ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চলছে মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার, অপারেশন টেবিলেই গিটার বাজাচ্ছেন রোগী

প্রকাশিত: ২৩:২১, ২০ জুলাই ২০১৭

অনলাইন ডেস্ক ॥ হাজার রকম যন্ত্রপাতিতে ঠাসা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অপারেশন থিয়েটার। হাতে গ্লাভস আর মুখে মাস্ক পরে জটিল অস্ত্রোপচার করছেন চিকিৎসকরা। বেডে শুয়ে এক যুবক। ভাবলেশহীন মুখ। বুকের মধ্যে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা একটি গিটার। ওই অবস্থাতেই দু’হাতের আলতো ছোঁয়ায় মৃদু সুর তুলছেন তিনি। ডিসটোনিয়া নামক রোগে আক্রান্ত তিনি। তাঁর হাতের তিনটি আঙুল কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পেশায় সুরকার ওই যুবক বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। গিটার তাঁর কাছে প্রতিদিনের নিশ্বাসের মতো। কিন্তু এই গিটারে সুর তুলতে তুলতেই যে একদিন বেঁকে বসবে তাঁর হাতের আঙুল, তা হয়তো বোঝেননি বছর বত্রিশের ওই যুবকও। বছর খানেক আগে প্রথম টের পেয়েছিলেন বিষয়টা। হঠাত্ই আঙুলে ক্র্যাম্প ধরে। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে সমস্যা। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, তিনটি আঙুল নড়াচড়া করাই বন্ধ করে দেয়। চিকিৎসকরা জানান, আঙুলের পেশীর অনিয়ন্ত্রিত ও অত্যধিক ব্যবহারের ফলেই এই সমস্যা হচ্ছে। যখনই পেশীর অতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে, তখনই মস্তিষ্ক থেকে সিগন্যাল গিয়ে ওই পেশীর কাজে বাধা দিচ্ছে। ফলে আঙুল আর কাজ করতে পারছে না। এরপরেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। যুবকের মস্তিষ্কের যে অংশ থেকে এই নির্দেশ আসছে, সেই অংশটিকে ‘পুড়িয়ে’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কিন্তু কী ভাবে বোঝা যাবে মস্তিষ্কের ঠিক কোন অংশের জন্য এই সস্যা হচ্ছে? ঠিক হয়, অস্ত্রোপচারের সময়ও গিটার বাজাবেন ওই যুবক। এতে মস্তিষ্কের সমস্যাজনিত অংশগুলি সহজেই চিহ্নিত করতে পারবেন চিকিৎসকরা। ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সিনিয়র নিউরোলজিস্ট সঞ্জীব সি সি টিওআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, মাংসপেশীর অতিরিক্ত ব্যবহারেই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। গিটার বাজানোর সময় ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলি উদ্দীপ্ত হওয়ার ফলে ঠিক কোন জায়গাগুলোতে সমস্যা হচ্ছে তা সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। ফলে অস্ত্রোপচারের সুবিধা হয়েছে। বেঙ্গালুরুর জৈন ইনস্টিটিউট অব মুভমেন্ট ডিসঅর্ডারস অ্যান্ড স্টিরিওট্যাকটিক নিউরোসার্জারি-র চিকিৎসক শরণ শ্রীনিবাসন জানান, এটা মস্তিষ্কের এমন একটা অবস্থা যেখানে অতিরিক্ত কম্পনের ফলে মস্তিষ্কের কিছু স্নায়ু পুড়ে যায়। অপারেশনের আগে ওই যুবকের মস্তিষ্কের এমআরআই হয়েছিল। অস্ত্রোপচার শুরুর আগে চারটি স্ক্রু দিয়ে মাথার খুলিকে সাপোর্ট দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কারণ এমআরআই রিপোর্ট অনুযায়ী মস্তিষ্কের অন্তত ৮-৯ সেন্টিমিটার গভীরে ছিল সমস্যাজনিত ওই অংশ। ফলে ওই অংশ অবধি পৌঁছতে যুবকের খুলিতে ১৪ মিলি মিটার গভীর একটি ছিদ্র করতে হয়েছে। চিকিৎকরা জানান, স্থানীয় অ্যানাসথেশিয়া করা হয়েছিল। ফলে গোটা শরীরটাই সচল ছিল ওই যুবকের। অস্ত্রোপচারের সময় গিটার বাজিয়ে তিনি সাহায্যও করছিলেন চিকিৎসকদের। টানা সাত ঘণ্টার সফল অপারেশনের পর এখন অনেকটাই সুস্থ ওই যুবক। ‘‘অপারেশনের মাত্র তিন দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে বাড়ি এলাম গিটার বাজাতে বাজাতে’’— উজ্জ্বল মুখে বললেন তিনি। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×