অনলাইন রিপোর্টার ॥ উত্তরা থেকে ২০ কিলোমিটার পথ ৩৮ মিনিটে পেরিয়ে যাত্রীদের মতিঝিলে পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের রাজধানীতে মেট্রোরেল কর্মযজ্ঞের উদ্বোধন হল।
আজ রবিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
একইসঙ্গে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের আওতায় গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) জন্য গাজীপুরে বাস ডিপো নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।”
ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা কীভাবে আরও উন্নত, কীভাবে আরও সহজ করা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
মেট্রোরেল প্রকল্পের আওতায় সবার আগে কাজ শুরু হচ্ছে উত্তরা তৃতীয় পর্যায় থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত ৬ নম্বর রুটের।
প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এ কাজে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকা দিচ্ছে ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
২০ কিলোমিটার এই পথে থাকবে ১৬টি স্টেশন। প্রতি ঘণ্টায় উভয়দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে বলে অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রী।
মেট্রোরেল রুট-৬
পথ: উত্তরা তৃতীয় পর্যায় থেকে শাপলা চত্বর
দৈর্ঘ্য: ২০ কিলোমিটার, সম্পূর্ণ এলিভেটেড।
ব্যয়: প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।
বৈশিষ্ট্য: স্টেশন ১৬টি। প্রতি ঘণ্টায় উভয়দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর আগে জানিয়েছিলেন, ২০২০ সালের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হলেও প্রথম পর্যায়ে ২০১৯ সালের মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত বাণিজ্যিক চলাচল শুরু করা সম্ভব হবে বলে সরকার আশা করছে।
প্রথম পর্যায়ের ওই কাজ আরও একটু এগিয়ে ফার্মগেইট পর্যন্ত নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে সাধারণ মানুষের জন্য ঢাকার বিভিন্ন যাতায়াত আরও একটু সহজ হবে।
মেট্রোরেল রুট-৬ এর পাশাপাশি আরও দুটি রুট নির্মাণের প্রস্তুতি শুরুর কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
# রুট-১: গাজীপুর থেকে ঝিলমিল প্রকল্প, দৈর্ঘ্য ৪২ কিলোমিটার। প্রথম পর্যায়ে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং খিলক্ষেত থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত প্রায় ২৭ কিলোমিটার কাজ করা হবে। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার হবে আন্ডারগ্রাউন্ড।
# রুট-৫: নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে গাবতলী, দৈর্ঘ্য ৩৫ কিলোমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাটারা থেকে গাবতলী-হেমায়েতপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটারের কাজ হবে। এর মধ্যে ৬ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) রুট চালু হলে টঙ্গী ও উত্তরার সঙ্গে ঢাকা মহানগরীর যাতায়াত সহজতর হবে।
এর মধ্য দিয়ে দ্রুত ও সাশ্রয়ীভাবে যাত্রী পারাপারের পাশাপাশি আরামদায়ক সেবা নিশ্চিত করা যাবে এবং রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করাও অনেকাংশে সহজ হবে বলেও প্রত্যাশা করছে সরকার।
>> সাড়ে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিআরটি রুটে থাকবে ২৫টি স্টেশন। নির্মাণ করা হবে ছয়টি ফ্লাইওভার।
>> এর মধ্যে উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড বিআরটি লেন থাকবে। বাকি ১৬ কিলোমিটার থাকবে সমতলে।
>> ১৮ মিটার দৈর্ঘের ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করবে এ পথে। বাস ভাড়া আদায় হবে ইলেক্ট্রনিক স্মার্ট কার্ডে। তিন মিনিট পরপর স্টেশন থেকে বাস ছাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার যাত্রী পারাপার সম্ভব হবে।
বিআরটি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা। সরকারের পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটি ফান্ড এতে অর্থায়ন করছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বিআরটি চালু করা সম্ভব হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: