ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রীমকোর্টে আওয়ামী আইনজীবীদের অনুষ্ঠানে পদত্যাগ দাবি

প্রধান বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন, তার মন্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৩ আগস্ট ২০১৭

প্রধান বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন, তার মন্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সুপ্রীমকোর্টে বাতিলের রায় কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কড়া সমালোচনা করেছেন সরকার সমর্থিত আইনজীবীরা। ‘সুপ্রীমকোর্টের রায়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে সরে যেতে হয়েছে’ প্রধান বিচারপতির এমন বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল দাবি করে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগও দাবি করেছেন তারা। প্রধান বিচারপতি ওপেন কোর্টে প্রধানমন্ত্রীকে পাকিস্তানের ভয় দেখিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে উল্লেখ করেন তারা। তাদের বক্তব্যে সমর্থন দিয়েছেন এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে বঙ্গবন্ধুর ৪২তম শাহাদতবার্ষিকীর আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এসব বক্তব্য তুলে ধরেন বক্তারা। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বৃহত্তর ফরিদপুর সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী কল্যাণ সমিতি। সমিতির সভাপতি এসএম মুনীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, সুপ্রীমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, বাংলাদেশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, রায়ে সংসদ সদস্যদের অপরিপক্ব বলা হয়েছে। আমাকে যদি উনি (প্রধান বিচারপতি) বলেন, আমি একজন অপরিপক্ব সংসদ সদস্য। আমার মতো ৮০ বছরের একজন লোককে বলেন, অপরিপক্ব, তাহলে আমি বলব- তার মাথায় সমস্যা আছে। উনি (প্রধান বিচারপতি) যতবার রায় বাতিল করবেন, ততবার সংসদে ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হবে। সমবায় মন্ত্রী আরও বলেন, হুমকি দেয়, তার (প্রধান বিচারপতি) ধৈর্যের একটা সীমা আছে। আমি বলব, আমাদেরও একটা ধৈর্যের সীমা আছে। আমরা অনেক কিছু বলতে চাইলেও বলি না। কারণ সুপ্রীমকোর্টের প্রতি একটা শ্রদ্ধা আছে। তাই সেই শ্রদ্ধা নষ্ট করবেন না। মানুষকে সুপ্রীমকোর্টের মুখোমুখি করবেন না। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপর বলেছেন, ‘এই শোকের মাসে আমাদের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে শোক দিবস পালনের কথা ছিল। কিন্তু আমরা তা করতে পারছি না। শোকগ্রস্ত থাকলেও এই মাসে আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়িয়েছে। এই মাসে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায় আমাদের এই অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো তার কন্যাও উদার মনের। সেই উদারতা থেকেই বাংলাদেশের মনিপুরী সম্প্রদায়ের একজনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। এ বিষয়টা মনিপুরীসহ সকল নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের জন্য অহংকার হতে পারত, সেটা এখন কলঙ্কে রূপান্তরিত হয়েছে। তাপস আরও বলেন, অনেক অভিযোগ আমরা আমলে নেইনি। প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরও তিনি সরাসরি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ বিচারপতির দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত বন্ধ করতে চিঠি দিয়েছেন। এটা সরাসরি অসদাচরণ। বিচার চলা অবস্থায় এক যুদ্ধাপরাধীর স্বজনের সঙ্গে দেখা করলেন, ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে আপনি (প্রধান বিচারপতি) যে কোড অব কন্ডাক্ট দিয়েছেন, এটা সেই কন্ডাক্টেরই সরাসরি লঙ্ঘন।’ তাপস আরও বলেন, ‘আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি। আমাদের ধৈর্য আছে বলেই আপনি এখনও পদে আসীন আছেন। আমরা মুসলমানরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে বিসমিল্লাহ বলেই দিনের কার্যক্রম শুরু করি। ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে আপনি সেই বিসমিল্লাহ নিয়েও মন্তব্য করেছেন। রায়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মন্তব্যের বিষয়ে তাপস বলেন, আপনি (প্রধান বিচারপতি) জাতির জনককে নিয়ে মন্তব্য করেছেন। ভুলে যাবেন না, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ যদি বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হতো, তাহলে আপনিও ওখানে বসে থাকতে পারতেন না। সংবিধানে জাতির জনক হিসেবে একজনকেই উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে জাতির জনক নিয়ে মন্তব্য করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। শপথ ভঙ্গ করেছেন। রায়ে আপনি নারী সংসদ সদস্যদের অসম্মান করে কথা বলে গোটা নারী জাতিকেই অপমান করেছেন। প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে তাপস বলেন, ‘হাতি ঘোড়া গেল তল, মনিপুর থেকে এসে বলে কত জল? আমরা ’৫২ সাল থেকে রক্ত দিয়ে দিয়ে এখানে এসেছি। কারও দয়ায় এখানে আসি নাই। বাংলাদেশের জনগণই দেশের অভিভাবক, আপনার আমাদের অভিভাবক হওয়ার দরকার নাই। আর মাত্র পাঁচ মাস আছেন, এই সময়টা সুন্দরভাবে থাকেন, আর না হলে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যে কোন সময় যে কোন সিদ্ধান্তই নিতে পারেন।’ এ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ করা উচিত ছিল ফজলে নূর তাপস তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা যখন খুবই শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি, ঠিক সেই সময় আপনি (প্রধান বিচারপতি) এজলাসে বসে বললেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মতো আমাদের প্রধানমন্ত্রীকেও অযোগ্য করতে পারেন। আমি এ্যাটর্নি জেনারেলকে বলতে চাই, আপনার ওই সময় সঙ্গে সঙ্গে এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। আপনি ওই সময় প্রধান বিচারপতিকে ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলতেন। আপনি তা করেন নাই। আপনি সব সময় আমতা আমতা করবেন না। আমি আপনাকে আগেও বলেছিলাম, আমতা আমতা করা বাদ দেন। প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।’ এ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে তাপস বলেন, প্রধান বিচারপতি প্রধানমন্ত্রীকে থ্রেট করেন, আর আপনি বসে বসে শোনেন। আপনার পদত্যাগ করা উচিত ছিল। খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, এতদিন চারদিকে ষড়যন্ত্র যেভাবে ছড়িয়ে ছিল, আজ নতুন যোগ হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের ঘাড়ে পা রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। যারা এ রায় লিখে দিয়েছেন, তারা কিন্তু তার বন্ধু নন। প্রধান বিচারপতি নিজে থেকে পদত্যাগ করবেন, যদি না করেন, তবে তার আর পাঁচ মাস কয়েক দিন বাকি। তারপর তার কি হবে? সেটাই আমি ভাবি। তিনি বলেন, ‘ওই ড. কামাল হোসেন, শাহদীন মালিক, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, যারা তার বন্ধু তারা কিন্তু তার পাশে থাকবেন না। পাঁচ মাস পর এই ব্যারিস্টার মওদুদও তার পাশে থাকবেন না। ওরা তার বন্ধু হতে পারে না। আজ তার যারা বন্ধু, তারা কোন অবস্থায় তার বন্ধু হতে পারে না।’ প্রধান বিচারপতির বক্তব্য মিডিয়াতে ভুল ভাবে এসেছে ॥ এ্যাটর্নি জেনারেল এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর মামলাটি যখন শুরু হয়, অনেক জটিলতার মাধ্যমে আমাদের পড়তে হয়েছে। তাদের বডি ল্যাংগুয়েজ বুঝে গেছি, বিচারপতিরা চান না তাদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে থাক। আমি বলেছি, এই রায় একটা ইতিহাসের ভুল। তিনি বলেন, পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে প্রধান বিচারপতির কথা মিডিয়ায় এসেছে ভুলভাবে। সেদিন অধস্তন আদালতের বিচারকদের রুলস ফ্রেমের শুনানি ছিল। আমরা অনেক সময় নিয়েছি। আমি বললাম বাইরের অবস্থা অনেক উত্তপ্ত। লম্বা করে সময় দেন। উত্তপ্ত কমলে এর একটা সমাধান হবে। উনি (প্রধান বিচারপতি) বললেন, আমরা কি উত্তপ্ত করছি। আপনারাই তো উত্তপ্ত করছেন। পাকিস্তানে রায়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী চলে গেলেন। তিনি বলেন, আমাকে নানা রকম এজেন্সি থেকে ফোন দেয়া হচ্ছে। অনেক মিডিয়ায় এসেছে আমি প্রধানমন্ত্রীকে ছুড়ে ফেলে দিতে পারব। এটা ঠিক না। প্রধান বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন জাতীয় সংসদের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের প্রেক্ষিতে সুপ্রীমকোর্টে চলছে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী। পঞ্চম দিনের মতো মঙ্গলবার সরকার সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও বিএনপি-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রীমকোর্টে এ কর্মসূচী পালন করে। কর্মসূচী ঘিরে সুপ্রীমকোর্ট অঙ্গনে ছিল টানটান উত্তেজনা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সরকার সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতৃবৃন্দ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে আলটিমেটম দিয়ে বলেছেন, ২৪ আগস্টের মধ্যে অপ্রাসঙ্গিক অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক বক্তব্যগুলো এক্সপাঞ্চসহ রায় বাতিল করুন। না হলে অচিরেই পদত্যাগ করবেন। অপরদিকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা সুপ্রীমকোর্ট চত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন, অপরদিকে আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে বিএনপিপন্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি বলেন, প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসে প্রধানমন্ত্রীকে এ রকম হুমকি দেয়া নজিরবিহীন। প্রধান বিচারপতি ওপেন কোর্টে প্রধানমন্ত্রীকে পাকিস্তানের ভয় দেখিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তাই তিনি এরই মাঝে শপথ ভঙ্গ করেছেন, সেহেতু তিনি (প্রধান বিচারপতি) অচিরেই পদত্যাগ করবেন। তিনি আরও বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা যেই অপ্রাসঙ্গিক, অসাংবিধানিকভাবে তিনি যে মন্তব্য করেছেন এ মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ের অপ্রাসঙ্গিক ও অসাংবিধানিক বক্তব্য সংক্ষুব্ধ আইনজীবীদের ব্যানারে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। আজকে পঞ্চম দিনের মতো টানা আন্দোলন করে চলেছে সংগঠনটি। সংগঠনের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, সুপ্রীমকোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, সাবেক বিচারপতি মুনসুরুল হক চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, এ্যাডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লা, সাবেক সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, সানজিদা খানম এমপি, আওয়ামী পন্থী আইনজীবী নেতা আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া, রবিউল আলম বুদু প্রমুখ। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি বলেন, তিনি আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছেন। তিনি সংসদকে হেয় করেছেন। তিনি মহিলা সংসদ সদস্যের বিষয়ে কটূক্তি করে নারীদের হেয় করেছেন। তাদের হেয় করে গোটা নারী সমাজকে হেয় করেছেন। সর্বোপরি তিনি তার রায়ে উল্লেখ করেছেন তিনি নাকি কারও সার্ভেন্ট না। তিনি প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মকর্তা না। তিনি হলেন নিজেই মাস্টার। আমরা তার নিন্দা জানাই। গত পরশুদিন তিনি প্রধান বিচারপতির আসনে এজলাসে বসা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে চোখ রাঙ্গানির মাধ্যমে এ বক্তব্য দিয়েছেন যে, পাকিস্তানের মতো প্রধানমন্ত্রীকে নাকি তিনি পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারেন। এ মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসে প্রধানমন্ত্রীকে এ রকম হুমকি দেয়া নজিরবিহীন। এটা শপথ ভঙ্গের শামিল। সুতরাং আগামী ২৪ তারিখের মধ্যে এ রায়ের অপ্রাসঙ্গিক, অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক বক্তব্য প্রত্যাহারসহ সম্পূর্ণ রায় বাতিলপূর্বক যেহেতু তিনি এরই মাঝে শপথ ভঙ্গ করেছেন তাই তিনি অচিরেই পদত্যাগ করবেন। অন্যথায় আগামী অক্টোবর থেকে এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে অপসারণ করার আন্দোলনের কর্মসূচী দিতে আমরা বাধ্য হবো।’ একই অনুষ্ঠানে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ওপেন কোর্টে কোন প্রাসঙ্গিক নয়, এ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে তিনি বললেন, কি হয়েছে পাকিস্তানে দেখেছেন। সুপ্রীমকোর্ট কি পারে। আমি একটি কথা বলতে চাই, বাংলাদেশ ইজ নট পাকিস্তান এটা মনে রাখতে হবে। এ বাংলাদেশ রক্তের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। এটা অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। কাজেই ওইসব কথা বলে পার পাবেন না। আগামী ২৪ আগস্ট আমরা এ দাবিতে আবার মিলিত হবো। আমরা এর আগে বলেছিলাম ২৪ তারিখের মধ্যে আপনার অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন। সরকারের হাত থেকে বিচারপতিরাও ছাড় পাচ্ছেন না স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যকে দেশের জন্য অশনি সঙ্কেত বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার রাতে বিএনপির চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল (সোমবার) একটি দলীয় সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্ট, বিচার বিভাগ, বিচারকবৃন্দ এমনকি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আমরা বিচলিত ও হতবাক হয়েছি। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা রায়ের কারণে বিচার বিভাগকে আক্রমণের টার্গেটে পরিণত করে যে পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, তা দেশ, জাতি ও রাজনীতির জন্য এক অশনি সঙ্কেত বলেই আমরা মনে করি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপ্রীমকোর্টের বিরুদ্ধে জনগণকে উস্কে দিচ্ছে। তার এ বক্তব্য বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে মুখোমুখি দাঁড় করাবে। এতে করে দেশের পরিণতি হবে ভয়াবহ। ওই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খানসহ দলের আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিবাদ সভা অপরদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সভা থেকে বিচার বিভাগ নিয়ে মন্তব্য করায় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে সমিতি ভবনের উত্তর হলে প্রতিবাদ সভা করেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেনÑ সমিতির সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, আবেদ রাজা, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। প্রতিবাদ সভায় এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। বিচার বিভাগ নিয়ে মন্তব্য করার কারণে আপনি নিজেই পদত্যাগ করুন। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি একা এ রায় দেননি। আপীল বিভাগের সকল বিচারপতি একমত হয়ে এ রায় দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতিকে বলব, সরকারের কিছু ব্যক্তি ছাড়া ১৬ কোটি মানুষ আপনার সঙ্গে আছে।
×