
বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)-র আইপিএল জয় উদযাপন করতে গিয়ে চরম বিশৃঙ্খলায় পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন বহু মানুষ। ভিড় সামলাতে গিয়ে হিমশিম খায় পুলিশ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে, আর সেখান থেকেই শুরু হয় প্রাণঘাতী বিপর্যয়।
বাংলাদেশেও এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ক্রিকেটপ্রেমী বহু বাংলাদেশি ভক্ত এই মর্মান্তিক ঘটনার নিন্দা করছেন এবং প্রশ্ন তুলছেন—কেন এত বড় দুর্ঘটনার পরও অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়নি?
ঘটনার সময় স্টেডিয়ামের ভেতরে আইপিএল ট্রফি নিয়ে উল্লাসে মেতেছিলেন কোহলি ও তাঁর টিমমেটরা। বাইরে যখন আর্তনাদ, অ্যাম্বুল্যান্সের শব্দে মুখর পরিস্থিতি, তখন ভেতরে চলছিল বিজয়ের আয়োজন। শিল্পীর চোখ বন্ধ করে বেহালা বাজানো, আলো-ছায়ায় ভাসা মঞ্চে নাচ-গান—এসব দৃশ্য এখন সমালোচনার কেন্দ্রে।
বিশেষ পাসের মাধ্যমে নির্বাচিত মানুষদের জন্য অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছিল কর্নাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু বাস্তবে সেখানে উপস্থিত হন লক্ষাধিক মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের সংখ্যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে পুলিশ গেট খোলার সময় হঠাৎ লাঠিচার্জ করে। মুহূর্তেই বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে—ছোটাছুটিতে পদপিষ্ট হন অনেকে। ঘটনাস্থলেই মারা যান ৭ জন। আহতদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
স্টেডিয়ামের বাইরে যখন এ রকম মৃত্যু-আর্তনাদ, ভেতরে তখন পুরোপুরি অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়া নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। অনেকে বলছেন, হয়তো আরসিবির ক্রিকেটাররা বিষয়টি জানতেন না, তাঁদের মুখে বিশেষ উদ্বেগ দেখা যায়নি। তবে অনেকেই এই ‘অজ্ঞতা’ মেনে নিতে পারছেন না।
ঘটনার সময় কর্নাটক বিধানসভায় কোহলিদের সংবর্ধনা চলছিল, এমন সময়ই চিন্নাস্বামীর বাইরে ঘটে বিপর্যয়। খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং বলেন, “বহু মানুষের আবেগ ছিল, এখনই কিছু বলা যাবে না, রিপোর্ট না পেলে কিছু নিশ্চিত নয়।” তিনি জানান, ৫০০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল এবং আরও বাড়ানো হবে।
তবে সমালোচনা এড়াতে পারেননি তিনিও। কারণ পরে স্টেডিয়ামে গিয়ে আয়োজিত মঞ্চে চ্যাম্পিয়নদের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে বিজয় উদযাপন করেন। সমালোচকরা বলছেন, বাইরে যখন অ্যাম্বুল্যান্সে আহতদের হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী মাঠে উৎসবের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা কতটা মানবিক?
ঘটনার পর প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়—স্টেডিয়ামে যাওয়ার প্রায় সব রাস্তা এবং মেট্রো পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকেল ৪:৩০ থেকে কুব্বন পার্ক স্টেশন থেকে ড. বি. আর. আম্বেডকর বিধানসভা স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো চলাচল বন্ধ থাকে।
এমন ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিল বেঙ্গালুরু পুলিশ—যাদের পাস আছে, শুধু তারাই যেন আসে। কিন্তু সেই বার্তায় কেউ কর্ণপাত করেননি।
ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকে বলছেন—এই ঘটনা ক্রিকেটের গৌরব ছাপিয়ে অমানবিক অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। বিজয়ের উৎসব কি এতটাই অন্ধ হতে পারে, যে মৃত্যুও তাকে থামাতে পারে না?
Jahan