মশিউর রহমান খান ॥ বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে যমুনা নদীর ওপর পৃথক রেলসেতু নির্মাণে সরকারের নেয়া উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাঝে এ রেলসেতুটি কারা নির্মাণ করবে তা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগ উভয় সংস্থাই সেতুটি নির্মাণ করতে চায়। নিজেরা কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারায় বিষয়টির সুরাহা করতে নিজেদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দেয় উভয় প্রতিষ্ঠান। চিঠিতে সেতুটি নির্মাণে উভয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। উভয় পক্ষের যুক্তি ও আইন পর্যালোচনা শেষে অবশেষে সেতু বিভাগ নয় রেলপথ মন্ত্রণালয়ই যমুনা নদীর ওপর উক্ত রেলসেতু নির্মাণ করবে বলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক নিশ্চিত করেছেন। এ সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ রেলওয়ে সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে সেতুবিভাগ নিজেদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলে, এ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী সারাদেশে দেড় হাজার মিটার বা তার বেশি দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সেতুবিভাগের ওপর ন্যস্ত। নিয়মানুযায়ী বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতুটি সেতু কর্তৃপক্ষই নির্মাণ করেছে। এটি পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণও করছে সেতুবিভাগ। তাই ওই সেতুর সমান্তরালে নির্মিতব্য রেলসেতুটিও বাস্তবায়নের দায়িত্ব সেতু কর্তৃপক্ষের ওপর ন্যস্ত করা উচিত। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। নিজেদের দাবির সপক্ষে চিঠির সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশের কপিও সংযুক্ত করে দেয়া হয়। সেতুবিভাগ সূত্র জানায়, এ্যালোকেশন অব বিজনেস ও অধ্যাদেশ অনুযায়ী এটি সেতু কর্তৃপক্ষের নির্মাণ করার কথা। তবে রেলওয়েও সেতুটি নির্মাণের দাবি ছাড়তে রাজি নয়। তাই প্রধানমন্ত্রীর মতামত চাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সেতুটি নির্মাণে কর্তৃত্ব পাওয়ার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রেলওয়েও একটি চিঠি দেয়। এতে বলা করা হয়, এ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী রেলসেতু নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বাংলাদেশ রেলওয়ে। ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনেও এ ক্ষমতা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকেই দেয়া হয়েছে। এছাড়া সেতু কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশে দেড় হাজার মিটার বা তদূর্ধ্ব দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণের দায়িত্ব সেতুবিভাগকে দেয়া হলেও তা সড়ক সেতুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রেলসেতু নির্মাণের বিষয়ে অধ্যাদেশে কিছু উল্লেখ নেই। তাই এটি রেলওয়েই নির্মাণ করবে। নিজস্ব দাবির সপক্ষে রেলওয়ে আইনও সংযুক্ত করেছে রেলওয়ে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৃথক রেলসেতু নির্মাণ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে, সেতুবিভাগ নয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আমাদেরকে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেতু পারাপারের সময় ট্রেন চলার গতি অনেক কমিয়ে দেয়া হয়। আর রেলে পণ্য পরিবহন বর্তমানে নিষিদ্ধই রয়েছে। এটি দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে।