ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুর সৃজনশীল বিকাশে অভিভাবকের ভূমিকা

প্রকাশিত: ০৩:১২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শিশুর সৃজনশীল বিকাশে অভিভাবকের ভূমিকা

অনলাইন ডেস্ক ॥ বর্তমান শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী ৫+ বছর বয়সের শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলন করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এমন একটি শিক্ষা যা শিশুর বিদ্যালয় ভীতি দূর করে তাকে প্রথম শ্রেণির উপযোগী করে গড়ে তোলে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য শিশুদের উপযোগী খেলাধুলার সামগ্রী, প্রাক-প্রাথমিক কারিকুলাম, পাঠ্য বই, অনুশীলন খাতা ও শিক্ষক সহায়িকা সরবরাহ করেছেন। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির জন্যও বিনামূল্যে বই, শিক্ষক সহায়িকা, শিক্ষক নির্দেশিকা, শিক্ষক সংস্করণ সরবরাহ করে থাকেন। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম যোগ্যতা ভিত্তিক ও শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত একটি শিশু ৬ বা ৯ টি বিষয়ে ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করবে। বাংলা, ইংরেজি, গণিতের পাশাপাশি শিশুর সৃজনশীল বিকাশের জন্য পরিবেশ পরিচিতি, শারীরিক শিক্ষা, চারুকারু ও সঙ্গীত পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উক্ত বিষয়গুলো শ্রেণিতে পড়ানোর জন্য শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষক নির্দেশিকা ও শিক্ষক সহায়িকা রয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাংলা, গণিত ও ইংরেজির সাথে চারুকারু ও সঙ্গীত শিক্ষা প্রয়োজন। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে, শিক্ষক ও অভিভাবক উক্ত বিষয়গুলোর প্রতি উদাসীন বা গুরুত্ব কম দেন। একটি শিশুকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে হলে তার সৃজনশীল বিকাশের প্রয়োজন অপরিসীম। সৃজনশীল বিকাশের মাধ্যমে শিশুর প্রতিভা ও মেধা ফুটে উঠে। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুকে চারুকারু ও সঙ্গীত, সামাজিক পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ের উপর আগ্রহ তৈরী করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক হাওয়ার্ড গার্ডনার তার ‘ফ্রেমস অব মাইন্ড ঃ দ্য থিওরি অব মাল্টিপল ইন্টিলিজেন্সেস’ –এ শিখনের ৮ ধরণের বুদ্ধিমত্তার কথা উল্লেখ করেছেন। তারমধ্যে শিশুর সৃজনশীল বিকাশের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কোন কোন শিশু শোনা, বলা, নক্সা, ছবি, রেখাচিত্র, রুপকল্পনার সাহায্যে শেখে। কেউ আবার শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে হাতে কলমে কাজ করে শেখে। সঙ্গীত, ছড়া, গল্প, সঙ্গীতের তাল ও লয়ের মাধ্যমে সহজে শিখতে পারে। কোন কোন শিশু আবার প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সহজেই শিখতে পারে। এ শিক্ষা সবই শিশুর সৃজনশীল বিকাশকে গতিশীল করে থাকে। শিশুদের বয়স ও সামর্থ অনুযায়ী খেলারছলে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে আগ্রহী করে তুলতে হবে। শিশুরা নিজে আগ্রহ করে কিছু বানালে বা কোন ছবি আঁকলে উৎসাহ দিতে হবে। পরবর্তীতে সে কাজের প্রতি আগ্রহী হবে, শিশু সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত থাকলে তার কল্পনাশক্তি বাড়বে, গুছিয়ে কথা বলতে পারবে, সুন্দর করে চিন্তা করতে পারবে। সর্বোপরি শিশু তার পরিবারের বাইরে অন্য আরো দশজন শিশুর সাথে মিলে মিশে থাকার শিক্ষালাভ করবে। তাই, আমাদের অভিভাবকদের উচিত, শিশুর সৃজনশীল বিকাশে সহায়তা করা। শিশু যতবেশি সৃজনশীল মনষ্ক হবে, সে তত তাড়াতাড়ি বাস্তব জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। শিশুর সুস্থ প্রতিভার বিকাশ ঘটলে, তার শিখন আনন্দের সাথে শিখতে চাইবে, শিখন হবে স্থায়ী ও বাস্তবমূখী এবং সেই শিশুই একদিন প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শেষ করে উন্নত মানসিকতা সম্পন্ন মনোভাব নিয়ে গড়ে উঠবে এবং বিশ্বের কাছে নিজেকে তুলে ধরার প্রেরণা পাবে। লেখক : আজিজা আক্তার সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার, মিরপুর, ঢাকা
×