এখন অনেকের বিশ্বাস হতে চাইবে না বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চিত্তবিনোদনের জন্য টঙ্গীর আনারকলি সিনেমা হলে প্রায়ই শ্রমিকদের নিয়ে ছবি দেখতেন ! টঙ্গীর শ্রমিকদের সুস্থ ধারার চিত্তবিনোদন বলতে তখন একমাত্র সিনেমা হলে ছবি দেখাটাই ছিল চিত্তবিনোদনের মাধ্যম। হল থেকে ছবি দেখে ফেরা অনেকের যেন গর্বের ব্যাপার ছিল। আর তা যদি হতো কোন শ্রমিক নেতার নেতৃত্বে, তবে তা তো সোনায় সোহাগা হয়ে উঠত।
এমনি ঘটনা ছিল টঙ্গী শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের মাঝে। তৎকালীন প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহম্মেদ শ্রমিকদের নিয়ে আনারকলি সিনেমা হলে ছবি দেখতেন প্রায়ই। ষাটের দশকে টঙ্গীতে যখন শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এখানকার শ্রমিকদের চিত্তবিনোদনের কথা মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল আনারকলি সিনেমা হল। হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর শ্রমিকরা দলবেঁধে চলে যেত সিনেমা দেখতে আনারকলি সিনেমা হলে। দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কেটে প্রতি সপ্তাহেই সিনেমা দেখত তারা। শ্রমিকদের নেতৃত্বে যারা ছিলেন, তারা অনেক সময় নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে টিকেট কেটে দিতেন শ্রমিকদের সিনেমা দেখার জন্য। কত আন্তরিকতাই না ছিল শ্রমিক এবং শ্রমিক নেতাদের মাঝে। ৫৫ বছর পর এসে শ্রমিকদের সেই চিত্তবিনোদনের মাধ্যমটি শেষ হতে চলেছে। আর সেই আনারকলি সিনেমা হলের মালিক সিনেমা হলটি ভেঙ্গে মার্কেট করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন ইতোমধ্যে।
এই আনারকলি সিনেমা হলের নামেই নামকরণ করা হয়ে গেছে একটি বাসস্ট্যান্ডের। আর তা হচ্ছে টঙ্গীর আনারকলি রোড। আনারকলি সিনেমা হলটি ভেঙ্গে ফেলা হলেও নামটি মুছে যাবে না কোনদিনও। আনারকলি সিনেমা হলের নামে রোডটি দিনের পর দিন টিকে থাকবে যানবাহনে যাতায়াতকারী যাত্রীসাধারণ ও চালকদের মাঝে।
-নূরুল ইসলাম, টঙ্গী থেকে