ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ফুলের নাম ডালিয়া

দৃষ্টিনন্দন কোমল পাপড়ি আকারে বড়, বাগানের শোভা বাড়ায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

দৃষ্টিনন্দন কোমল পাপড়ি আকারে বড়, বাগানের শোভা বাড়ায়

শেখ আব্দুল আওয়াল ছয় ঋতুর এদেশে হরেক রকম ফুল ফোটে। তেমনি একটি ফুল ডালিয়া। শীতকালে ফোটে বলে একে অনেকে শীতকালীন ফুলও বলে। বর্ণ বৈচিত্র্য, পাপড়ির দৃষ্টিনন্দন বিন্যাস ও আকারে বড় হওয়ায় অনেকের কাছেই জনপ্রিয় ফুলটি। কোমল ও ফাঁপা কা-বিশিষ্ট, উচ্চতা হয় ৫০-১৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। তবে ৩০ সেন্টিমিটার উচ্চতার বামনজাতও রয়েছে। অনেকেই শখ করে ডালিয়া ফুলের চারা কিনে বাড়িতে ও বাড়ির ছাদে লাগান। বাগানের শোভা বাড়াতে এর জুড়ি মেলা ভার। নানাবর্ণের কারণে ফুলটি মানুষকে আকৃষ্ট করে। তবে গোলাপ বা অন্য ফুলের মতো এটি ততটা গন্ধ বিলায় না। তারপরও জনপ্রিয়তায় কম যায় না। সুইডেনের উদ্যানতত্ত্ববিদ আন্দ্রে ডালেরর নামানুসারে এ ফুলের নামকরণ করা হয় ডালিয়া। ডালিয়া সিঙ্গেল অথবা ডাবল হতে পারে। সিঙ্গেল ডালিয়া ফুলের তেমন জনপ্রিয়তা নেই। বীজ থেকে সিঙ্গেল ডালিয়ার চারা উৎপাদন করা হয়। ডাবল ফুলের বেলায় অঙ্গজ পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করা হয়। অঙ্গজ পদ্ধতিতে বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে কন্দমূল থেকে চারা ও শাখা কলম রোপণ করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম বলেন, দেশে বিভিন্ন জাতের ডালিয়া থাকলেও মূলত ডেকারেটিভ ডালিয়া ও ক্যাকটাস ডালিয়ার চাষই সব জায়গায় হচ্ছে। ডালিয়া শীতকালীন একটি বিখ্যাত ফুল। দেশে এখন এর বেশ চাহিদা রয়েছে। ডালিয়ার জনপ্রিয় তিন প্রকার জাত রয়েছে- ডেকারেটিভ ডালিয়া, ক্যাকটাস ডালিয়া ও পম্পন ডালিয়া। এর ইংরেজী নাম উধযরষরধ (ডালিয়া), বৈজ্ঞানিক নাম- উধযরষরধ াধৎরধনরষরং. চারা থেকে বংশবিস্তার পদ্ধতিতে আস্ত কন্দ মাটিতে কিংবা টবে রোপণ করার পর চোখ থেকে বের হওয়া চারা কেটে আলাদা করে নিয়ে রোপণ করা হয়। শাখাকলম থেকে বংশবিস্তার পদ্ধতিতে ডালিয়া গাছের প্রতিটি শাখা কেটে কলম তৈরি করা হয়। শাখাকলম তৈরির উপযুক্ত সময় পৌষ-মাঘ মাস। শাখায় দ্রুত শিকড় গজানোর জন্য ডালগুলোর নিচের কাটা অংশে সামান্য পরিমাণ সেরাডিক্স বি-১ হরমোন বা সুরটেক্স উদ্ভিদ হরমোন মেখে দিতে হয়। বালি, দো-আঁশ মাটি ও জৈবসারের মিশ্রণে ছায়ায় কলমগুলো বসাতে হবে। পরে প্রতিদিন হাল্কা পানি দিতে হবে। ৭-৮ দিনের মধ্যে ডালিয়ার শাখাকলমে শিকড় গজায়। শাখাকলম কার্তিক থেকে শুরু করে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত রোপণ করা যায়। ডালিয়া ফুল গাছ খুব বেশি বৃষ্টিপাত, অতিরিক্ত ঠা-া অথবা অত্যধিক গরম সহ্য করতে পারে না। ঈষৎ আর্দ্র আবহাওয়া এ ফুল চাষের বিশেষ উপযোগী। ফুলসহ একটি ডালিয়া চারা সাধারণত নব্বই টাকা থেকে একশ’ বিশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। তবে চাহিদা বেশি হলে দাম অনেক বেড়ে যায়। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, ডালিয়া ফুল বাগানের উত্তর-পশ্চিমাংশে উঁচু জায়গায় লাগানো উচিত। কারণ এ জায়গাটিতে শীতকালে রোদ বেশি পাওয়া যায়। এতে ডালিয়া গাছ স্বাচ্ছন্দে বাড়তে পারে। উপজেলার প্রায় অর্ধশত নার্সারিতে ডালিয়া ফুলের চাষ হয়। তবে তীব্র শীত ও ঠা-ার কারণে চাষিরা চাহিদা মতো ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। ফুল তোলা ও বাজারজাতকরণ ॥ ফুল সম্পূর্ণভাবে ফোটার কিছু আগে তুলতে হয়। এতে ফুলের স্থায়িত্ব বাড়ে। ফুলসমেত ডাঁটাটি ধারালো ছুরির সাহায্যে সন্ধার দিকে কাটতে হয়। ফুল তুলে নেয়ার পর গাছের নিচের দিকের পাতার খাঁজ থেকে ওঠা ডালে আবার ফুল আসে। সুতরাং গাছ না কেটে আরও কিছু দিন রাখা যায়। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে গাছে ফুল ধরা শেষ হলে মাটি থেকে ১৫-২০ সে.মি. উঁচুতে কা- কেটে দিয়ে পানি সেচ বন্ধ করতে হবে। ডালিয়া ফুলের গাছ খুব বেশি বৃষ্টিপাত, অতিরিক্ত ঠা-া অথবা অত্যধিক গরম সহ্য করতে পারে না। ডালিয়া চাষের জন্য উষ্ণ-আর্দ্র আবাহাওয়া বিশেষ উপযোগী। সুন্দরবন নার্সারীর ফুল চাষী রমজান আলী বলেন, এবছর ফলন ভাল হলেও দীর্ঘ শীত ও ঠা-ায় ফুল বিক্রিতে তেমন একটা লাভবান করতে পারিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একটি ডালিয়া ফুলসহ চারা গত বছর নব্বই টাকা থেকে একশ’ বিশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। এ বছর একই ফুলসহ প্রতিটি চারা পঁচাত্তর টাকা থেকে নব্বই টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে হচ্ছে।
×