ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ॥ শেষ মুহূর্তে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে দুই প্রার্থী

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৮ মার্চ ২০১৭

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ॥ শেষ মুহূর্তে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে দুই প্রার্থী

স্টাফ রিপোর্টার/ নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা থেকে ॥ নিজের পক্ষে ভোট নিতে শেষ মুহূর্তের প্রচারে কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সোমবারও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ অন্যান্য প্রার্থীরা। ভোটারদের দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। এদিকে, আজ মঙ্গলবার মধ্য রাতে শেষ হচ্ছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সকল ধরনের প্রচারণা। এর আগে সোমবার রাতের মধ্যেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ বহিরাগতরা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকা ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। এরপরেও যদি কোন বহিরাগত কুমিল্লায় অবস্থান করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।গণসংযোগের সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমা পরিবর্তন এবং কুমিল্লা নগর এলাকার উন্নয়নের জন্য বিনয়ের সঙ্গে নৌকা মার্কায় ভোট চান। তিনি বলেন, নগরবাসী তাকে নির্বাচিত করলে সকল দল ও মতের উর্ধে উঠে নগরের মানুষের জন্য কাজ করবেন। তিনি আরও বলেন, তাকে নির্বাচিত করলে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বর্ধিত করের বোঝা নগরবাসীর ওপর চাপিয়ে দেবেন না। অতিদরিদ্র ও মুক্তিযোদ্ধাদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ ও জলাবদ্ধতা নিরসন ও শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়াসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেন ভোটারদের। অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু গণসংযোগকালে বলেন, বিগত পাঁচ বছরে আমি মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে ৪৩১ কোটি ২৭ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি। নগরীতে আরও উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে। কোন কোন কাজের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। আমার অসমাপ্ত কাজ সমাধানসহ নগরবাসীর স্বাচ্ছন্দ্য জীবনমান উন্নয়নে আবারও ধানের শীষে ভোট দিন। এ সময় তিনিও ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে ভোটারদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেন। এদিকে, বহিরাগতদের সিটি কর্পোরেশন এলাকা ছাড়তে দুপুরের পর থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করেছে নির্বাচন কমিশন। ওইসময় জানানো হয়েছে, রাত ১২টার মধ্যে নির্বাচনী এলাকা না ছাড়লে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উভয় দলের অনেক নেতাকর্মী সিটি কর্পোরেশন এলাকা ত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। মিছিলের নগরী কুমিল্লা ॥ সিটি নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচারণার অংশ হিসেবে সোমবার মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছিল কুমিল্লা। এদিন দুপুরের পর থেকেই প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে কবিতা ও গানের সুরে, বিভিন্ন ধরনের বাদ্য যন্ত্র নিয়ে মিছিল নামতে থাকে নগরীতে। নগরীর কান্দির পাড়, শাসন গাছা, চক বাজার, রাজগঞ্জ, নজরুল ইভিনিউ সড়ক, ঝাউ তলা, জিলা স্কুল রোড, মোগর টুলিসহ খ- খ- মিছিল দেখা গেছে। খ- খ- এই মিছিল নগরীর কান্দির পাড়ে এসে মিলিত হয়। এ সময় স্থানীয় উৎসুক মানুষ এসব মিছিল উপভোগ করেন। কাউন্সিল প্রার্থীদের পক্ষেও ওয়ার্ডগুলোতে মিছিল হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের গণসংযোগ ॥ আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা সোমবার সকালে নগরীর জয়পুর এলাকায় উঠান বৈঠক করেন। পরে তিনি রানীর দীঘির পাড়, দিঘাম্বড়ি তলা, নানুয়ার দীঘির পাড়, উত্তর ছর্থা, শাসন গাছা, বাদশা মিয়ার বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে দিনভর গণসংযোগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অজয় কর খোকন ও হায়দার চৌধুরী রোটনসহ কেন্দ্রীয় কয়েক নেতা ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন। এদিকে, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাফর উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম সারওয়ার কবির, দেলোয়ার হোসেন চুন্নু, ইসহাক আলী খান পান্না, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লেয়াকত শিকদার, বদিউজ্জামান সোহাগসহ দলীয় নেতারা নগরীর ৪, ৬ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুরের নেতৃত্বে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সরকার সমর্থক ইঞ্জিনিয়াররা সীমার পক্ষে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করে লিফলেট বিতরণ করেন। বিএনপির গণসংযোগ ॥ বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু দিনভর নগরীর ডিসি রোড, আদালত পাড়া, কাপ্তান বাজার, দক্ষিণ ছর্থা, থিরা পুকুর পাড়, বাকরা বাদসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন। অপরদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির নির্বাচনী কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা এক প্রেস ব্রিফিয়ে মিলিত হন। এ সময় তার বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পূর্ব পরিস্থিতি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুক, হাবিবুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ইমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিন, কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শহিদুল ইসলাম তামান্না, বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও তার ভাই এ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু এবং চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের সামছুদ্দিন দিদারসহ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা নগরীর দক্ষিণ ছর্থা, শাসনগাছা, রেলেগেট, ওষুধ মার্কেট, স্টেশন রোড, বাদুরতলা, রেইস কোর্সসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। উল্লেখ্য, আগামী ৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার মধ্য রাতে শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা। নির্বাচন কমিশনের সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল বুধবার সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হবে নির্বাচনী সরঞ্জাম।
×