রোমের নতুন রানী এলিনা

গত কয়েক মৌসুম ধরেই টেনিস কোর্টের আলোচিত নাম এলিনা সিতলিনা। কিন্তু নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারছিলেন না ইউক্রেনের এই টেনিস তারকা। তবে চলতি মৌসুমেই পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছেন তিনি। তাইওয়ান ওপেন, দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর শিরোপার দেখা পেয়েছেন ইস্তাম্বুলেও। শুধু কী তাই? রবিবার যে ইতালিয়ান ওপেনেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ২২ বছর বয়সী এই টেনিস তারকা। তাও আবার দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপকে হারিয়ে। ক্যারিয়ারের অষ্টম ডব্লিউটিএ শিরোপা নিজের শোকেসে তুললেন এলিনা সিতলিনা। রোম মাস্টার্সে রাজত্ব করছিলেন মারিয়া শারাপোভা এবং সেরেনা উইলিয়ামস। গত ছয় বছর এই দুজনই রাজত্ব করছিলেন এই টুর্নামেন্টে। এই সময়ে দুজনই তিনবার করে শিরোপা ভাগাভাগি করে নেন। কিন্তু এবার আর খেলতে পারেননি টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সেরেনা উইলিয়ামস। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণে এই মৌসুমেই আর কোর্টে দেখা যাবে না আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তিকে। মারিয়া শারাপোভাও রোম মাস্টার্সে সুবিধা করতে পারেননি। ইনজুরির কারণে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই নাম প্রত্যাহার করে নেন তিনি। সেই সুযোগটাই দারুণভাবে কাজে লাগালেন পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি উচ্চতার এলিনা সিতলিনা। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নম্বর ওয়ান তারকা সিমোনা হ্যালেপকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় শিরোপা জয়ের স্বাদ পান তিনি। অষ্টম বাছাই সিতলিনা এদিন ৪-৬, ৭-৫ এবং ৬-১ সেটে পরাজিত করেন হ্যালেপকে। শুধু রোম মাস্টার্স নয় বরং চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলে এসেছেন সিতলিনা। যে কারণেই রোম মাস্টার্সে অংশগ্রহণের আগেই তিন তিনটি শিরোপা নিজের শোকেসে তুলেন তিনি। তাইওয়ানে বছরের প্রথম ট্রফি জিতেন। এরপর দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপ। সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হন ইস্তাম্বুলে। তাই দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়েই ইতালিয়ান ওপেনের মিশন শুরু করেন তিনি। ক্লে কোর্টের এই টুর্নামেন্টে এর আগে কখনোই ফাইনালে খেলেননি সিতলিনা। অথচ এবার যেন ব্যতিক্রম। শুরু থেকেই চমকপ্রদ পারফর্মেন্স উপহার দেন তিনি। প্রথম পর্বের ম্যাচে ফ্রান্সের এ্যালিজ কোর্নেটকে পরাজিত করেন। এরপর মোনা বার্থেলকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেন। সেখানেই বড় পরীক্ষাটা দিতে হয় তাকে। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা চেক প্রজাতন্ত্রের ক্যারোলিনা পিসকোভাকে হারিয়ে। সেমিফাইনালে তার প্রতিপক্ষ হয়ে আসেন স্পেনের গারবিন মুগুরুজা। কিন্তু সৌভাগ্য সিতলিনার। ইনজুরির কারণে নাম প্রত্যাহার করে নিলে খুব সহজেই ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেন। যেখানে শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ান হ্যালেপ। যিনি কিছুদিন আগেই মাদ্রিদ ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। কিন্তু ইতালিয়ান ওপেনে ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জিততে পারেননি তিনি। সিতলিনার কাছে টানা দুটি ফাইনাল জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তার। রোম মাস্টার্সের ফাইনাল জিতে দারুণ রোমাঞ্চিত সিতলিনা। এ প্রসঙ্গে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা প্রতিটি দিনই কঠোর পরিশ্রম করে তারা এরকম দিনগুলোর জন্যই অপেক্ষা করে। এখন আমি নিজেকে নিয়ে গর্বই করতে পারি। কারণ আমি চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এবং এখানে কিছু কঠিন ম্যাচ খেলেছি। আমার দেখানোর ছিল যে, এখানে জয়ের জন্যই এসেছি এবং শিরোপা জিততে প্রস্তুত আমি।’ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেন সিতলিনা এখন পুরোপুরি মুক্ত। ম্যাচের শেষে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটি টুর্নামেন্ট শেষ হওয়া মানেই আপনি মুক্ত। আর যখন চ্যাম্পিয়ন হবেন তখন তো আরও বেশি স্বাধীন। তবে আমার টিম এই মুহূর্তে খুবই ক্লান্ত এবং তারা সকলেই বাড়ি যাওয়ার জন্য তাড়া করছে।’ তবে সিতলিনার হাতে কিন্তু খুব বেশি সময় নেই। কেননা ২৮ মে থেকেই যে শুরু হবে মৌসুমের দ্বিতীয় মেজর টুর্নামেন্ট ফ্রেঞ্চ ওপেন। সিতলিনা এখন তার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এখন প্যারিসে যাচ্ছি। বন্ধুদের সঙ্গে কিছু দিন দারুণ উপভোগ করতে চাই। শুধুই উপভোগ। তারপরই প্যারিসের প্রথম ম্যাচের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করব।’ ইতালিয়ান ওপেনের শিরোপা জয়ের ফলে র‌্যাঙ্কিংয়েও দারুণ অগ্রগতি হয়েছে সিতলিনার। এই প্রথম বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে উঠে এসেছেন তিনি। বর্তমানে তার অবস্থান ছয়। অন্যদিকে সিতলিনার কাছে হেরে হতাশ হ্যালেপ। কেননা ফরাসি ওপেনের আগেই যে টানা দুটি টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের দারুণ সুযোগ নষ্ট হয়ে গেল তার। এদিকে রোম মাস্টার্সের পুরুষ এককেও প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জার্মানির আলেক্সান্ডার জেভরেভ। ফাইনালে জার্মানির তরুণ প্রতিভাবান এই তারকা ৬-৪ এবং ৬-৩ সেটে হারান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নম্বর ওয়ান তারকা নোভাক জোকোভিচকে। সার্বিয়ান তারকাকে হারাতে জেভরেভ এদিন সময় নেন মাত্র ১ ঘণ্টা ২১ মিনিট। সেইসঙ্গে নতুন একটা রেকর্ডও গড়েন তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় জেভরেভ। ২০০৭ সালের পর সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে মাস্টার্স ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। ২০ বছর এক মাস বয়সী জেভরেভের আগে এই রেকডর্টা দখল করে রেখেছিলেন নোভাক জোকোভিচই। জোকোভিচের বিপক্ষে জিতে দারুণ রোমাঞ্চিত জেভরেভ। ম্যাচ শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এযাবতকালের টেনিস ইতিহাসের সেরা একজন খেলোয়াড়ের বিপক্ষে জেতাটা সত্যিই সম্মানের। তবে জোকোভিচের যে ক্যারিয়ার, তার অর্ধেকও যদি আমার থাকত তাহলে আরও ভাল লাগত।’ ফ্রেঞ্চ ওপেন শুরু হতে আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। এসব টুর্নামেন্ট মূলত মৌসুমের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টেরই প্রস্তুতি-মঞ্চ। আর এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে হেরে গেলেন জোকোভিচ। তাহলে কী ফরাসি ওপেনে তার প্রভাব পড়বে না? জেভরেভ অবশ্য দাবি করছেন, ‘আমি নিশ্চিত, প্যারিসে নোভাক জোকোভিচ ফেবারিট হিসেবেই কোর্টে নামবেন।’