ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সোমবার থেকে নয়াদিল্লীতে চার দিনব্যাপী বৈঠক

জালমুদ্রা পাচার কমাতে বাংলাদেশ-ভারত ঐকমত্য

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জালমুদ্রা পাচার কমাতে বাংলাদেশ-ভারত ঐকমত্য

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বাংলাদেশে জালমুদ্রার আগ্রাসন প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই দেশটি জালমুদ্রার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশকে দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। জালমুদ্রা পাচারের ট্রানজিট রুট হিসেবেও এখন আর বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে পারছে না এর কারবারীরা। বাংলাদেশ ও ভারতে জালমুদ্রার বিরুদ্ধে যৌথভাবে কম্বিং অপারেশন শুরুর পর পরিস্থিতির এমন উন্নতি হয়েছে। এছাড়া জালমুদ্রার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে বাংলাদেশের পাকিস্তান দূতাবাসের কূটনৈতিক ফারিনা আরশাদের চলে যাওয়াও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার বড় কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে ভারত-পাকিস্তানের কাশ্মীর সীমান্ত পথে জালমুদ্রার ব্যবসা চলছে। পাকিস্তান থেকে ওই স্থলসীমান্ত দিয়ে ভারতে জালমুদ্রা পাচার করা হচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। জালমুদ্রা শূন্যের কোটায় আনতে বাংলাদেশ ও ভারত ঐকমত্যে পৌঁছেছে। সে সংক্রান্ত আলোচনা করতে সোমবার থেকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চার দিনব্যাপী জালমুদ্রা, মানি লন্ডারিং, জঙ্গী অর্থায়ন বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শুরু হচ্ছে। সিআইডি সূত্র বলছে, বৈঠকে এসব বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। এছাড়াও পাকিস্তানের জালমুদ্রা কারবারীরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ ও ভারতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি, দুই দেশের অর্থনৈতিক মেরুদ- দুর্বল করে দেয়া এবং দুই দেশের মধ্যে সর্ম্পকের চরম অবনতি ঘটনার লক্ষ্যে জালমুদ্রা পাচার করছে বলে বৈঠকে জানানো হবে। এর সঙ্গে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র আছে কিনা, সে বিষয়ে বিস্তর আলোচনার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতে উদ্ধার হওয়া জালমুদ্রার অধিকাংশই পাকিস্তান থেকে আসা। পাকিস্তানের তৈরি জালমুদ্রা বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে ভারতে প্রবেশ করানো হতো। তার সর্বশেষ নজির গত বছরের ডিসেম্বরে দেখা গেছে বলেও বৈঠকে জানানোর কথা রয়েছে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে এক পাকিস্তানী জালমুদ্রার কারবারীর আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বাংলাদেশের পাকিস্তান হাইকমিশনের মহিলা কূটনৈতিক ফারিনা আরশাদ সরাসরি জালমুদ্রার ব্যবসা এবং জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি আলোচিত হওয়ার কথা রয়েছে। সিআইডির পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে, ফারিনা ফেরত যাওয়ার পর বাংলাদেশে জালমুদ্রার প্রচলন অস্বাভাবিক হারে কমতে শুরু করেছে। জালমুদ্রার চক্রগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি), গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশের ভেতরে ধারাবাহিক সাঁড়াশি অভিযান চলমান থাকায় জালমুদ্রার কারবারীরা আর সুবিধে করতে পারছে না। পাকিস্তান থেকে বিমানযোগে বিমানবন্দর দিয়ে আনা জালমুদ্রা ব্যবসা মুখথুবড়ে পড়েছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন তাদের ওপর কড়া গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকাসহ নানা বিষয়গুলো বৈঠকে তুলে ধরা হচ্ছে। এছাড়া সারাদেশ থেকে জালমুদ্রা কারবারের সঙ্গে জড়িত গ্রেফতারকৃত ২৪শ’ এবং গ্রেফতারকৃত সাড়ে ৪শ’ জালমুদ্রার বিদেশী কারবারীর সার্বিক পরিস্থিতিও বর্ণনা করা হবে বৈঠকে। সেই সঙ্গে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংকে থাকা জালমুদ্রা সংক্রান্ত সাড়ে ৫ হাজার মামলার বিষয়াদি। যদিও ইতোমধ্যেই জালমুদ্রার কারবারে জড়িত থাকার দায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি ৪ জন উর্ধতন কর্মকর্তাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব বিষয়াদি ছাড়াও বাংলাদেশে জালমুদ্রার বর্তমান পরিস্থিতির একটি ফিরিস্তি তৈরি করা হয়েছে। কিভাবে জালমুদ্রা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা যায়, সে সংক্রান্ত নানা গবেষণা ও পদক্ষেপ আলোচিত হবে। বাংলাদেশকে জালমুদ্রা পাচারের ট্রানজিট রুট হিসেবে আর ব্যবহার করতে পারছে না। বিকল্প হিসেবে ভারত-পাকিস্তানের কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে জালমুদ্রা পাচারের বিষয়টি আলোচনায় আসছে।
×