঞ্চ দি হাই স্টান্ডার্ড অব পারফরম্যান্স অব পার্লামেন্ট’। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সিপিএ’র ভাইস প্যাট্রন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পহেলা নবেম্বর সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ৫ নবেম্বর। সম্মেলনে কমনওয়েলভুক্ত ৫২টি দেশের ১৮০টি জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদের স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, সংসদ সদস্যসহ প্রায় ৬শ’ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিপিএ’র চীফ প্যাট্রন হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। স্বাগতিক দেশের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সংবাদ সম্মেলনে সিপিএ’র চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সম্মেলনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হবে। নির্বাহী কমিটির সভা, কমনওয়েলথ ওমেন পার্লামেন্টারি স্টিয়ারিং কমিটির সভা, স্মল ব্রাঞ্চেস কনফারেন্স, বিভিন্ন সাব কমিটির সভা, রিজিওনাল গ্রুপ মিটিং, জেনারেল এসেম্বলি ও ৮টি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, আগে আমরা আইপিইউ সম্মেলনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছি। এবারের সম্মেলনও সফল করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।
×