ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জনশক্তি ও ওষুধ রফতানি গুরুত্ব পাবে

সৌদি আরবের সঙ্গে বসছে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১ নভেম্বর ২০১৫

সৌদি আরবের সঙ্গে বসছে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ অবশেষে মিলেছে সৌদি রয়্যাল কোর্টের অনুমতি। ফলে ঢাকায় বসতে যাচ্ছে দীর্ঘদিন আটকে থাকা যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক। আগামী ১৮ ও ১৯ নবেম্বর অনুষ্ঠেয় গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকের এজেন্ডা প্রস্তুত করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ১১তম বৈঠকটি এতদিন আটকে থাকায় দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ই আলোচনা থেমেছিল। এ বৈঠকে সেসব ইস্যু নিয়ে উভয় দেশ সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৫ ও ৬ নবেম্বর ঢাকায় ১১তম এ বৈঠকের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছিল ইআরডি। তারও প্রায় ৭-৮ মাস আগে প্রস্তাব দেয়া হয় সৌদি আরবকে। আশা করা হয়েছিল এর মাধ্যমে দু’দেশের বাণিজ্য ও শ্রমিকের বিষয়ে সুসম্পর্ক স্থাপিত হবে। বৈঠকে সৌদি আরবের সম্মতি আছে কিনা তা জানাতে বলা হয়েছিল সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সিলরকে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মধ্যপ্রাচ্য ডেস্কের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, সে সময় জানানো হয়েছিল সৌদি আরবের রয়্যাল কোর্টের অনুমতির জন্য বিষয়টি আটকে আছে। ওই কোর্টে অনুমতির পরই তারিখ নির্ধারণ করবে সৌদি আরব। তাদের পক্ষ থেকে সময় ও তারিখ জানানোর পরই চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হবে। পরবর্তীতে সৌদি আরবের রয়্যাল কোর্টের অনুমতি মেলায় তারা বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশকে জানিয়েছে। তারপরই নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সূত্র জানায়, বসতে যাওয়া জেইসি বৈঠকে প্রধানত তিনটি ইস্যু নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। এগুলো Ñজনশক্তি রফতানি, ওষুধ রফতানি, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপনে সহায়তা। গত দশম জেইসি বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের পরিস্থিতি নিয়েও আগামী বৈঠকে আলোচনা হবে। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের রাজধানী জেদ্দায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল দশম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক। সে সময় কিছু ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে- জনশক্তি রফতানি, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এ্যাফেয়ার্স, হেলথ এ্যাফেয়ার্স, শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা, সংস্কৃতি ও মিডিয়া এ্যাফেয়ার্স, কৃষি খাতে সহায়তা, ইয়ুথ ও স্পোর্টস এ্যাফেয়ার্স, সিভিল এ্যাভিয়েশন, ইসলামী এ্যাফেয়ার্স এবং সিকিউরিটি এ্যাফেয়ার্স। এসব বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে তার ফলোআপ করা হবে আগামী যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকে। এর আগে সৌদি আরবের সঙ্গে ২০০৮ সালের ৭ ও ৮ এপ্রিল ঢাকায় দু’দিনের নবম জেইসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ সভায় সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে নতুন শ্রমিক নেয়ার আশ্বাস দেয়। আশ্বাস মোতাবেক তারা শ্রমিকও নেয়া শুরু করে। ২০০৫ সালে রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল অষ্টম জেইসি বৈঠক। সূত্র জানায়, সৌদি আরবের অর্থায়নে বাংলাদেশে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পগুলোয় মোট বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় এক হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা (১৭ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার)। প্রকল্পগুলো Ñরাজধানীতে ক্যান্সার ও চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প, এ দুটিতে বিনিয়োগ রয়েছে দুই কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণে সৌদি আরব দিচ্ছে চার কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া শিকলবাহা বিদ্যুতকেন্দ্রে তিন কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার এবং মগবাজার- মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পে তিন কোটি ৩৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে সৌদি আরব। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে। বেশ কয়েকটি কমিশন বৈঠক আয়োজন করে উল্লেখযোগ্য সাফল্যও এসেছে। সেই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে বাংলাদেশ। যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন এশিয়া অঞ্চলের ১৮ দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে। এটি দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ কমিশন অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ, প্রবাসী কল্যাণ, জনশক্তি রফতানি ও ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। ‘রুলস অব বিজনেস’ অনুযায়ী ইআরডির অন্যতম কাজ হচ্ছে- যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্র্ক উন্নয়ন করা এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থ বজায় রাখা। সূত্র জানায়, সৌদি আরব বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শ্রম বাজার। সেখানে অবস্থানরত লাখ লাখ শ্রমিক এদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকের জন্য এবারের এজেন্ডায় জনশক্তি নিয়ে বিরাজমান বর্তমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।
×