ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবণী আক্তার সান

আইপিএলে মুম্বাইর বাজিমাত

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৪ মে ২০১৭

আইপিএলে মুম্বাইর বাজিমাত

মাত্র ১২৯ রানের পুঁজি নিয়েও ‘নাটকীয়’ ফাইনালে স্টিভেন স্মিথ- মহেন্দ্র সিং ধোনিদের রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টকে ১ রানে হারিয়ে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে শিরোপার হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছে রোহিত শর্মার মুম্বাই। এবারর ফাইনাল ম্যাচটা ছিল মনে রাখার মতো। এই না হলে ফাইনাল ম্যাচ! শ্বাসরুদ্ধকর শেষ ওভার। চাই ১১ রান। উইকেটে আছেন পুনে অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ এবং মনোজ তিওয়ারি। বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার গতিদানব মিচেল জনসন। প্রথম বলে চার মেরে মনোজ তিওয়ারি জয়ের ইঙ্গিত দিলেন। কিন্তু তার পরেই বদলে গেল দৃশ্যপট! দ্বিতীয় বলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন তিওয়ারি। উইকেটে আসলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ৩ নম্বর বলে স্বদেশী স্মিথকে ফেরত পাঠালেন জনসন। পঞ্চম বলে ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ানের ক্যাচ ছেড়ে হতাশায় মুষড়ে পড়লেন হার্দিক পান্ডিয়া। দরকার ১ বলে চার রান। পঞ্চম বল ডিপ স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়েই দৌড় শুরু করলেন ক্রিশ্চিয়ান। কিন্তু ২ রানের বেশি নিতে পারলেন না। রানআউট হয়ে গেলেন! ১ রানের জয়ে সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ল মুম্বাই! এই না হলে ফাইনাল! এর আগে আর কোন দল তিনটি আইপিএল শিরোপা জেতেনি। ৫৬টি গ্রুপপর্বের ম্যাচ, দুটি কোয়ালিফায়ার আর একটি এলিমিনেটর ম্যাচের পর এবারের আসরের ফাইনালটি হায়দরাবাদের মাঠে গড়ায়। এই আসরের আগে দুইবার করে শিরোপা জিতেছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংস। একবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল হায়দরাবাদ, রাজস্থান রয়েলস ও ডেকান চার্জাস। রানার্সআপ হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চারবার ফাইনালের মঞ্চে খেলেছিল চেন্নাই। ২০০৮ সালের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় রাজস্থান। ২০০৯ আসরে ডেকান শিরোপা জেতে। ২০১০ ও ২০১১ তে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয় চেন্নাই। ২০১২’তে প্রথমবার শিরোপা ঘরে তোলে কলকাতা। পরের আসরে মুম্বাই চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৪ তে আবারও সাকিব আল হাসানের কলকাতা চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৫ আসরে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জেতে মুম্বাই। আর ২০১৬ তে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় মুস্তাফিজুর রহমানদের হয়দরাবাদ। এবারের আসরে গ্রুপপর্বের ১৪ ম্যাচে মুম্বাই ১০টি জয় এবং ৪টি পরাজয় নিয়ে টেবিলের শীর্ষে ছিল। সর্বোচ্চ ২০ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফ নিশ্চিত করেছিল। কোয়ালিফায়ার-ওয়ানে ধোনি-স্মিথদের পুনের কাছে হারলেও দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে কলকাতাকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটে। বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথ, মহেন্দ্র সিং ধোনি, বেন স্টোকস, গৌতম গাম্ভীর বা ক্রিস গেইলের মতো বড় তারকা নেই, তবু মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সাফল্যের রহস্য কি? ‘আত্মবিশ্বাস, টিম স্পিরিট’Ñ এক বাক্যে এমনটাই জানিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকর। মুম্বাই কেবল ভারতীয় গ্রেটের জন্মস্থানই নয়, সেই শুরু থেকে ফ্র্যাঞ্জাইজিটির মধ্যমণি তিনি। শুরুতে ছিলেন দলের সদস্য হিসেবে, এখন প্রধাণ পরামর্শক-মেন্টর। ইন্ডিয়ান্সদের সাফল্যে নেপথ্যের সঙ্গী হিসেবে স্টাফ হিসেবে পেয়েছেন রিকি পন্টিং, মাহেলা জয়াবর্ধনের মতো প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আর মেধাবী সাবেকদের। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শচীন বলেছেন, আত্মবিশ্বাসই তাদের মূল নিয়ামক, এ জন্য লঙ্কান তারকা মাহেলাকে বিশেষ কৃতীত্ব দিয়েছেন। ‘এই পুঁজি নিয়ে অনেকেই হয়ত স্বস্তিতে ছিল না। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস ছিল, ম্যাচটা আমরা জিততেও পারি। শেষ বল পর্যন্ত চেষ্টা করতে হবেÑ বিরতিতে মাহেলা যখন ছেলেদের উদ্দেশ্যে এমনটা বলে, তাতে সবাই তেতে ওঠে। এই চাপের মধ্যেও বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ওরা যা করেছে, তা অনবদ্য। মাহেলাকে ধন্যবাদ, ধন্যবাদ রোহিত, বুমরাহ আর জসনদের। কারণ তারা মাঠে বাস্তবায়ন করেছে। এটা আসলে টিম স্পিরিটের ফসল।’ মুম্বাইর শিরোপাজয়ের পর বলেন শচীন। আবেগাপ্লুত ইন্ডিয়ানদের ক্রিকেটঈশ্বর আরও যোগ করেন, ‘এমন রাত আমার কাছে নতুন কিছু নয়। কিন্তু তবু বার বার এই উচ্ছ্বাসটাকে নতুন মনে হয়। অসাধারণ এক জয়। ব্যাটিংয়ে শুরুটা মোটেই ভাল ছিল না। বোর্ডে প্রত্যাশিত রান ওঠেনি। তবু শেষটা যেভাবে হলো, তা মনে রাখার মতো।’ ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেয়া জাসপ্রিত বুমরাহ বরাবরের মতোই আলো ছড়িয়েছেন, তবে মিচেল জনসনের ৩ শিকার দৃশ্যপট পাল্টে দেয়। বোলিংয়ে মালিঙ্গাও ছিলেন সময়োপযোগী। অথচ বাস্তাবতার বিচারে জনসন-মালিঙ্গা কেউই লাইমলাইটে ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে শচীনের ব্যখ্যা, ‘চ্যাম্পিয়নরা চিরকাল চ্যাম্পিয়নই থাকে। জানতাম মালিঙ্গা যে কোন ম্যাচে ভাল করবেই। ফাইনালে সেটাই করেছে। সবাই বলে জনসন নাকি টেস্টের বোলার, অথচ কি দুর্দান্ত বল করল। সিনিয়ররাই শেষ পর্যন্ত মাতা ঠা-া রেখে কাজ হাসিল করেছে। একেই বলে টিমওয়ার্ক।’ উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে মুম্বাইকে ম্যাচে রেখেছেন মালিঙ্গা। তবে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে এদের কেউ নন, ম্যাচসেরা ক্রনাল পান্ডিয়া। ৬৫ রানে পঞ্চম ও ৭৯ রানে সপ্তম উইকেট হারানো মুম্বাইকে ফাইট দেয়ার মতো স্কোর এনে দিয়ে নায়ক তরুণ এই অলরাউন্ডার। ঘোরতম বিপদে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৮ বলে ৪৭ রান করেন ম্যাচসেরা ক্রুনাল। ‘বড় ম্যাচে অবদান রাখতে পেরে আমি খুশি। যখন ক্রিজে ছিলাম তখন অন্য দিক থেকে উইকেট পড়ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত ব্যাট করতে চাইছিলাম। জীবনের প্রথম আইপিএলের ফাইনালে ম্যাচসেরা হতে পেরে দারুণ লাগছে।’ বলেন তিনি। আইপিএলের দশম আসরে মুম্বাইর তৃতীয় শিরোপা এটি। এর আগে ২০১৩ ও ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় গ্রেট শচীনের ছায়াধণ্য এ ফ্রাঞ্চাইজি। এছাড়া ২০১০Ñএর রানার্সআপ তারা। আইপিএল সব সময়ই জন্ম দিয়েছে নতুন নতুন প্রতিভার। সমৃদ্ধ করেছে ভারতীয় ক্রিকেটকে। দশম আইপিএলেও তার অন্যথা হয়নি। উঠে এসেছে একাধিক নতুন মুখ। উঠে এসেছেন ভবিষ্যতের ধোনি, বিরাট কোহালিরা। আবার কেউ কেউ হতাশ করেছেন। এটাই ক্রিকেট। এটাই আইপিএল। এভাবেই প্রতিবছর জন্ম দিয়েছে নতুন নতুন ক্রিকেটারের। যেখানে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা ক্রিকেটার থেকে দেশের সেরারা খেলেন। তাদের সঙ্গে বা তাদের বিরুেেদ্ধ খেলেই নিজেদের চেনায় নতুন প্রজন্ম।
×